‘কবি নজরুল একজন অসম্ভব রকমের অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। তিনি সাহিত্যের মধ্য দিয়ে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কথা বলেছেন। এ কারণে তিনি সর্বজনস্বীকৃত। নজরুলের চিন্তাভাবনা আমাদের মধ্যে ধারণ ও লালন করতে হবে। তাহলে আমরা সমৃদ্ধ হব।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার আয়োজনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় এ কথা বলেন উপদেষ্টা আশফাকুজ্জামান। ২৬ মে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ শিরোনামে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদ ও ঢাকার বিভিন্ন বন্ধুসভার বন্ধুরা।
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মুন্নার সঞ্চালনায় শুরুতেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন বন্ধুরা। সভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বলেন, ‘নজরুলের প্রতিটি গান–কবিতা তারুণ্যকে জাগিয়ে তোলে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অনুপ্রাণিত করে।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, সংগীতশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা ও উপস্থাপক রুহানী সালসাবিল লাবণ্যের উপস্থিতি। আনিসুল হক বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম খুব অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। তিনি সব সম্প্রদায়ের মিলন চাইতেন, সাম্য চাইতেন।’
সংগীতশিল্পী কনা বলেন, ‘নজরুল একাডেমিতে আমি গান শিখেছি। নজরুলের গানের প্রতি আমার বিশেষ ভালো লাগা আছে।’ এ সময় নজরুলসংগীত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ গেয়ে শোনান তিনি।
উপস্থাপক রুহানী সালসাবিল বলেন, ‘এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য। প্রেম-বিদ্রোহ একজনের লেখাতেই সহাবস্থান করতে পারে, তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম।’
নজরুলকে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি চলতে থাকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্রথমে একক ও পরে দ্বৈতভাবে নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন বন্ধু সংবর্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঢাকা মহানগরের কাভী সিকান্দার। একক কবিতা আবৃত্তি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বর্ণিক বৈশ্য, ঢাকা মহানগরের আশফাক আদি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার ইফাদ হাসান।
দুটি নজরুলগীতি গেয়ে শোনান বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পৌলমি অদিতি। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন ধাঁচের গান শিখলেও বেশির ভাগ সময় নজরুলসংগীতই গাওয়া হয়। এখনো সেই চর্চা অব্যাহত রয়েছে।
গান-কবিতার বাইরেও নজরুলের অন্যান্য সৃষ্টি নিয়ে আমাদের চর্চা করা উচিত বলে মনে করেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে নজরুলের প্রবন্ধ অনেক শক্তিশালী। যেখানে সাম্যবাদ, মানবিকতা, নারীর অধিকার, অসাম্প্রদায়িকতা, শ্রেণিবৈষম্য নিয়ে কথা বলেছেন।’
অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক সরকার ও দপ্তর সম্পাদক মেঘা খেতান।