সিংড়া ফরেস্টে আনন্দ আর বন্ধুত্বের উৎসব

হাবিপ্রবি বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার। শীতের স্নিগ্ধ সকাল। দিনাজপুরের বিরলের সিংড়া ফরেস্ট ঘুমঘুম সবুজ শরীর নিয়ে জেগে উঠছে ধীরে। সূর্যের আলো যখন পাতার ফাঁক গলে পড়ে, তখনই একে একে সমবেত হতে থাকেন হাবিপ্রবি বন্ধুসভার সদস্যরা। নতুন–পুরোনো সবার অংশগ্রহণে দিনটি রঙিন হয়ে ওঠে চড়ুইভাতি ও নবীনবরণে।

সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত নবীনদের আগমনে। নতুনদের একে অপরের সঙ্গে পরিচিত করতে আয়োজন করা হয় বিশেষ পরিচিতি সেশন। সভাপতি নাসিম আহমেদ নবীনদের উদ্দেশে বলেন, ‘বন্ধুসভা শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি একে অপরের সঙ্গে শিখতে ও সমাজে ভালো কাজ করতে একটি পরিবার। পরিবর্তনের পথ এখান থেকেই শুরু হয়।’

পরিচিতির মাঝে নবীনরা জেনে নেন সংগঠনের অতীত কাজ, চলমান প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে।

দুপুরের খাবার পর্ব।

চড়ুইভাতির সবচেয়ে প্রাণবন্ত অংশ ছিল যৌথ রান্না। কেউ শবজি কাটছেন, কেউ আগুন দেখছেন, কেউ রান্না নেড়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে। হাসি–মজা আর সহযোগিতার আবহেই তৈরি হয় দলের শক্ত বন্ধন। একজন স্বেচ্ছাসেবক হাসিমুখে বললেন, ‘এতজন মিলে রান্না করা মানেই আলাদা এক আনন্দ। খাওয়ার স্বাদ শুধু খাবারে নয়, এই সহযোগিতায়।’

রান্নার ফাঁকে চলতে থাকে গান, নাচ, কবিতা ও গল্প। কারও গিটারের ঝংকার, কারও কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত, আবার কারও কণ্ঠে আধুনিক গান—সব মিলিয়ে নবীনেরাও যোগ দেন নাচের তালে তালে। মুহূর্তগুলো হয়ে ওঠে উচ্ছ্বাসে ভরা, অভূতপূর্ব ও স্মরণীয়।

দুপুরের খাবারের পর অনুষ্ঠিত হয় জনপ্রিয় খেলা—মিউজিক্যাল চেয়ার ও পিলো পাসিং। হাসি, চিৎকার, উল্লাসে সিংড়া ফরেস্ট তখন যেন একদম উৎসবমুখর। খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে স্মারক হিসেবে বই তুলে দেওয়া হয়।

মুহূর্তগুলো হয়ে ওঠে উচ্ছ্বাসে ভরা, অভূতপূর্ব ও স্মরণীয়।

নবীন বন্ধু আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আজকের দিনটা আমার কাছে খুবই বিশেষ। এমন আন্তরিকতা এবং উষ্ণতা আমি আশা করিনি। বন্ধুসভার সঙ্গে আরও কাজ করতে আগ্রহী হয়ে গেলাম।’

আরেক নবীন বন্ধু সাদিয়া রহমান বলেন, ‘নতুন পরিবেশে এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা আমাকে ছুঁয়ে গেছে। গান, রান্না, খেলা—সবকিছুতেই একধরনের পারিবারিক আবহ ছিল। খুব ভালো লেগেছে।’

প্রোগ্রাম চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘নবীনদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এবং তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য এই আয়োজনটি ছিল খুবই ভালো সুযোগ। আগামীতে তাঁরা বন্ধুসভার মূল শক্তি হয়ে উঠবে, এটাই আমাদের বিশ্বাস।’

কো-চেয়ারম্যান সাজিয়া শারমিন বলেন, ‘বন্ধুসভার প্রতিটি আয়োজনের লক্ষ্যই হলো ভালো কিছু করা এবং নিজেকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। নবীনদের অংশগ্রহণ আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।’

স্মৃতি ভরা আরেকটি অধ্যায়।

আয়োজন সফল করতে সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে পাশে থেকেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ পরিচালক অধ্যাপক এস এম এমদাদুল হাসান, সহকারী পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক মো. শামসুজ্জোহা, কলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক মো. আরিফুজ্জামান।

দিনের শেষে যখন সবাই ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন, তখন আকাশ ভরে ওঠে একসঙ্গে উচ্চারিত স্লোগানে—‘বন্ধুসভা! বন্ধুসভা! প্রথম আলো বন্ধুসভা!’
প্রতিধ্বনিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে দলীয় ঐক্য, ভালোবাসা ও সম্মিলিত শক্তি।

গ্রুপ ফটো, শেষ আড্ডা এবং নতুন অভিজ্ঞতার হাতছানি নিয়ে সবাই দিনটি শেষ করেন। নবীনদের জন্য এটি ছিল নতুন যাত্রার সূচনা, আর পুরোনো সদস্যদের জন্য স্মৃতি ভরা আরেকটি অধ্যায়।