ইউসিবি নিবেদিত ‘বন্ধুর গান প্রতিযোগিতা ২০২৫’-এর মঞ্চে দ্বিতীয় রানারআপের সম্মাননা জিতে তরুণ শিল্পী সাদিকুর রহমান শুধু জামালপুর বন্ধুসভাকেই নয়, বরং নিজের দীর্ঘদিনের সংগীত-সাধনার পথটিকেও এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তাঁর এই অর্জন শৈশব থেকে শুরু হওয়া গভীর অনুরাগ, নিষ্ঠা এবং শুদ্ধ সংগীতের প্রতি ভালোবাসার ফল।
শৈশবে প্রথম সুরের স্পর্শ
সাদিকুর রহমানের সংগীত-যাত্রার বীজ বপিত হয়েছিল পরিবারেই। ছোটবেলা থেকেই তাঁর বাবাকে দেখেছেন নাটক, থিয়েটার এবং গানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে, যা তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
সাদিকুর রহমান স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেনে (মেলান্দহ পৌর আদর্শ শিশু বিদ্যানিকেতন) পড়াকালীন আমার শ্রদ্ধাভাজন ফজলুল করিম স্যারের হাত ধরে প্রথম গান করি এবং উপজেলায় প্রথম স্থান অর্জন করি।’
এই সাফল্যই গানের প্রতি তাঁর আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। এরপরই তাঁর বাবা ওস্তাদ রফিকুল ইসলামকে গানের তালিম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি মেলান্দহ উত্তরণ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজের সংগীতশিক্ষা অব্যাহত রাখেন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও মঞ্চের পরিচিতি
মাধ্যমিকে (মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়) পড়ার সময় থেকেই সাদিকুর ছিলেন স্কুলের গর্ব। সে সময়ে স্থানীয় সব গানের প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করতেন, যার ফলে শিক্ষক ও সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠেন। এই সময়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কার অর্জন করেন।
বর্তমানে তিনি সংগীতের প্রতি এই গভীর ভালোবাসা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যুক্ত হয়েছেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের সংগীত বিভাগে অধ্যয়ন করছেন।
বন্ধুসভার পথচলা ও বড় মঞ্চের সুযোগ
জামালপুর বন্ধুসভার সঙ্গে সাদিকুর রহমানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ২০১৫-১৬ সাল থেকে যুক্ত আছেন এই সংগঠনের সঙ্গে।
যখন বন্ধুসভার এই চমৎকার উদ্যোগের (বন্ধুর গান প্রতিযোগিতা) কথা জানতে পারেন, তখন গানের মানুষ হিসেবে তিনি এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি। দীর্ঘ ছয় মাসের কঠোর যাচাই বাছাই পর্ব পার করে প্রতিযোগিতার সেরা তিনজনের একজন হতে পেরে সাদিকুর রহমান অত্যন্ত আনন্দিত।
ভবিষ্যৎ স্বপ্ন
প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিজের গায়কির বাইরে ভিন্ন ধারার গানে দক্ষতার কঠিন পরীক্ষা দিতে হলেও, সাদিকুরের কাছে বাংলা আধুনিক ও লোকসংগীত ঘরানার গানগুলো বিশেষ পছন্দের। তিনি মনে করেন, এই গানগুলো সব সময় জীবন্ত। এই গানগুলো খুব সহজেই মানুষের মনে গেঁথে যায় এবং মানুষের জীবনের কথা বলে।
সাফল্যের এই চূড়ায় দাঁড়িয়েও সাদিকুর রহমানের লক্ষ্য স্থির ও পরিচ্ছন্ন। তিনি বলেন, ‘সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে শুদ্ধ সংগীত চর্চার মাধ্যমে বাংলার মানুষকে ভালো গান উপহার দিতে চাই।’ তাঁর এই সংকল্পই প্রমাণ করে, মঞ্চ না পেলেও বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই প্রতিভাবান শিল্পী শুদ্ধ সংগীতের মশাল জ্বালিয়ে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
উপদেষ্টা, জামালপুর বন্ধুসভা