আমাদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতেন

আমাদের বেড়ে ওঠায় বাবাদের অবদান অনেক। তাঁরা সেই অবদানের কথা প্রকাশ করতে চান না। সব সময় সন্তানের ছায়া হয়ে আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন। সন্তান হিসেবে আমরাও বাবাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাই। ১৫ জুন ছিল বাবা দিবস। এ উপলক্ষে বাবাকে না বলা কথা লিখে পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা।

বাবার সঙ্গে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

আমার বাবা, হাবুল মিয়া ছিলেন একজন অফিস সহায়ক (দপ্তরি)। কর্মস্থল ছিল আমাদেরই প্রাণের স্কুল শাঁখচূড়া উচ্চবিদ্যালয়। তবে আমাদের জীবনে তিনি শুধু একজন কর্মচারী ছিলেন না, ছিলেন অবিচল ভালোবাসা, নীরব ত্যাগ আর ছায়াসঙ্গী।

আমি আর আমার ছোট ভাই, পিঠাপিঠি দুজন। শৈশবে আমাদের পড়াশোনা শুরু হয় স্থানীয় উদ্ভাস শিশুনিকেতন নামের একটি কিন্ডারগার্টেনে। তখন বাবা সকাল সাতটায় নিজেই সাইকেল চালিয়ে আমাদের স্কুলে নিয়ে যেতেন। ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্কুলের বাইরে বসে অপেক্ষা করতেন। প্রতিদিন হাতে তুলে দিতেন দুই টাকা, যেন কিছু খেতে পারি।

পরে ভর্তি হই শাঁখচূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানেও বাবার ছায়া ছিল প্রতিটি দিন। এরপর মাধ্যমিকে পড়ি শাঁখচূড়া উচ্চবিদ্যালয়ে। সেটি ছিল বাবার কর্মস্থল। উনি স্কুলে অফিস সহায়কের (দপ্তরি) কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে দূর থেকে আমাদের ওপর নজর রাখতেন—ঠিক আছি কি না, খেয়েছি কি না। অনেক সময় নিজে খাবার না খেয়ে সেটা আমাদের খাওয়াতেন। জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, ‘আমি খেয়েছি।’ পরে বুঝেছি, তিনি না খেয়ে আমাদের খাওয়াতেন।

একবার সাইকেলের আবদার করি। কয়েক দিনের মধ্যেই বাবা মুখে স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে হাতে তুলে দিয়েছিলেন সাইকেল। জানি না কীভাবে মেলাচ্ছিলেন খরচের হিসাব। শুধু জানি, আমাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি কোনো দিন পিছপা হননি। সেই সাইকেলে চেপে গফরগাঁও সরকারি কলেজে গিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করি।

আজ আমি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন বিএমইটির কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিবিএস শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছি।

আমার যা কিছু অর্জন, তার পেছনে বাবার অদৃশ্য ছায়া, তাঁর অনবরত পরিশ্রম আর নিঃশব্দ ভালোবাসা রয়েছে। বাবা কখনো মুখ ফুটে কিছু চাননি। ওনার দেওয়া প্রতিটি নিঃশব্দ দানেই আমি আজ মানুষ হয়ে উঠছি।

কাপাসিয়া, গাজীপুর