দেশি ফল নিয়ে বন্ধুসভার ফল উৎসব
গ্রীষ্ম এলেই বিশেষ করে জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশের গাছে গাছে বাহারি ফলের মেলা বসে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা দেশি ফলের সুবাসে ভরে ওঠে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এই মৌসুমে কেউ কোথাও বেড়াতে গেলেও ফল নিয়ে যান। আবার অনেকে উপহার হিসেবেও ফল পাঠান। তাই তো এই মৌসুমের আরেক নাম ফলের মৌসুম।
এই মাসে তাই প্রতি গ্রীষ্মেই বন্ধুদের মধ্যে ফল খাওয়ার উপকারিতা ছড়িয়ে দিতে এবং দেশি ফলের উপকারিতা জানাতে নানা ফল নিয়ে উৎসবের আয়োজন করে বন্ধুসভা। এবারও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) বন্ধুসভার সহযোগিতায় প্রায় ২৫ ধরনের ফল নিয়ে ‘ফল উৎসব ২০২২’ আয়োজন করেছে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ। ১১ জুন, শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার চত্বরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভা, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও যাত্রাবাড়ী বন্ধুসভা। ঢাকা মহানগরের বন্ধু শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত সারা দিন ঘুরে ঘুরে ফল সংগ্রহ করেন। উৎসবস্থলে সেগুলো নিয়ে আসার পর শুরু হয় মূল আয়োজন। এর আগেই বিভিন্ন বন্ধুসভার বন্ধুরা নানা ফল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। এতে উৎসব যেন পরিণত হয় মিলনমেলায়, অন্য রকম আনন্দের আমেজ বয়ে যায় সবার মাঝে।
আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আপেল, মাল্টা, লটকন, লিচু, পেঁপে, আনারস, আমলকী, সফেদা, ডেউয়া, বাঙ্গি, খেজুর, পেয়ারা, বেতফল, তালের শাঁস, কাউফলসহ নানা স্বাদের ফলের ডালা সাজিয়ে অভ্যাগতদের আমন্ত্রণ জানান বন্ধুরা।
আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শহীদুর রশিদ ভূঁইয়া এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম। শেকৃবি বন্ধুসভার প্রধান মডারেটর ও সাউরেস পরিচালক আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন কিশোর আলোর সম্পাদক এবং প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক, বন্ধুসভার পৃষ্ঠপোষক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, শেকৃবি প্রক্টর মো. হারুন উর রশিদ, শেকৃবি বন্ধুসভার সহকারী মডারেটর শাহ জহির রায়হান সোহাগ, সহকারী মডারেটর মো. ওয়ালী আহাদ সেতু, সহকারী মডারেটর শিমুল চন্দ্র সরকার ও সহকারী মডারেটর সাইফুল্লা শাহরিয়ার।
সূচনাপর্বে জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিকের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বন্ধুসভার সভাপতি উত্তম রয়। আর প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনের জন্য বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কৃষি খাতে অনেক এগিয়ে গেছে। বিশেষ করে, ফল উৎপাদন বৈচিত্র্যে এ দেশের জুড়ি নেই। সারা বিশ্বে এখন স্থানিক ফলগুলোর স্বত্ব সেই দেশেরই। বাংলাদেশের এত বৈচিত্র্যময় ফল আছে, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ নেই ও প্রসার নেই। এখানে দেশি ফলের জিন সেন্টার করা দরকার। ফল নিয়ে আরও গবেষণা দরকার।’
আনিসুল হক কৃষি খাতে দেশের সমৃদ্ধির জন্য কৃষি গবেষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশি ফলের নানা গুণ আমাদের সবার জানা প্রয়োজন। এই আয়োজনে এমন সব ফল আছে, যা শহুরে সাধারণের কাছে পৌঁছায় না। ফল নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হব, দেশি ফল বেশি করে খেতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম শৈশবে বিভিন্ন গাছ থেকে সরাসরি ফল পেড়ে খাওয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে এমন আয়োজনের জন্য বন্ধুসভাকে ভালোবাসা জানান। এ সময় তিনি তাঁর সামনে থাকা বেতফল হাতে নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
আয়োজনে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ফলের ডালি সাজানো বন্ধুদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং শেকৃবিতে এমন আয়োজনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। ভবিষ্যতে আরও আড়ম্বরে এই আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
শেকৃবির প্রক্টর মো. হারুন উর রশিদ আয়োজনের সার্বক্ষণিক তদারকির পাশাপাশি পুরো সময় বন্ধুদের উৎসাহ দেন। তিনি বলেন, ‘এমন চমৎকার আয়োজন তরুণদের বৈচিত্র্যময় মননে ভাবনার খোরাক জোগায়। দেশি ফল নিয়ে তাদের উৎসাহী করে তোলে, আগ্রহী করে খেতে, যা বেশ ভালো একটি বিষয়।’
এ সময় অন্য অতিথিরা উৎসবে যোগ দিয়ে তাঁদের উচ্ছ্বসিত অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। সূচনাপর্ব শেষে উপাচার্য মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ফল দেখেন।
অতিথিদের আলোচনা শেষে বন্ধুরা ফল খাওয়ায় মেতে ওঠেন। কারও পছন্দ আম তো কেউ আবার লিচু ছিলে মুখে পুরছেন। অন্যদিকে কেউ আবার তালের শাঁস বের করার কসরত করছেন। ফাঁকে ফাঁকে চলে আনন্দ আড্ডা, নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি আর নানা বাচিক শিল্পচর্চা।
জাতীয় পর্ষদের বন্ধু রুকাইয়া জহিরের সঞ্চালনায় নাচ পরিবেশন করেন বন্ধু ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধু খাদিজা জান্নাত পরী, আবৃত্তি করেন জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি বহ্নি শিখা, গান গেয়ে শোনান ড্যাফোডিলের বন্ধুরা, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বন্ধু তানজীম খান, মহানগরের বন্ধু অনিক সরকার, কবিতা আবৃত্তি করেন বন্ধু জান্নাতুন নাঈম, মহানগরের উপদেষ্টা মাহবুব পারভেজ। আর জাতীয় পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক গাজী আনিস ১ মিনিটে ২১০টি অসুখ আর ৪০০ নারীর নাম বলে চমকে দেন বন্ধুদের। এ সময় জাতীয় পর্ষদের , প্রশিক্ষণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ সাদেক, কার্যনির্বাহী সদস্য সাইমন চৌধুরী, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডা. রেদওয়ান মাহমুদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পর্ষদের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ মল্লিক ও বন্ধুসভার ডিজিটাল সমন্বয়ক শাকিব হাসানের তত্ত্বাবধানে শেকৃবি বন্ধুসভার সভাপতি জিনিয়া রহমান ঐশী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোরশেদ অন্তরের নেতৃত্বে শেকৃবির পঞ্চাশোর্ধ্ব বন্ধুর সক্রিয় প্রচেষ্টায় পুরো আয়োজনটি ছিল আনন্দমময়, উৎসবমুখর। শেকৃবির আতিথেয়তায় মুগ্ধ বন্ধুদের উচ্ছ্বাসও ছিল চোখে পড়ার মতো। অবশেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ভাঙে মিলনমেলা। মুখভরা মধু আর বাহারি ফলের স্বাদ নিয়ে ফিরে যান বন্ধুরা।
উল্লেখ্য, এই সময় সারা দেশের বন্ধুরা নানা আয়োজনে ফল উৎসব পালন করে, যেখানে বন্ধুরা নিজেদের পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদেরও সম্পৃক্ত করে থাকেন।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ