নোয়াখালী বন্ধুসভার বর্ণমালা উৎসব

নোয়াখালী বন্ধুসভার বর্ণমালা উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরাছবি: বন্ধুসভা

ভাষার জন্য এত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, এত রক্ত ঝরিয়েছেন, তবু আমরা কেন বিদেশি ভাষার চর্চা করি? সেই ১৯৫২ থেকে ২০২৪, প্রতিটি ফেব্রুয়ারিতে আমরা ভাষা দিবস পালন করি। কিন্তু যে বর্ণ আর ভাষা নিয়ে এত লড়াই, সে ভাষার কতটুকুইবা ধারণ করি? বর্ণমালা উৎসবের প্রশ্নোত্তর পর্বে এমন সব প্রশ্ন কৌতূহলের সঙ্গে জানতে চায় শিক্ষার্থীরা।

২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা হতে নোয়াখালী শহরের প্রায় ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে মোহাম্মদ আবদুর রশিদ উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। উদ্দেশ্য, নোয়াখালী বন্ধুসভার ‘বর্ণমালা উৎসব-২০২৪’-এ অংশগ্রহণ করা। এ নিয়ে নবমবারের মতো বর্ণমালা উৎসবের আয়োজন করল নোয়াখালী বন্ধুসভা।

বর্ণ প্রদর্শনী, পরীক্ষা পর্ব ও উপস্থিত খোলাচিঠি—এই তিন পর্যায় থেকে দুই ক্যাটাগরিতে মোট ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে মেডেল, সনদ ও বই প্রদান করা হয়
ছবি: বন্ধুসভা

সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। উদ্বোধন করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল কাইয়ুম মাসুদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুনা আক্তার ও নোয়াখালী জিলা স্কুলের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহফুজের রহমান। সঞ্চালনা করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফারহিন।

এবার বর্ণমালা উৎসবে সার্বিক সহযোগিতায় ছিল নোয়াখালী পৌরসভা। ২৫০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে বাংলা ভাষা নিয়ে অনুষ্ঠিত ৩০ মিনিটের পরীক্ষা ও চিঠি লেখা পর্বে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের বন্ধুর কাছে যার যার পছন্দমতো বিষয়ে খোলাচিঠি লেখে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম—এই দুই ক্যাটাগরি থেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়।

বর্ণমালা উৎসবে শিক্ষার্থীরা বাসায় পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় ও অপচনশীল জিনিস দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেয় বর্ণের। এসব বর্ণ সাজিয়ে বর্ণ প্রদর্শনী করা হয়। এটা ছিল উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ।

শিক্ষার্থীদের তৈরি করা বর্ণমালা
ছবি: বন্ধুসভা

পরীক্ষা শেষে বেলা ১১টায় শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ পর্বে অতিথি হিসেবে ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান এবং নোয়াখালী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. সফিকুল আলম। ভাষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে যত প্রশ্ন জমে আছে, তারা সেসব নিয়ে অতিথিদের প্রশ্ন করে। সব প্রশ্নের উত্তর দেন অতিথিরা। সুন্দর প্রশ্নের জন্য পুরস্কারও জিতে নেয় তারা। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘তোমাদের অনেক চমৎকার প্রশ্ন পেয়েছি। পরীক্ষা পর্বে তোমাদের প্রশ্ন করা হয়েছে। এবার তোমরা আমাদের প্রশ্ন করছ।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলা ভাষা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই বাংলা ভাষা আমাদের সঠিকভাবে চর্চা করতে হবে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে হবে।’

এরপর যৌথভাবে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফারহিন ও বন্ধু তাসমিয়া ইয়াসমিন। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেও কয়েকজন কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করে।

নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

দুপুর সাড়ে ১২টায় ফলাফল ও পুরস্কার বিতরণীর পর্ব শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বন্ধুসভার উপদেষ্টা লায়লা পারভীন, সুমন নূর, কামাল হোসেন, বন্ধু মহিউদ্দিন রাতুল ও সভাপতি আসিফ আহমেদ। সমাপনী বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান। বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন। বর্ণ প্রদর্শনী, পরীক্ষা পর্ব ও উপস্থিত খোলাচিঠি—এই তিন পর্যায় থেকে দুই ক্যাটাগরিতে মোট ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে মেডেল, সনদ ও বই প্রদান করা হয়।

বর্ণমালা উৎসবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার ৪০ বন্ধু। সুন্দর একটি আয়োজন শেষ করে চোখেমুখে আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে বাড়ি ফেরেন বন্ধুরা।

সাধারণ সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা