সবারই অন্তত এক-দুজন বন্ধু থাকা জরুরি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীরা
ছবি: প্রথম আলো

শরীর ও মন একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। শরীর অসুস্থ থাকলে রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মন খারাপ হলে বা মানসিক সমস্যা দেখা দিলে তরুণ-তরুণীরা রোগ শনাক্ত দূরে থাক, অনেক সময় সমাজের নেতিবাচক ধারণার ভয়ে চিকিৎসা নিতেই অপারগতা প্রকাশ করেন। মন ভালো না থাকলে বস্তুত শরীরের ওপরই চাপ পড়ে। মানসিকভাবে সুস্থ না থাকতে পেরে অনেক সময় আত্মহত্যার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেন তরুণ-তরুণীরা। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাথমিক পর্যায়ে হস্তক্ষেপ এবং কার্যকর প্রতিরোধকৌশল জীবন রক্ষাকারী হয়ে উঠতে পারে। সমসাময়িক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুতে তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালা।

ইউনিমেড ইউনিহেলথ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার আয়োজনে ১০ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারিতে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

আমন্ত্রিত অতিথিদের একাংশ
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মুন্নার সঞ্চালনায় কর্মশালায় আলোচনা করেন এনাম মেডিকেল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হোসেন এবং সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের কনসালট্যান্ট সাইকোথেরাপিস্ট মাহমুদা মহসিনা বুশরা।

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তরুণদের ভূমিকা ও করণীয় কী? মানসিক স্বাস্থ্য বনাম মানসিক রোগের ধরন, আত্মহত্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকার, কীভাবে মনের যত্ন নেওয়া যায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘শরীরের কোনো অংশ অসুস্থ হলে সেটার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা নেওয়া যায়। কিন্তু মানসিক রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা যায় না। কোনো মানুষ মানসিকভাবে সুস্থ নাকি অসুস্থ, এটা বুঝতে হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তাঁর সমস্যাগুলো বলতে হবে। তবেই না কোন ধরনের রোগে তিনি ভুগছেন, সেটা বুঝতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের সমাজে মানসিক সমস্যা হলে সেটার চিকিৎসা নিতে বেশির ভাগ মানুষই আগ্রহ দেখান না। তাঁরা ভাবেন, যদি মানসিক রোগের চিকিৎসা করাতে যান, তাহলে সমাজ কী বলবে?’

মাদকের বিরুদ্ধে শপথ
ছবি: প্রথম আলো

এ সময় তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সারা বিশ্বের ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। প্রতিটি পরিবারেই কেউ না কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু আমাদের দেশে সে তুলনায় বিশেষজ্ঞ নেই। যাঁরা আত্মহত্যা করেন, তাঁদের ৯৮ শতাংশ মানসিক রোগের কারণে আত্মহত্যা করেন। যাঁরা মানসিকভাবে সুস্থ, তাঁরা আত্মহত্যা করেন না।

অপর আলোচক মাহমুদা মহসিনা বুশরা বলেন, ‘ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তরুণ-তরুণীদের অনেকেরই মনে হয়, পৃথিবীতে বেঁচে থেকে লাভ নেই, আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আমি কিছু পারি না, সবাই কেন আমাকে দোষ দেয়, এই সব মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় না হলে ভালো হতো ইত্যাদি। এগুলো সবই মানসিক ডিজঅর্ডারের কারণে হয়। অথচ আমাদের বেঁচে থাকার নামই জীবন। যাঁরা কাঁদতে পারেন না, রাগ করতে পারেন না, তাঁরা মানসিক সমস্যায় বেশি ভোগেন। এগুলো সব অনুভূতি। এসব অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারলেই মানুষ হতাশায় পড়ে যায়। এই হতাশা কাটাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন বন্ধুরা। তাই সবারই অন্তত এক-দুজন বন্ধু থাকা জরুরি।’

কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন মোজাম্মেল হক, প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ সম্রাট, বর্তমান সভাপতি হামিদা জান্নাত মনি, অর্থ সম্পাদক তাবাসসুম রিচিকা। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের নির্বাহী শোয়েব মোস্তফা রেজা, সহকারী কর্মসূচি ব্যবস্থাপক গোলাম রব্বানী প্রমুখ।