মায়েদের ভালোবাসায় রঙিন বিকেল

রাজশাহী বন্ধুসভার উদ্যোগে মা দিবসের অনুষ্ঠানে মায়েদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন সন্তানেরাছবি: বন্ধুসভা

রাজশাহী বন্ধুসভার প্রবীণ সদস্য আমিনা আনসারি। তিনি স্বামীকে ছাড়া একাই দুই সন্তানকে স্নেহ–যত্নে গড়ে তুলেছেন। তিনি তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘আমার মাত্র ৯ বছর বয়সে বাল্যবিবাহ হয়ে যায় এবং ১৪ বছর বয়সে সন্তান হয়। এমন একসময় মা হয়েছি, যখন নিজেই মা শব্দটার অর্থ বুঝতাম না। এরপরও সব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দুই সন্তানকে মানুষ করেছি। এখন তারা বড় হয়েছে। এখন আমার কিছু হলে তারাই আমার দেখাশোনা করে।’

বিশ্ব মা দিবস—মাকে স্মরণ করার ও কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন। যদিও ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য এই একটি দিনের সীমা যথেষ্ট নয়, তবু দিনটিকে ঘিরে মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশ করতে বিশেষ আয়োজন করেছে রাজশাহী বন্ধুসভা। ১১ মে বিকেলে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ভবনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকা সোনালী।

রাজশাহী বন্ধুসভার উদ্যোগে মা দিবসের অনুষ্ঠানে মায়েদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন সন্তানেরা।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মায়েদের একে একে মঞ্চে ডেকে নেন সঞ্চালক। এ সময় সন্তানেরা তাঁদের মাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এবং বলেন, ‘মা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি’। মুহূর্তটিকে রাঙিয়ে দিতে সহসাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খালি গলায় পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাকে নিয়ে লেখা, ‘যখন এমন হয়, জীবনটা মনে হয় ব্যর্থ আবর্জনা’ গানটি গেয়ে শোনান। মেয়েকে নিয়ে লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন কবি দিপালী রানী সরকার।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার বলেন, ‘মা হওয়ার চেয়ে বড় কোনো অনুভূতি হতে পারে না। সব সময় নিজেকে একজন মা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। একসময় নিজে কতটা সফল হয়েছি, এটা ভেবে ভালো লাগত। এখন মনে হয়, যেদিন আমার সন্তান সফল হবে, সেদিন আমার ভালো লাগাটা হবে সবচেয়ে বেশি।’

রাজশাহী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী জেসমিন খাতুন। গত বছর অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পরিবার থেকে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সে তার বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে বিয়েটা ভেঙে দেয়। জেসমিন খাতুন বলে, ‘মা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। পড়াশোনার সময় পাশে বসে থাকে। যদিও মা বেশি লেখাপড়া শেখেনি, তবু আমাকে বুঝতে চেষ্টা করে।’

আসিফা আশরাফি প্রথমবারের মতো মা হয়েছেন। তাঁর এক বছরের বাচ্চাটিকে অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই চঞ্চলতায় খুব ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘যখন প্রথম ওকে কোলে নিলাম, বুঝতে পারিনি জীবন এমন বদলে যাবে। এখন ও এক বছর বয়সী, চঞ্চল, একটুও স্থির নয়। ঘরজুড়ে ও দৌড়ে বেড়ায়, হাসে, ডিগবাজি খায়। আর আমি? আমি এখন ওর সঙ্গেই ডিগবাজি মারি, হামাগুড়ি দিই, শুধু যাতে ওর চোখে একটুখানি আনন্দ দেখি। মাঝেমধ্যে ভুলেই যাই, আমি যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ! এই শিশুমনটা আমাকে আবার জীবন্ত করে তুলেছে।’

মা দিবসে রাজশাহী বন্ধুসভার আয়োজন।

গত বছরের অক্টোবরে মাকে হারিয়েছেন প্রথম আলো রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। তিনি বলেন, ‘মা থাকলে সবকিছু সহজ মনে হয়, জীবনের কষ্টগুলোও তখন সহনীয় হয়ে যায়। আমার আর মায়ের মধ্যে এমন কিছু কথা ছিল, যেগুলো শুধু আমরা দুজন জানতাম। ছোটবেলায় যখন কোনো কারণে কাঁদতাম, তখন মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন। আজ বুঝি, মা না থাকলে পৃথিবী কতটা খালি হয়ে যায়।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারুক হোসেন, কবি কাবিরি সাহা, কবি মোস্তাক রহমান, রাজশাহী আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন, রাইজিং বিডি ডটকমের প্রতিনিধি শিরিন সুলতানা, আজকের পত্রিকা–এর নিজস্ব প্রতিবেদক রিমন রহমান, প্রথম আলো রাজশাহী প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাজিদ হোসেন, রাজশাহী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা আক্তারসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত মায়েদের হাতে উপহার তুলে দেন সন্তানেরা।

সহসভাপতি, রাজশাহী বন্ধুসভা