তালের শাঁস: রসালো ফল, রাঙা স্মৃতি

গরমে অতুলনীয় তালের শাঁসফাইল ছবি

বাংলার মাটির সঙ্গে মিশে আছে নানা রকম ফলের গল্প। এর মধ্যে একটি অত্যন্ত পরিচিত ও উপকারী গ্রীষ্মকালীন ফল তাল। ভাদ্র মাসের দিকে যখন আম-কাঁঠালের মৌসুম প্রায় ফুরিয়ে আসে, তখন বাজারে দেখা মেলে আরেকটি সুস্বাদু ও রসালো ফল—তালের শাঁস। অনেকে একে বলেন ‘তালকুঁড়’ বা ‘কচি তাল’।

ছোটবেলার স্মৃতিতে এই ফলের স্বাদ যেন আজও জীবন্ত। বিশেষ করে মামার বাড়িতে গাছ থেকে পাড়া তালের শাঁস খাওয়ার আনন্দ আজকের ব্যস্ত শহুরে জীবনে আর ফিরে আসে না। তাই এখন বাজার থেকে কিনেই খেতে হয় এই ফল।

বাংলা ক্যালেন্ডারের জ্যৈষ্ঠ মাসে সাধারণত তাল পাকে। সূর্যের প্রখর তাপে যখন শরীর কাহিল হয়ে পড়ে, তখন তালশাঁস যেন একপ্রকার প্রাকৃতিক টনিক। তালের শাঁসে থাকে প্রচুর জলীয় উপাদান, যা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। এ কারণে গরমকালে তালের শাঁস খাওয়ার কদর বাড়ছে শহর ও গ্রামে সমানভাবে।

তাল শুধু রসালো ও সুস্বাদুই নয়, বরং পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এতে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং মুখে রুচি আনে। তালের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি–সহ নানা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান।

বিশেষ করে যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য তালের শাঁস হতে পারে একটি প্রাকৃতিক ও সুস্বাদু সমাধান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ।

তাল শুধু স্বাস্থ্যের দিক থেকেই নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। বাংলার লোকজ জীবনে পাকা তালের অনেক ব্যবহার রয়েছে—তালের পিঠা, তালের বড়া, তালের ক্ষীর, এমনকি তালের রস দিয়েও তৈরি হয় বিভিন্ন মিষ্টান্ন। আগে গ্রামবাংলায় তালের মৌসুম এলেই ঘরে ঘরে পিঠা বানানো হতো। আজও এই ঐতিহ্য কিছুটা হলেও টিকে আছে।

তালের শাঁস সাধারণত সকালে খালি পেটে খাওয়া ভালো। চাইলে এটি ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে পরিবেশন করা যায়, যা আরও বেশি রিফ্রেশিং অনুভূতি দেয়। তালের শাঁস শুধু একটি গ্রীষ্মকালীন ফল নয়, এটি বাংলার প্রকৃতি, ঐতিহ্য, পুষ্টি ও স্মৃতির এক অমূল্য সংযোজন। শহরের যান্ত্রিক জীবনে হারিয়ে যেতে বসা এই ফলটির পুষ্টিগুণ ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।

সহসভাপতি, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা