হারিয়ে যাই নিসর্গের তেপান্তরে

রাস্তার ধারে কৃষ্ণচূড়াগাছছবি: রিদুওয়ান ইসলাম

নগরের নিশ্বাসবায়ু থেকে শুরু করে প্রতিটি ধূলিকণা জানে এই জীবনের মানে, তারাও কম ব্যস্ততার মধ্যে প্রহর গোনে না। পরিত্যক্ত দেয়ালে জমে থাকা শেওলা, খয়ে যাওয়া ইট, ভেন্টিলেটরের বৃদ্ধ হওয়া টিকটিকি, নিজ হাতে গড়া জালে বসে থাকা মাকড়সা, দেয়ালঘড়ির ঘূর্ণমান সেকেন্ডের কাঁটা, বিদ্যুতের তারের ওপর ঝুলন্ত সারি সারি পাখিদের দিকে চোখ আটকে থাকতে চায় না। চুপচাপ খুপড়ির মতো চারদেয়ালের হয়ে থাকতে মন সায় দেয় না। মন ছুটে যায় নিসর্গের টানে উড়ন্ত ঘুড়ির মতো উন্মুক্ত হয়ে। তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সব বন্ধন, শিকল আর গণ্ডিরা, বিদ্রোহী হয়ে ওঠে তারুণ্য। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।’

জামালপুরে সদরে থাকা হয়। মন খারাপ হলে সবকিছু ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে পড়ি ঘর থেকে। নগরের কাঠফাটা রোদ্দুরের তাপ গায়ে মেখে হেঁটে চলার সময় শরীরে যে দমকা হাওয়া বয়ে যায়, তা বিষণ্নতাকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও কমিয়ে দেয়। পাঁচ রাস্তা থেকে হাঁটতে হাঁটতে নেমে পৌঁছে যাই চার রাস্তায়। চার রাস্তায় প্রকাণ্ড এক বাসার সামনে ডালপালা ছড়িয়ে দেওয়া এক বাগানবিলাসগাছ চোখে পড়ে। সেখানে বেঞ্চিতে বসে এক কাপ ধূমায়িত লাল চা খেতে পারলে তৃষ্ণা মিটে যায়। চা আর বাগানবিলাস পাশাপাশি, এমনই এক মুহূর্তে মরে যাক সব দুঃখবিলাস।

ব্যস্ত নগর, অনবরত চলছে গাড়ির চাকা, কোলাহল বাড়ছে ক্রমেই। হাঁটতে হাঁটতে শরীরে ছেয়ে যায় আশেক মাহমুদ কলেজ রোডের দুই পাশের গাছের আবছায়ায়। গাছের নিচে দাঁড়ালে গোলাম মুরশিদের ‘কিশলয়ের জন্ম-মৃত্যু’ গল্পটির কথা মনে পড়ে যায়। কত যত্নে-ভালোবাসায় ঠাঁই দিচ্ছে তিল তিল করে গত বসন্তে বেড়ে ওঠা সবুজ পাতারা। আকাশের দিকে তাকিয়ে রই নির্বাক। কতই না নান্দনিক এই পৃথিবী! গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে মনের অজান্তেই একটু আধটু করে মহাকাশসমান সুখ পেতে পারি।

আশেক মাহমুদ কলেজ মাঠের দূর্বাঘাসের সঙ্গে ভীষণ সখ্য আমার। শুক্রবার হলে তো কথাই নেই, জামালপুর বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরে বসে যাই ঘাসের বুকে। আবার কখনো-বা ফৌজদারি চলে যাই হাঁটতে হাঁটতে। ফৌজদারির নতুন সূর্যোদয় মনকাড়া এক দৃশ্য চোখের সামনে তুলে ধরে, খুব ভোরে গেলে গা জুড়িয়ে যায় লিলুয়া বাতাসে। তখন আকাশজুড়ে বাজপাখিদের আনাগোনা। সময় সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য এও খারাপ জায়গা নয়। কখনো চলে যাই বিজয় চত্বরে বা আব্দুল হাকিম স্টেডিয়ামের সঙ্গে লাগানো নিউ রোডে। সেখানকার নীরবতা নতুন কিছু ভাবতে শেখায়। রাস্তার ধারের কৃষ্ণচূড়াগাছে পলক থেমে যায় হুটহাট। ফুলগাছের সঙ্গে বন্ধুতা গড়ে ফেলি।

বন্ধু, জামালপুর বন্ধুসভা