নাচ-গানে শরৎ উৎসব

ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার শরৎ উৎসবছবি: বন্ধুসভা

বাংলার প্রকৃতিতে এখন মনভোলানো রূপের ঋতু শরৎকাল। শরৎ এলেই দেখা মেলে দূর্বাঘাসে মুক্তোদানার মতো শিশিরবিন্দু, নদীর তীরজুড়ে কাশফুলের শুভ্র এলোমেলো কেশের দোলা, নীল আকাশে পেঁজা তুলার মতো মেঘের দলের। শরতের এমন বৈচিত্র্য বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ‘শরৎ উৎসব’ শিরোনামে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা।

২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঠাকুরগাঁও শহরতলির ফেরসাডাঙ্গী এলাকার টাঙ্গন নদের তীরের কাশবনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে অংশ নেন বন্ধুসভার সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী ও উপদেষ্টারা।

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা তিনটা। শরতের সূর্য তখনো তীব্র গরম ছড়িয়ে চলেছে। এরই মধ্যে বন্ধুরা জড়ো হতে শুরু করেন ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বড় মাঠে। ভেন্যু সাজানো, কেনাকাটা, শব্দযন্ত্র সংগ্রহ, যানবাহন ঠিক করা আগের দিনই সেরে নেন বন্ধুরা।

নৃত্য পরিবেশনা
ছবি: বন্ধুসভা

গাড়ি ছেড়ে যায় পৌনে চারটায়। টাঙ্গন নদের জলরাশি আর নদের ধারের শুভ্র কাশবন নিজেদের দুলিয়ে দুলিয়ে অভিবাদন জানায় বন্ধুদের। সবাই মেতে ওঠে ছবি তোলা আর খুঁনসুটিতে। উৎসবের মঞ্চ আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে থাকা বন্ধুদের তখন অন্যদিকে তাকানোর ফুরসত নেই।

বিকেল সাড়ে চারটায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। বন্ধু মাহফুজা মারিয়ার সঞ্চালনায় সমবেত কণ্ঠে ‘শিউলিতলায় ভোরবেলায়’ গানের মাধ্যমে মূল পর্ব শুরু হয়। সেই সুরের ছোঁয়ায় কাশবনে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা মানুষজন ছুটে আসতে শুরু করেন অনুষ্ঠানস্থলে।

এরপর ‘রাঙা মাটির রঙে চোখ জুড়াল’ সমবেত গানটি পরিবেশন করেন বন্ধুরা। ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’—কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন বন্ধু জয়া রায়। পরিবেশিত হয় বন্ধু প্রীতি রানী বর্মনের কণ্ঠে ‘জাগরণে যায় বিভাবরী’ গানটি। হিমাদ্রি রায়ের ভাওয়াইয়া গান উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে তোলে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া হাসি পরিবেশন করেন ‘আমারও পরানও যাহা চায়’।

নৃত্য পরিবেশনা
ছবি: বন্ধুসভা

গান আর নৃত্যের এক ফাঁকে খুদে শিল্পী অতিথি সরকার সঞ্চালকের কাছে এসে আবদার করে, সে একটি নৃত্য পরিবেশন করবে। তার আবদার ফেরাতে পারলেন না সঞ্চালক। সুযোগ পেয়ে অতিথি সরকার ‘সুন্দরী কমলা নাচে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করে। তারপর মঞ্চে আসে অবন্তিকা সরকার। সে ‘ও বাঁশি কেন গায়’ গানের ছন্দে নৃত্য পরিবেশন করে। সমবেত কণ্ঠে ‘আবার জমবে মেলা’ গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

এর ফাঁকে বন্ধুরা অতিথিদের সামনে নাড়ু, খই, মুড়ি, মুড়কি, জিলাপি, সন্দেশ, বাতাসা, মোয়াসহ নানা পদের শুকনা খাবারের থালা সাজিয়ে রাখেন।

উপদেষ্টা ডা. শুভেন্দু কুমার দেবনাথ বলেন, ‘প্রথম আলোর বন্ধুসভা সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়ে এ সমাজের জন্য অনুরূপ কাজ করার প্রেরণা পাই। ষড়্‌ঋতুর এই বাংলাদেশে ঠাকুরগাঁওয়ে আমরা পয়লা বৈশাখ, বসন্ত উদ্‌যাপন করি। কিন্তু শরৎ উৎসব খুব একটা দেখা যায় না। বন্ধুসভার এ আয়োজনটি ভালো লেগেছে।’

ছিল নাড়ু, খই, মুড়ি, মুড়কি, জিলাপি, সন্দেশ, বাতাসা, মোয়াসহ নানা পদের শুকনা খাবার
ছবি: বন্ধুসভা

সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এবারের শরৎ উৎসব ছোট পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। বন্ধুদের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি টান জাগিয়ে তুলতে কাশবনের মাঝে উৎসবটি আয়োজন করা।’

উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শিহাব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া হাসি ও আজিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক রাদ শাহামাদ, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক এম মারুফ হাসান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক সিয়ামুর রশিদ, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মিথিলা আক্তার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক তপু রায়, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, প্রচার সম্পাদক এস এম আলিফ, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক সিফাতুল সাদ, বন্ধু এন্তাজ আলী, মারজান, প্রাপ্তি সারোয়ার, আল নাফিস, তাকিয়া, রিফাত হোসেনসহ অন্য বন্ধুরা।

সাধারণ সম্পাদক, ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা