‘বন্ধুসভা বন্ধুদের সংগঠন, মানুষের সংগঠন, তরুণদের সংগঠন। বন্ধুসভা এমন তরুণদের সংগঠন, যে তরুণেরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চায়। যাঁরা বাংলাদেশকে ভালোবাসে, বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসে; সত্য কথা বলতে চায়, ভালো কাজ করতে চায়, সুন্দর হতে চায়। সংস্কৃতি-ভাষা—এ সবকিছুকে আরও উন্নত করতে চায় এবং নিজেরা ভালো হওয়ার মধ্য দিয়ে অন্যদের ভালো করতে চায়।’
১১ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে প্রথম আলো বন্ধুসভার ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি আব্দুন নুর তুষার। এ সময় বাংলাদেশের জন্য কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে কীভাবে একদল তরুণ প্রথম আলো ও বন্ধুসভা গঠন করেছিল, সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘আনিস ভাই (আনিসুল হক) সব সময় বলেন, রাগ করবেন না, হাসিমুখে থাকবেন এবং কখনো হিংসা করবেন না। হিংসা মানেই হচ্ছে নিজেই নিজেকে পোড়ানো। যার প্রতি হিংসা করছ, সে কিন্তু পুড়ছে না। ছোট ছোট জিনিস বড়রা শেখায়।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যাঁরা জীবন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন, তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। টিআইবির সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী শপথ আর নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে ‘তরুণোদয়ের নতুন আলোয়’ স্লোগানে এ অনুষ্ঠানে সারা দেশের অন্তত ৫৫টি বন্ধুসভার চার শতাধিক বন্ধু ও সুহৃদ অংশ নেন। বেলা আড়াইটায় শুরু হয়ে আলোচনা পর্ব, বন্ধুসভার বন্ধুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং নকশিকাঁথা, তরুণ ব্যান্ড ও বাংলা ফাইভের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে রাত ৮টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়।
আয়োজনে বৃক্ষরোপণ ও সহমর্মিতার ঈদ কার্যক্রমে সারা দেশের সেরা ২০টি বন্ধুসভাকে দেওয়া হয় সম্মাননা। আরও ১০টি বন্ধুসভাকে দেওয়া হয় সেরাদের সেরা স্বীকৃতি। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভালো কাজের প্রতিযোগিতায় তিনটি বন্ধুসভাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
বন্ধুসভার বন্ধুদের দুর্নীতিবিরোধী শপথ পাঠ করান টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এত দিন বন্ধুসভা সম্পর্কে কেবল ধারণা ছিল। আজ যা দেখলাম, তাতে নিজে অত্যন্ত সমৃদ্ধ হলাম। আমরা জানি, প্রথম আলো ভালো কাজের সঙ্গে থাকে। আর আপনারা সেই ভালো কাজ দেশব্যাপী করছেন।’
বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক ও নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌর সঞ্চালনায় বন্ধুসভার বছরব্যাপী কার্যক্রম নিয়ে কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক। সেই বিবরণী দেখে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা মনে হয় ঘুমায়ও না, খায়ও না; সারা দিন কাজই করে আর কাজই করে। আপনারা আছেন বলেই বাংলাদেশ হবে। আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নাই।’
আনিসুল হক আরও বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই লড়তে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে শপথ নিলাম, এটা যেন শুধু কথার কথা না হয়। এটার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের কথা আছে, বৈষম্যবিরোধী চেতনার কথাও আছে। আশা করি, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ পাব; যেটা দুর্নীতিমুক্ত হবে, সুনীতিসম্পন্ন হবে।’
‘আমরা যদি শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা করি, সেটা কিন্তু এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটা লড়াই। অন্ধকারের বিরুদ্ধে কিন্তু আপনি তরবারি দিয়ে লড়াই করতে পারবেন না। অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটাই উপায়, সেটা হচ্ছে আলো জ্বালানো,’ যোগ করেন তিনি।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমিন বলেন, ‘আজকে বন্ধুসভার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ২৬ বছর। প্রথম আলোরও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ২৬ বছর হলো। আমরা মনে করি প্রথম আলো ও বন্ধুসভা—এ দুটি এক, দুটো আলাদা নয়। সে জন্য আমার মনে হয় না যে প্রথম আলোর কোনো মানুষ বন্ধুসভাকে আলাদা মনে করে। বন্ধুসভাও মনে করে না প্রথম আলো আলাদা কিছু। দুটো দুরকম সংগঠন হয়তো; একটা সাংবাদিকতা করে, আরেকটা নিঃস্বার্থভাবে অন্যের জন্য কাজ করে। নিঃস্বার্থভাবে অন্যের জন্য কাজ করা মানুষের সংখ্যা সমাজে দিন দিন কমছে। সেখানে বন্ধুসভা এটা ২৬ বছর ধরে করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও করবে। এখানে যে ছেলেমেয়েরা আসে, তাঁরা নিজেকে তৈরি করতেও আসে। ভালো বই পড়া, ভালো গান শোনা, ভালো চলচ্চিত্র দেখা এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অন্যের বিপদে কালমাত্র বিলম্ব না করে ঝাঁপিয়ে পড়া। বন্ধুসভাকে কেউ কখনো হারাতে পারবে না। বন্ধুসভা সব সময় মানুষের পাশে থাকে বলেই মানুষও বন্ধুসভার পাশে থাকে।’
বন্ধুসভাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চরকির সিওও রেদওয়ান রনি বলেন, ‘চরকি শিশু, আর বন্ধুসভা তরুণ। চরকি তার জন্মলগ্ন থেকে বন্ধুসভার পাশে আছে। ২০২১ সাল থেকে নানা কাজের মাধ্যমে বন্ধুসভার সঙ্গে আমাদের পথচলা অব্যাহত আছে। আমরা বিশ্বাস করি, বন্ধুত্বের যে শক্তি—এর চেয়ে বড় কিছু আর হয় না।’ এ সময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বন্ধুসভার বন্ধুদের চরকির পক্ষ থেকে ১০ দিনের ফ্রি সাবস্ক্রিপশন উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। ওই দিনই সবাই তা পেয়ে যান।
বন্ধুসভাকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাতে আসেন অভিনেতা শাওন জামান ও অভিনেত্রী দীঘি। শাওন জামান বলেন, ‘বন্ধুসভার ২৬ বছর, আমি আজ স্টেজে দাঁড়িয়ে আছি; মনে হচ্ছে এটা আমার জন্য বিশাল পাওয়া।’ দীঘি বলেন, ‘বন্ধুসভায় আজ আমি প্রথমবার এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে।’
একটা কথা সব সময় প্রচলিত আছে—যাঁরা একবার বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত হয়, তাঁরা সারা জীবন বন্ধু হয়ে থাকেন। সেই প্রাণের টানে অনুষ্ঠানে এমন অনেক বন্ধু এসেছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন সংগঠনটির সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে এ বি এম জাবেদ সুলতান, আশফাকুজ্জামান, খাইুরুল বাবুই, রুহুল আমিন রনি, সাজেদ ফাতেমী, বায়েজিদ ভূঁইয়া জুয়েল, হাসান মাহমুদ, আনিকা তাসনিম, সেঁজুতি ভৌমিক, জুয়েল কুমার ঘোষ, নর্মদা মিথুন, শেখ আল মামুনসহ আরও অনেকেই উপস্থিত হন। বন্ধুসভার সঙ্গে পথচলার অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচারণা করেন তাঁরা।
অনুষ্ঠানে লাইফস্টাইল সহযোগী ছিল টুয়েলভ ক্লদিং, রিফ্রেশমেন্ট সহযোগী ইস্পাহানি, এন্টারটেইনমেন্ট সহযোগী চরকি ও নিউট্রিশন সহযোগী হিসেবে ছিল নিউট্রিপ্লাস।