বাংলা সাহিত্যের কবি-সাহিত্যিকেরা বর্ষাকাল তাঁদের অসংখ্য সৃষ্টিতে স্থান দিয়েছেন। নীলরঙা বর্ষার স্নিগ্ধতা ভরা ঋতুতে রোমান্টিকতায় মেতে ওঠে বাংলার সবুজ-শ্যামলে ভরা প্রকৃতি। তবে বাংলাদেশি মানুষের জন্য এই ঋতু রোমান্টিকতার চেয়েও বিরহের বেদনা বেশি দেয়। সে কারণেই আষাঢ় মাস এলে প্রকৃতিতে যেন মিলনের বিরহ ছেয়ে যায়।
টানা বৃষ্টিতে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। দেশের অনেক অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়। তবুও এই ঋতুতে মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে কাব্যিকতার ছোঁয়া লাগে। নাচ, গান ও পালা–পার্বণের মধ্য দিয়ে বর্ষা বরণ করে নেন সংস্কৃতিমনা বাঙালিরা। প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরাও প্রতিবছর এই দিনে উৎসবের আয়োজন করে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় ১৭ জুন ‘বন্ধু, এসো বর্ষায়’ শিরোনামে বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিয়েছে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা।
রাজধানীর কারওরান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে অংশ নিয়েছে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা, ক্যামব্রিয়ান বন্ধুসভা, কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা, কুমিল্লা বন্ধুসভাসহ অন্যান্য বন্ধুসভা।
সকাল থেকেই রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, আকাশ মেঘে ঢেকে রয়েছে। সূর্যের দেখা মেলেনি। অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত হবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দেয়। তবে বন্ধুসভার বন্ধুরা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বর্ষাকে বরণ করে নিতে চলে আসেন। বৃষ্টি আটকে রাখতে পারেনি তাঁদের। অনেকে পথিমধ্যে ভিজে গেছেন। সেই ভেজা পোশাক পরেই অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন।
বর্ষা ঋতু নিয়ে বিভিন্ন গান ও নাচে উৎসব মাতিয়ে রাখেন বন্ধুরা। শুরুতেই ‘মায়াবন বিহারিণী’ গানের সুরে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধু অনিক সরকার। তবে সবাইকে আরও বেশি মুগ্ধ করেছেন নিজের লেখা ও সুরে গাওয়া একটি গান পরিবেশন করে। ‘ভালোবাসার ছোঁয়া’ শিরোনামের গানটি তাঁর লেখা প্রথম মৌলিক গান। এবারই প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে এটি গেয়ে শোনান। সঙ্গে ডুয়েট গেয়েছেন আরেক বন্ধু আর্যা। পরে আর্যা একটি একক গানও পরিবেশন করেন।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি প্রার্থনাসংগীত গেয়ে শোনান ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধু মাহমুদা তমা। চমক ছিল কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভার মামুন হোসাইনের কণ্ঠে ‘এই মেঘলা দিনে’ গানের পরিবেশনা। নাচ করেছেন বন্ধু খাদিজা জান্নাত পরী। কবিতা আবৃত্তি করেন ক্যামব্রিয়ান বন্ধুসভার ফাবিহা, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার উপদেষ্টা মাহবুব পারভেজ। তারাপদ রায়ের হাস্যরসাত্মক কবিতা ‘আমি কোন রিস্ক নেই না’ আবৃত্তি করে সবাইকে বেশ চমকে দিয়েছেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি সোলাইমান কবির।
বন্ধু শাহিদা আলম জ্যোতি ও ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। শেষ দিকে ফল পর্বও থাকে। আম, জাম ও লিচু খেয়ে বন্ধুরা যাঁর যাঁর গন্তব্যের দিকে রওনা হন।