ফেনী থেকে আমি আর নুর উদ্দিন। বন্ধুত্বের হাত ধরে একসঙ্গে পথচলা। ফেনী থেকে বের হই এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার খোঁজে। আমাদের গন্তব্য কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের নাফ নদীর তীর। শহরের কোলাহল পেছনে ফেলে, গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ আর সমুদ্রসৈকতের ঢেউয়ের সঙ্গে হাত মেলানো এই যাত্রা শুরু হলো আমাদের কাছে এক অন্য রকম জগৎ খুলে দেওয়ার।
গত ২৪ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে যাত্রা শুরু করি। ফেনী শহরের আলোর গলিপথ পেছনে ফেলে আমরা ছুটছি ফেনী-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ পর্যন্ত। রাস্তার ফাঁকে ফাঁকে দেখা মিলছে মেরিন ড্রাইভের ছায়া, দূরে উঁকি দেওয়া পাহাড় আর একপাশে সমুদ্রের ঢেউ। মনে হচ্ছিল, ধীরে ধীরে আমরা এক নতুন জগতে প্রবেশ করছি।
২৫ এপ্রিল, শুক্রবার সকাল ১০টায় টেকনাফে পৌঁছাই। প্রথম চোখে পড়ে বাজারের পাশের বিশাল পাহাড়। মনে হচ্ছিল পাহাড় অনেক দূরে, অথচ আমরা তার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। এখানকার মানুষের মুখে মুখে পান—বয়স্ক হোক বা তরুণ, স্থানীয় হোক বা অন্যান্য জেলা থেকে আসা, সবাই পান খায়।
ঝর্ণাদার বাজার থেকে বিজিবি ২-তে কর্মরত এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাই। খাওয়াদাওয়া শেষ করে বের হই সমুদ্রের পাশে, যেখানে রাস্তা আর উত্তাল ঢেউ একসঙ্গে বাজছে। হু হু বাতাসের শব্দ শুনতে শুনতে চলে যাই গ্রামীণ জনপথ ধরে সাবরাং ইউনিয়নের সীমান্তে।
সাবরাং ইউনিয়নের চারপাশে ছড়িয়ে আছে লবণখেত। এখানের মানুষের জীবন–জীবিকা লবণের ওপর নির্ভরশীল। তবে এখানে এক বড় সমস্যা—বিশুদ্ধ পানির অভাব। স্থানীয় পানির উৎসগুলো লবণাক্ত, তাই মানুষ পানীয় জলের জন্য ভোগান্তি পায়।
সীমান্তবর্তী এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্রমাগত আতঙ্ক বিরাজ করে। নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে বিস্কোরণের বিকট শব্দ প্রায় শোনা যায়, যা সীমান্তবর্তী বাড়িঘরসহ স্থাপনার ওপর প্রভাব ফেলে। দূর থেকে দেখা যায় মিয়ানমার থেকে উড়ে আসা ধোঁয়া, আকাশে ভেসে বেড়ানো নীল ও সাদা মেঘ।
তবু টেকনাফ সুন্দর। পাহাড়, সমুদ্র, লবণখেত আর আঁকাবাঁকা গ্রামীণ পথ— সব মিলিয়ে এক অন্য রকম দৃশ্য। তিন দিন আমাদের কাছে টেকনাফ ছিল এক অনুভূতির জায়গা, যেখানে সৌন্দর্য ও কষ্টের মিশ্রণ চোখে পড়ে। সাবরাং শুধু গ্রামীণ পর্যটনকেন্দ্র নয়, এটি এক জাগ্রত অনুভূতির কেন্দ্র, যা মানুষকে স্থান ও সময়ের বাইরে ভ্রমণ করিয়ে দেয়।
কার্যনির্বাহী সদস্য, ফেনী বন্ধুসভা