তারুণ্যের শক্তি বারবার দেখেছে বাংলাদেশ। ’৫২, ’৬৯, ’৭১, ’৮৭, ’৯০, ২০০৮ সবশেষে ২০২৪—যেকোনো সংকটে তারুণ্যই ত্রাতা হয়ে এসেছে। তারুণ্যের শক্তিতেই মুক্তি পেয়েছে জাতি। বন্ধুসভা সেই তারুণ্যকেই লালন করে, ধারণ করে, দেশ গঠনে গড়ে তোলে। দেশ ও দেশের বাইরের ১৪০টির বেশি বন্ধুসভার লক্ষাধিক সদস্য ২৬ বছর ধরে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, সংকটে-সম্ভাবনায় নিজেদের প্রকাশ করেছেন। গেল জুলাই-আগস্টে তারুণ্যের অভূতপূর্ব জাগরণেও সারা দেশে বন্ধুসভার বন্ধুরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন, সত্যের পক্ষে রুখে দাঁড়িয়েছেন। অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে যখন দেশ আবার সংকটে, তখন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পাহারা, পরিচ্ছন্নতা ও ট্রাফিক কার্যক্রম, দেয়ালে বিপ্লবী গ্রাফিতি অঙ্কন—সবকিছুতেই ছিল বন্ধুদের সরব উপস্থিতি। শুধু কি তাই! এই তো আগস্টের বন্যায় যখন দেশের বিশাল একটি অঞ্চল হঠাৎ বিরানভূমিতে পরিণত হয়, তখন বন্ধুসভার বন্ধুরাই সাড়াদানকারীদের মধ্যে ছিলেন অগ্রগণ্য।
আত্মোন্নয়ন, মানবসেবা, ভালোবাসা আর সহমর্মিতায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে চর্চায় যাত্রা শুরু করেছিল বন্ধুসভা, প্রতিষ্ঠার ২৬ বছরে এসে তা আরও সুদৃঢ় হয়েছে, শক্তিশালী হয়েছে। বন্ধুদের বৃক্ষরোপণে সবুজে সবুজে ভরে উঠছে দেশ। এ বছরও সারা দেশে প্রায় দেড় লাখ গাছের চারা রোপণ করেছেন বন্ধুরা। সহমর্মিতা আর ভালোবাসায় ঈদ আনন্দে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য যথাক্রমে প্রায় পাঁচ হাজার নতুন জামা ও সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছে বন্ধুসভা, অর্থমূল্যে যার পরিমাণ ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি। বন্ধুরা পাখির জন্য বাসা বেঁধে দেন, ছিন্নমূল মানুষকে ঘর করে দেন, অসহায় পরিবারপ্রধানকে দোকান করে দেন, নারীদের স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ দেন, আয়ের পথ তৈরি করে দেন, চিকিৎসাসেবা আর স্বাস্থ্যসচেতনতায় ক্যাম্প করেন। বন্ধুরা গ্রাম-শহর আর চর-বন্দর ঘুরে মানুষের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। আগামীর বাংলাদেশের জন্য নিজেদের তৈরি করতে পাঠচক্র, জীবন ও কর্মমুখী নানা প্রশিক্ষণ আর কর্মশালায় নিজেদের শাণিত করেন। বন্ধুরা গান করেন, নাটক করেন, সিনেমা দেখেন।
তারুণ্যের শক্তিই যখন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, তখন বন্ধুদের এই অসাধারণ আত্মত্যাগ, নিবেদন, প্রত্যয় আর সংকল্পবদ্ধ কর্মযজ্ঞ অসাধারণ এক বাংলাদেশের স্বপ্ন বুনে যায়। প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করা বন্ধুসভা এখন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবী-সামাজিক সংগঠন। বন্ধুসভার বন্ধুরা টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন, বিদেশে পড়াশোনার জন্য সভা-সেমিনার করেন, প্রস্তুতি নেন। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে চীন, ভারত, কাতার, অস্ট্রেলিয়াতেও বন্ধুরা বাংলাদেশের পতাকা উঁচু করে ধরেন, বাংলাদেশের গল্প বলেন, বাংলাদেশের নাম ছড়ানোর দূত হন। বন্ধুত্বের শক্তিতে বলীয়ান তারুণ্য হার না–মানা সংকল্পে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সাংগঠনিক দক্ষতায় নিজেকেই যেন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করে। তাই বছর ঘুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এলে সাড়ম্বরে নিজেদের প্রকাশ করে বন্ধুসভা।
২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ১১ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে সারা দেশের অন্তত ৫৫টি বন্ধুসভার চার শতাধিক বন্ধু ও সুহৃদ জড়ো হন; ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী শপথ আর নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে উদ্যাপন করে তরুণোদয়ের ২৬! এ আয়োজনে বৃক্ষরোপণ ও সহমর্মিতার ঈদ কার্যক্রমে সারা দেশের সেরা ২০টি বন্ধুসভাকে দেওয়া হয় সম্মাননা। আরও ১০টি বন্ধুসভাকে দেওয়া হয় সেরাদের সেরা স্বীকৃতি। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভালো কাজের প্রতিযোগিতায় তিনটি বন্ধুসভাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। নানা আয়োজন আর গুরুজনের পরামর্শে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হয় আয়োজন।
অনুষ্ঠানে লাইফস্টাইল সহযোগী ছিল টুয়েলভ ক্লদিং, রিফ্রেশমেন্ট সহযোগী ইস্পাহানি, এন্টারটেইনমেন্ট সহযোগী চরকি ও নিউট্রিশন সহযোগী হিসেবে ছিল নিউট্রিপ্লাস।