আপনার কাজই আপনার ব্র্যান্ডিং

‘দ্য পাওয়ার অব পারসোনাল ব্র্যান্ডিং: ডিফাইন, ডিজাইন, ডেলিভার’ কর্মশালা শেষে আলোচকদের সঙ্গে সনদ হাতে অংশগ্রহণকারীরা
ছবি: শেখ কাব্য

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি যা পোস্ট করেন, যেভাবে নিজেকে প্রকাশ করেন, কিংবা পেশাগত দক্ষতায় কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন—এসবই পারসোনাল ব্র্যান্ডিং। আপনি আসলেই কে, সেটা অন্যদের জানানোই শুধু নয়, নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম আলো বন্ধুসভার আয়োজনে ‘দ্য পাওয়ার অব পারসোনাল ব্র্যান্ডিং: ডিফাইন, ডিজাইন, ডেলিভার’ শিরোনামে বিশেষ কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

২৫ জুলাই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে কর্মশালা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বন্ধুসভার সদস্যরা এতে অংশ নেন। কর্মশালার অধিবেশনে বক্তারা বলেন, পারসোনাল ব্র্যান্ডিং হলো আপনি কী করতে চান, কেন সেটা করছেন, মানুষ আপনাকে কীভাবে মনে রাখবে, কারা আপনার টার্গেট অডিয়েন্স—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা। একজন মানুষ হিসেবে আপনার যেসব গুণ বা দক্ষতা অন্যকে প্রভাবিত করে, সেটাই হলো আপনার ব্র্যান্ড। নিজের কাজের মাধ্যমেই ইমপ্রেশন তৈরি করতে হয়। আর্টিফিশিয়াল কিছু না করে নিজে যেমন, তেমনটাই প্রকাশ করতে হবে।

‘এআই এবং ইয়ুথ’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন লেখক ও ইনফ্লুয়েন্সার সাদমান সাদিক
ছবি: শেখ কাব্য

ভবিষ্যতে ইনফ্লুয়েন্সারদের অনেকেই বাস্তবে থাকবেন না, তাঁরা হয়তো এআই পারসন হবেন উল্লেখ করে তরুণদের সতর্ক করেন লেখক ও ইনফ্লুয়েন্সার সাদমান সাদিক। ‘এআই ও তারুণ্য’ বিষয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, ভবিষ্যতে পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। তাই সে অনুযায়ী দক্ষতা গড়তে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে নিজের সৃশনশীলতা বা নিজস্বতা নষ্ট না হয়।

‘ব্র্যান্ডিং করতে গেলে নেগেটিভ মন্তব্য আসবে। এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে। কোন মন্তব্য আপনার উন্নতির জন্য উপকারী, তা বুঝে উত্তর দিন। আর অপ্রাসঙ্গিক বা অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য হলে ডিলিট করাই ভালো’, যোগ করেন সাদমান সাদিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক রাফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে খাতে আপনি ভালো, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে আপনি এই কাজটা করেন
ছবি: শেখ কাব্য

শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, জগৎটাই এখন পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের। এমন একটা বিষয়ে বন্ধুসভার প্রশিক্ষণ, খুবই চমকপ্রদ। এটা ভালো হয়েছে।

‘ব্র্যান্ডিং ইয়োরসেলফ: ডিফাইন, ডিজাইন, ডেলিভার’ বিষয়ে সেশনের শুরুতেই লেখক ও ব্র্যান্ড মার্কেটিং প্রফেশনাল প্রলয় হাসান প্রশ্ন রাখেন, ‘কী করে আপনি বিখ্যাত হতে চান? কোন কাজটা আপনি ভালো পারেন? আপনার আগ্রহ কী? এমন কী গুণ আছে, যেটার জন্য মানুষ আপনাকে ফলো করবে?’ এসব প্রশ্নের উত্তরই একজন ব্যক্তির ব্র্যান্ড তৈরি করে দেয়। উদ্দেশ্য ছাড়া ব্র্যান্ডিং হয় না। প্রলয় হাসান বলেন, ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে সৎ হতে হবে। আপনি বাস্তবে যেমন, সেটাই প্রকাশ করতে হবে। নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল বিশেষ করে লিংকডইন এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন মানুষ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে আপনি কে এবং কী করেন।’

লেখক ও ব্র্যান্ড মার্কেটিং প্রফেশনাল প্রলয় হাসান আলোচনা করেন ‘ইয়োরসেলফ: ডিফাইন, ডিজাইন, ডেলিভার’ বিষয়ে
ছবি: শেখ কাব্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক রাফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যে খাতে আপনি ভালো, সেটা নিয়েই কাজ করুন। কাজের ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত পোস্ট দিন। তবে বিতর্কিত বা হুটহাট কোনো কিছু পোস্ট দেওয়া যাবে না। চিন্তাভাবনা করে, সচেতন হয়ে নিজের ভাবমূর্তি গড়তে হবে।’

বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিকের সঞ্চালনায় ছিল প্যানেল আলোচনা।

প্যানেল আলোচনা
ছবি: শেখ কাব্য

বিপনন বিশেষজ্ঞ উত্তম রায়ের বক্তব্যে উঠে আসে, কাজের দক্ষতা, অন্যদের কাছে আপনার মূল্যায়ন এবং বিশ্বাসযোগ্যতা—এ তিনটি বিষয় পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মূল স্তম্ভ। নিজের একটা ইমেজ তৈরি করতে হবে, যার ওপর মানুষ আস্থা রাখবে, বলেন তিনি।

সততা, একনিষ্ঠতা আর মানবিকতা ব্র্যান্ডিংয়ের ভিত্তি বলে মনে করেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক। তিনি বলেন, নিজের ব্র্যান্ড তৈরিতে সততা ও একনিষ্ঠতা জরুরি। বিভ্রান্তিমূলক বা ভুয়া তথ্য শেয়ার করা যাবে না। শেষে সবাইকে সনদ দেওয়া হয়।

এই কর্মশালায় আয়োজন সহযোগী হিসেবে ছিল বাংলা–দেশি ফুডস লিমিটেড।

প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ