শীতের সকালে কুয়াশা বরণ

সকাল সাড়ে ছয়টায় কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে শুরু হয় উৎসব
ছবি: বন্ধুসভা

ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। বৈচিত্র্যের পরিক্রমায় হেমন্তের সোনালি ডানায় ভর করে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে কুয়াশার চাদর জড়িয়ে আসে শীতকাল। চারদিকে কুয়াশার এই আবরণ কেবল মোহনীয়তা ছড়ায়। মনে হয়, এক ঘোরের মধ্যে দিনের শুরু আর সূর্যের আগমনে কেটে যায় ঘোর।

ঘন মেঘের কুয়াশা, মুক্তার মতো ঝলমলে শিশির, তাজা খেজুরের রস, তার সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম পিঠা—এ সবকিছুর অনবদ্য ও অপূর্ব মুহূর্তের সমন্বয়ে প্রকৃতি যেন আপনমনে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে এক অসম্ভব সুন্দর আঙ্গিকে, নতুন রূপে। গ্রামের অনাবৃত দিগন্তবিস্তৃত প্রকৃতির মাঝখানে শীতের সকাল যে সৌন্দর্য মহিমায় সেজে ওঠে, শহরের ইটপাথরে ঘেরা পরিবেশে তার আবাস নেই বললে চলে। শীতের সঙ্গে কুয়াশার এই মোহনীয়তা উদ্‌যাপন করতে নোয়াখালী বন্ধুসভা গতকাল শনিবার আয়োজন করে ‘কুয়াশা উৎসব’।

উৎসবে উপস্থিত বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

সকাল সাড়ে ছয়টায় কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে বন্ধুরা হাজির হন নোয়াখালী সরকারি আবাসিক এলাকা–সংলগ্ন পার্ক প্রাঙ্গণে। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে বন্ধুরা খড়কুটো ও লাকড়ি জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে বসেন। এরপরই পাঠাগার ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক তাজকির হোসেনের উপস্থাপনায় সকাল সাতটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক আসিফ আহমেদ। আনন্দঘন এই মিলনমেলা আরও মোহময় করতে বন্ধু তাহসিন রহমানের কণ্ঠে ঝংকৃত হয় রবীন্দ্রসংগীত। শীতের সকাল নিয়ে নাটিকা উপস্থাপন করেন তাজকির হোসেন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাজরিহাতুন স্বর্ণা।

কবি সুফিয়া কামালের ভাষায়—
‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে
খুশিতে বিষম খেয়ে
আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে
মায়ের বকুনি খেয়ে’

কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে বন্ধুরা খড়কুটো ও লাকড়ি জ্বালিয়ে আগুন পোহান
ছবি: বন্ধুসভা

এই কুয়াশা উৎসবে মায়ের বকুনি ছিল না। পিঠা, খেজুর রসের পায়েসের আয়োজনের সঙ্গে খিচুড়ি-মাংস এবং চায়ের আড্ডা ভিন্নমাত্রা যোগ করে। ভোরবেলায় পার্কে হাঁটতে আসা পথচারী, শ্রমিকদের সঙ্গেও খাবার ভাগাভাগি করে নেন বন্ধুরা। শৈশবে ফিরে যেতে বন্ধু ও উপদেষ্টাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মার্বেল দৌড় প্রতিযোগিতা। হারজিতের এই খেলায় ছিল শুধুই আনন্দ। বিজয়ীরা বিভিন্ন চরিত্রে উপস্থিত অভিনয় করে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল কাইয়ূম, নোয়াখালী জিলা স্কুলের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহফুজের রহমান, উপদেষ্টা লায়লা পারভীন, নোয়াখালী বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি সুমন নূর, কামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল র‌্যাফল ড্র। দশ ভাগ্যবানকে বিজয়ী ঘোষণা এবং ভিন্ন আঙ্গিকে প্রদান করা হয় মজার সব পুরস্কার। শেষ দিকে সাংস্কৃতিক পর্বে বন্ধুদের গানের আসরের মাধ্যমে সভা জমে ওঠে। নোয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি মাছুম বিল্লাহ তাঁর সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি আবু তাহের, জাহিদ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জ্যানিসা আফরোজ, ইমতিয়াজ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সুলতানা, অর্থ সম্পাদক উম্মে ফারহীন, দপ্তর সম্পাদক আবদুর রহিম, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক মো. শিমুল, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক আফরিনা আনিকা, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক রাইসা তাজরিন, বইমেলা সম্পাদক আশরাফুল মতিন, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক প্রনয় মজুমদার, কার্যনির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম, ধ্রুব ভূঁইয়াসহ অন্য বন্ধুরা।

পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা