বৃষ্টিমাখা সন্ধ্যায় রসালো ফলের উৎসব

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ফল উৎসব শেষে বন্ধুসভার বন্ধুদের একাংশ
ছবি: বন্ধুসভা

বৃষ্টি তখন ঝিরঝির করে নেমে আসছে জানালার কাচ বেয়ে। আকাশ মেঘলা থাকায় বিকেলেই প্রকৃতিতে অন্ধকার নেমে আসে। এমন দিনে খুব একটা জরুরি কাজ না থাকলে কেউ বাইরে বের হতে চান না। ঘরে বসে বিষণ্নতা উপভোগ করতে চান। তবে এমন পরিবেশও বন্ধুসভার বন্ধুদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। বন্ধুসভার দেশীয় মৌসুমি রসালো ফলের উৎসবে অংশ নিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তাঁরা চলে আসেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে।

৯ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হয় প্রথম আলো বন্ধুসভার ফল উৎসব ২০২৫। ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহযোগিতায় উৎসবে অংশ নেন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ ও ঢাকা মহানগরসহ ঢাকার বিভিন্ন বন্ধুসভার বন্ধুরা। বাইরের মেঘ-বৃষ্টি যেমন ছিল ছন্দে ছন্দে, তেমনি উৎসবে ছিল সাহিত্য, সংগীত, শৈশবে ফল খাওয়ার স্মৃতি আর ফলের স্বাদের মেলবন্ধন।

ছবি: বন্ধুসভা

ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাটের সঞ্চালনায় উৎসবের শুরুটা হয় এক মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনায়। রায়গঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধু সিথী মোহন্তর নৃত্যের ছন্দে মুহূর্তেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রাণোচ্ছল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরপরই একক নৃত্য পরিবেশন করেন রায়গঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধু মো. তিতুমীর। উপস্থিত সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভা সব সময় চেষ্টা করে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে। মৌসুমি ফল খাওয়ার উৎসব আয়োজন সেই চেষ্টারই অংশ।

দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন বন্ধু সিথী মোহন্ত ও মো. তিতুমীর
ছবি: বন্ধুসভা

উৎসবে বক্তব্য দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না কেউ–ই। প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক যেমনটা বললেন, ‘এসেছিলাম ফল খেতে, মাইক ধরিয়ে দিয়ে বলল বক্তব্য দিতে। তবু আশায় আছি কর্মের (বক্তব্য) পরেই ফল পাব খেতে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফলের দেশ। বৈচিত্র্যপূর্ণ অসংখ্য ফল রয়েছে। এ সময় তিনি শৈশবে ফল খাওয়া নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন।

বন্ধুদের উদ্দেশে আনিসুল হক বলেন, ‘প্রথম আলোর উদ্দেশ্য বাংলাদেশের জয়। আমরা বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই। সে জন্য বন্ধুসভার বন্ধুদের আগে নিজেদের আলোকিত করতে হবে। নিজে আলোকিত হলে জগৎ আলোকিত হবে।’

আধুনিক বাংলা গান পরিবেশন করেন নজরুলসংগীতশিল্পী নাদিয়া আরিফিন শাওন। তাঁকে হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন বন্ধু তাপসী রায়
ছবি: বন্ধুসভা

উৎসবে উপস্থিত ছিলেন নজরুলসংগীতশিল্পী নাদিয়া আরিফিন শাওন। বৃষ্টিস্নাত দিনে তিনি পরিবেশন করেন আধুনিক গান ‘আকাশ মেঘে ঢাকা’। তাঁকে হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন বন্ধু তাপসী রায়।

অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে ছিল মজার কুইজ প্রতিযোগিতা। এক নিশ্বাসে ২০টি ফলের নাম যিনি বলতে পারবেন, তিনি অগণিত ফল খেতে পারবেন। অনেকেই এতে অংশ নেন। কেউ সফল হতে পারেননি। তবে কবিতার ছন্দে সে চেষ্টায় অনেকটাই সফল হন জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি মাহবুব পারভেজ। পরে তিনি জীবনানন্দ দাশের ‘জল’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। এরপর দ্বৈত নৃত্য নিয়ে আসেন বন্ধু সিথী মোহন্ত ও মো. তিতুমীর। তাঁরা ‘বিহুর তালে কোমর দোলে’ ও ‘বিহুরে লগন’ গানের ছন্দে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক
ছবি: বন্ধুসভা

অবশেষে এল সেই প্রতীক্ষিত মুহূর্ত—ফল খাওয়া। সামনে সাজানো ছিল বাংলাদেশের বাহারি সব ফল। কাঁঠাল, আম, কাঠলিচু, ড্রাগন, খেজুর, পেঁপে, আনারসসহ অন্তত ১৫ রকমের ফল। বন্ধুরা দল বেঁধে ফলের স্বাদে মেতে ওঠেন।

উৎসব শেষে মনে রয়ে যায় এক রসঘন সুর। প্রকৃতি যেমন রস দেয়, তেমনি উৎসব দেয় হৃদয়ের রস। আর এই দুই মিলে গড়ে ওঠে জীবনের আস্বাদ।

অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বুশরা, সহসভাপতি নাঈমা সুলতানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত ও অমিত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক সরকার, দপ্তর সম্পাদক মেঘা খেতান, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক রাজা মান্নান তালুকদার, প্রশিক্ষণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মুন্না, কার্যনির্বাহী সদস্য নাবিলা আমেনাসহ অন্য বন্ধুরা।