‘আমাদের জীবনে প্রতিকূলতা আসবেই। তবে জীবন থেকে পালানো যাবে না। প্রতিদিন অন্তত একবার করে নিজেকে ধন্যবাদ দিতে হবে। এতে মনের যত্ন নেওয়া হবে, মন পরিষ্কার হবে। পরিষ্কার হৃদয় কখনো আত্মহত্যা করে না।’
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে সচেতনতামূলক বিশেষ সেমিনারে এ কথা বলেন মনোরোগ চিকিৎসক ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল। ১০ সেপ্টেম্বর ‘যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু’ শিরোনামে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। বেলা তিনটায় শুরু হয়ে সেমিনার চলে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত।
দিনের কর্মসূচি শুরু হয় প্রথম আলোর কর্মীদের আত্মহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিজ্ঞা করানোর মধ্য দিয়ে। বন্ধুসভার বন্ধুরা প্রথম আলো কার্যালয় ঘুরে ঘুরে প্রতিটি কর্মীকে আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে কমলা রঙের রিবন পরিয়ে দেন। বিকেলে সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদেরও পরিয়ে দেওয়া হয় রিবন এবং সঙ্গে দেওয়া হয় একটি করে চিরকুট। চিরকুটে লেখা ছিল ‘আমি সক্ষম’, ‘আমি গ্রহণযোগ্য’, ‘আমি ভলোবাসার যোগ্য’ ও ‘আমি যেমন আছি তেমনই ঠিক আছি’। প্রতিটি চিরকুটে অনুপ্রেরণামূলক এই বাক্যগুলো একটি করে ছিল।
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার ম্যাগাজিন সম্পাদক আশফাকুর রহমানের সঞ্চালনায় শুরুতেই অ্যান্ড্রু কিশোর ও কনকচাঁপার ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটি গেয়ে শোনান অর্থ সম্পাদক অনিক সরকার। এরপর অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের হাতে থাকা চিরকুটের লেখা নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য একটি অনুশীলন করান সাইকোথেরাপিস্ট ও কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিনা বুশরা।
এ সময় অংশগ্রহণকারী অনেকেই নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। মারজান আহমেদ বলেন, ‘ডিপ্রেশন নিয়ে একসময় হাসাহাসি করতাম। কিন্তু একবার পরীক্ষার জন্য চার মাস বাড়িতে যেতে না পেরে নিজেই ডিপ্রেশনে নিমজ্জিত হই।’
লামিয়া আফরোজ বলেন, ‘মাঝেমধ্যে খুব হীনম্মন্যতায় ভুগি। পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে মনে হয় আমি ভালোবাসার যোগ্য নই।’
অনুশীলন পর্ব শেষে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডা. পৌলমি অদিতি অন্তরা গেয়ে শোনান হাবিব ওয়াহিদ ও ন্যান্সির গাওয়া ‘দ্বিধা’ শিরোনামের গানটি। গানের কথায় উল্লিখিত আমাদের ভেতর ও বাইরের দ্বন্দ্বগুলো নিয়ে কথা বলেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বুশরা। আত্মহত্যাপ্রবণতা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করার এক পর্যায়ে তিনি শোনান নিজের জীবনে আত্মহত্যার অভিপ্রায় থেকে বেঁচে ফেরার গল্প।
কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা সবাই বাঁচব, যেকোনো পরিস্থিতিতে বাঁচতে হবে। যারা আত্মহত্যার হুমকি দেয় তাদেরকে প্রশ্রয় না দিয়ে, আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি মানুষ তার নিজের মতো। প্রতিটি জীবনই সফল। আমাদের আশপাশে যাদের মন খারাপ তাদের সবার কথা শুনতে হবে।’
বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. রেদোয়ান মাহমুদ রেজা বলেন, ‘অনেক সময় মনে হয়, জীবন এখানেই শেষ। কিন্তু জীবন তো নিজের জন্য। নিজের জন্যই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুল হাসান বলেন, ‘আমরা একে অপরকে ভালোবাসব, নিজেকে ভালোবাসব। ভালোবাসা বাঁচতে শেখায়।’
অংশগ্রহণকারী বন্ধু নোমান শেখ বলেন, ‘আমি কিছুদিন ধরে খুব হতাশায় ছিলাম। আজকের সেশনটির পর নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছি।’
সেমিনার শেষে অংশগ্রহণকারী সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান মাহমুদা মুহসিনা বুশরা। শপথের পর কক্ষে টানানো বোর্ডে সবাই পুনরায় নিজেদের প্রতিজ্ঞার কথা লিপিবদ্ধ করেন।
অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়নে সমন্বয় করেছেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি সাফিন উজ জামান, সাধারণ সম্পাদক নাঈমা সুলতানা, অর্থ সম্পাদক অনিক সরকার, দপ্তর সম্পাদক মেঘা খেতান, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক শারমিন আরা তৃষা ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শেখ কাব্য।
সহসভাপতি, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা