আয়োজনটি শুধু গানের

প্রথম আলো ভৈরব অফিসে ভৈরব বন্ধুসভার গানের আসরছবি: নাহিদ হোসাইন

গান আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। গান মনে প্রশান্তি এনে দেয়, দুশ্চিন্তার অবসাদ কমিয়ে মন ফুরফুরে করে তোলে। গানে মন ভালো, আবার কখনো গানেই মন খারাপ হয়।

দিনটি ছিল ১১ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক রাত আটটা। প্রথম আলো ভৈরব অফিস থেকে ভেসে এল ‘আকাশে বাতাসে চল সাথি উড়ে যাই চল, ডানা মেলে রে’ গানটি। মোশারফ রাব্বি ও জান্নাতুল ফেরদৌস গানটি শোনান। তাঁদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা। এর মাধ্যমে ‘বন্ধুর গান’ শিরোনামে সংগীতানুষ্ঠানের সূচনা হয়। সদ্য প্রয়াত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ওস্তাদ রশিদ খানকে গানের আয়োজনটি উৎসর্গ করা হয়। এবারের ষষ্ঠ পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন সভাপতি প্রিয়াংকা ও সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ।

শীতের কনকনে ঠান্ডায় আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে বন্ধুদের মধুর কণ্ঠে গানের আয়োজন জমে উঠেছে। পুরো আয়োজন আমরা সাজিয়েছি রুচিশীল কিছু গান নিয়ে। গান আমাদের কখনো হাসায় আবার কখনো কাঁদায়। শুভেচ্ছা বক্তব্যে এ কথা বলেন সভাপতি প্রিয়াংকা।

‘ভৈরব বন্ধুসভার গানের আয়োজন দ্যুতি ছড়াচ্ছে’
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা

এরপর কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা সিদ্দিকা ও পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোশারফ রাব্বি গেয়ে শোনান জনপ্রিয় গান ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’, বন্ধু আরতী পাল শোনান ‘কী নামে ডেকে বলব তোমাকে’ গানটি।

গানগুলো প্রকাশের পর থেকে আজও শ্রোতাদের হৃদয়ে চিরসজীব হয়ে আছে। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা’ গানটি গেয়ে শোনান কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা সিদ্দিকা। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চন্দ্রকথা’ সিনেমায় গানটি ব্যবহৃত হয়েছে। সানজিদা আরও শোনান ‘আমার আছে জল’ গানটি।

গানের পাশাপাশি চলে আলোচনা পর্ব। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা বলেন, ‘নব্বইয়ের দশক ছিল আমাদের মফস্বল ভৈরবের সাংস্কৃতিক চর্চার স্বর্ণযুগ। ভৈরবের বেশ কয়েকটি সংগঠনের পরিচর্যায় তখন আমরা পেয়েছিলাম বেশ কয়েকজন গুণী শিল্পী। বর্তমানে চর্চার জায়গা যেমন কমেছে, তেমনি শেখার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। সেকাল–একালের ব্যবধানে ভৈরব বন্ধুসভার গানের আয়োজন দ্যুতি ছড়াচ্ছে।’

ভৈরব বন্ধুসভা বছরব্যাপী বেশ কিছু আয়োজন করে। তার মধ্যে গানের আয়োজনের সূচনা হয় ২০২১ সালে। এরপর বেশ কয়েকটি পর্বে গানের অনুষ্ঠান হয় যেমন লোকগানে ঈদ আনন্দ, সিনেমার গান, গান কথায় রবীন্দ্র-নজরুল স্মরণ ইত্যাদি। গানের অনুষ্ঠান নিয়ে বন্ধুসভার বন্ধুদের আগ্রহ-উদ্দীপনা ও দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নিয়মিতভাবে আয়োজনটি করা হচ্ছে।

ভৈরব বন্ধুসভার গানের আসরের ষষ্ঠ পর্ব
ছবি: নাহিদ হোসাইন

গান নিয়ে আরও প্রতিক্রিয়া জানান উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ, সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, সাবেক পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক জান্নাতুল মিশু, জেন্ডার ও সমতা সম্পাদক আফিসা আলী।

উপদেষ্টা ওয়াহিদা আমিন বলেন, ‘আমরা বাংলা ভাষা অর্জন করেছি অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ তরুণ বিদেশি সংস্কৃতিতে মত্ত হয়ে আছে। আমাদের বাংলা ভাষায়ও রয়েছে সুন্দর কালজয়ী গান। আজকের গান ও আনন্দ আড্ডায় প্রিয়মুখগুলোর সঙ্গে দারুণ একটা সময় পার করেছি। চমৎকার এই আয়োজনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোশারফ রাব্বি গেয়ে শোনান সংগীতশিল্পী বালামের জনপ্রিয় গান ‘একাকী মন আজ নীরবে’। সাংস্কৃতিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস শোনান তাহসানের ‘প্রেমাতাল’ ও আর্টসেল ব্যান্ডের ‘এই বৃষ্টিভেজা রাতে তুমি নেই বলে’ গান দুটি। বন্ধু আরতী পাল শোনান ‘যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়’ গানটি। সাবেক সভাপতি নাহিদ হোসাইন শোনান ‘তোমার জন্য নীলচে তারার একটুখানি আলো’ গানটি। মোশারফ রাব্বি শোনান ‘যদি দেখার ইচ্ছা হয়/ তোমার নিঠুর মনে লয়’ গানটি।

জান্নাতুল ফেরদৌস ও আরতী পাল দ্বৈত কণ্ঠে শোনান ‘বকুলের মালা শুকাবে’ ও ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান’। সানজিদা ও মোশারফ রাব্বি দ্বৈত কণ্ঠে শোনান ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমার জনপ্রিয় ‘একদিন স্বপ্নের দিন, বেদনার বর্ণবিহীন’ গানটি। বন্ধুদের সমবেত কণ্ঠে আবারও ধ্বনিত হয় ‘তুমি আমায় ডেকেছিলে এক মেঘে ঢাকা দিনে/ কেন আমি দেইনি সাড়া’ গানটি। একে একে বন্ধুরা ১৬টি গান গেয়ে শোনান।

‘বাংলা গানের সুন্দর দিনগুলো আবারও ফিরে আসুক’
ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি প্রিয়াংকা

অন্যদের মধ্যে কণ্ঠ দেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরফান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আনাস খান, দপ্তর সম্পাদক জিহাদ রহমান, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক জিসান খান, সাবেক পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক জান্নাতুল মিশু, প্রচার সম্পাদক রাসেল রাজ, বইমেলা সম্পাদক প্রাপ্তি ঘোষ, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক রাহিম আহমেদ। বন্ধু অনিক, ফাহিম, অনুপম, সাদিয়া সরকার ও আদিব রহমান।

সভাপতি প্রিয়াংকা বলেন, ‘গান আমাদের মনের খোরাক জোগায়। ভাইরাল, রিমিক্স ও বিদেশি চর্চায় হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা গানের সংস্কৃতি। বাংলা গানের সুন্দর দিনগুলো আবারও ফিরে আসুক আজকের আয়োজনে, এটাই প্রত্যাশা। গান শোনার পাশাপাশি বই পড়তে হবে, মানবিক কাজ করতে হবে।’

সবশেষে—
‘নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধু রে
ধরো বন্ধু, আমার কেহ নাই
ধরো বন্ধু, আমার কেহ নাই
তোলো বন্ধু, আমার কেহ নাই’ গানটিতে কণ্ঠ দেন উপস্থিত সব বন্ধু। এই গানের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় ‘বন্ধুর গান ষষ্ঠ পর্বের’ আয়োজন। পুরো আয়োজনটি ভৈরব বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। সমন্বয় করেন নাহিদ হোসাইন।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা