হাজারো পাঠকে মুখর সিলেট বইমেলা

বন্ধুসভার উদ্যোগে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত ১৫ দিনব্যাপী বইমেলায় পাঠকেরাছবি: আনিস মাহমুদ

বছর ঘুরে আবার এসেছে ফেব্রুয়ারি। আবার এসেছে সিলেট বইমেলা। বরাবরের মতো এবারও লেখক-পাঠকের উপস্থিতিতে জমে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া পক্ষকালব্যাপী এ বইমেলা চলবে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেট দশমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে।

মেলার উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। উদ্বোধনী পর্বে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের বাসিন্দা বিশিষ্ট গবেষক দীপংকর মোহান্তকে সাহিত্য সম্মাননা পদক দেওয়া হয়। তাঁর হাতে সম্মাননা ক্রেস্টের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। পরে সিলেটের বিশিষ্ট শিল্পীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয়।

বক্তব্যে মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটের একটা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। এখানকার সাহিত্য–ঐতিহ্যও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সিলেট সিটি করপোরেশন এখানকার লেখক ও তাঁদের সৃষ্টিকর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে চায়। এ অঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে সিটি করপোরেশন নিরন্তর কাজ করে যাবে। এ ছাড়া এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রথম আলো বন্ধুসভা বইমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের পাঠাভ্যাস বাড়াতে যে ভূমিকা রাখছে, এর গুরুত্ব অপরিসীম।

আয়োজকেরা জানান, সিলেট বইমেলা এবার ১১তম বছরে পড়েছে। ২০১৪ সালে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ মেলার গোড়াপত্তন। এবার ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামের ২৩টি প্রকাশনা সংস্থার পাশাপাশি প্রথম আলো বন্ধুসভার একটি স্টল রয়েছে। মেলায় আলোচনা সভা, লেখক আড্ডা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রতিদিনই নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন চলছে। প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বইমেলা সবার জন্য উন্মুক্ত।

শিক্ষার্থী, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ প্রতিদিন বইমেলায় আসছেন
ছবি: আনিস মাহমুদ

একাধিক পাঠক জানিয়েছেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে আয়োজিত বইমেলার জন্য লেখক, পাঠক ও সাহিত্যানুরাগীরা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করেন। বইমেলার পুরোটা সময় মেলা চত্বরে সবাই আনন্দ-আড্ডায় মেতে ওঠেন। বইকেন্দ্রিক এমন সুবিশাল আয়োজন সিলেট বিভাগে খুব কমই হয়ে থাকে। শিক্ষার্থী, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ প্রতিদিন বইমেলায় আসছেন। বন্ধুসভার আয়োজন হলেও এ মেলাকে সিলেটের সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীরা নিজেদের আয়োজন বলেই মনে করেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।

চলতি বছরের বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থাগুলো হচ্ছে—প্রথমা প্রকাশন, কথাপ্রকাশ, অন্বেষা প্রকাশন, তাম্রলিপি, উৎস প্রকাশন, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, চৈতন্য, বাবুই, নাগরী, বাসিয়া প্রকাশনী, ঘাস প্রকাশন, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন, পাপড়ি, অভ্র প্রকাশন, বুনন প্রকাশন, চন্দ্রবিন্দু, মাছরাঙা প্রকাশন, জসিম বুক হাউস, স্বপ্ন ’৭১, নগর, নোভা বুকস অ্যান্ড পাবলিশার্স, গাঙুর প্রকাশন, প্রিয়জন প্রকাশনী ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

সিলেট বইমেলা আয়োজনে এবার সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন সিলেট বন্ধুসভার সভাপতি অন্তর শ্যাম ও সাধারণ সম্পাদক সমীর বৈষ্ণব। তাঁরা জানান, এবার উদ্বোধনী দিন থেকেই বইমেলা জমে উঠেছে। প্রতিদিন হাজারো সাহিত্যানুরাগী বইমেলায় আসছেন। সামনের দিনগুলোয় মেলা আরও জমে উঠবে। এখন সিলেট বইমেলা সিলেটবাসীর প্রাণের মেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিকেল হতেই মানুষজন প্রাণের আবেগে মেলা প্রাঙ্গণে ছুটে আসেন। বই কেনা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন দুটি সেলফিস্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ছবি তুলে আনন্দ-উচ্ছ্বাস করেন।