বর্ষার মৌসুম চললেও রাজধানীতে দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। কিছু কিছু স্থানে দেখা মিললেও তা ক্ষণিকের জন্য। অন্যদিকে আবহাওয়া দিনকে দিন উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হচ্ছে। গত ৩১ জুলাই সকাল থেকেও ঢাকার আকাশে এই মেঘ তো এই রৌদ্র। তবু বৃষ্টির দেখা মিলছিল না। এমন আবহাওয়ার মধ্যেই সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে শুরু হয় ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বর্ষাকে বরণ করে নেওয়ার অনুষ্ঠান ‘এসো কর স্নান নবধারা জলে’।
বন্ধুরা বর্ষার প্রকৃতি রূপ নীল আর সাদা রঙে সেজে আসেন। নারীরা পরেন নীল-সাদা শাড়ি আর ছেলেদের শরীরে শোভা পায় একই রঙের পাঞ্জাবি। যাঁরা শার্ট বা টি-শার্ট পরে আসেন, তাঁদের পোশাকেও একই রং শোভা পায়। প্রকৃতি বন্ধুদের এমন সাজ দেখেই হয়তো উৎসব চলাকালে ধরণিতে বৃষ্টি নামিয়ে দিল!
কেবল পোশাকের সাজই নয়, বন্ধুদের পরিবেশন করা গান, কবিতা আবৃত্তিও ছিল বৃষ্টিময়। উৎসবের শুরু হয় বন্ধু হাসান সালেহ্ জয়ের কণ্ঠে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা ‘চিরদিনের’ ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘তোমারে পড়িছে মনে’ কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে। এরপরই ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধু খাদিজা জান্নাত পরিবেশন করেন জয় গোস্বামীর ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’ কবিতাটি।
বর্ষার দিনে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে কার না ইচ্ছা করে! ইচ্ছা করে কেউ একজন পাশে থাকুক, সারাটা বিকেল পাশে বসে গল্প করুক— সঞ্চালক ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক সাইমুম মৌসুমী বৃষ্টি যখন এভাবে নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছিলেন, ঠিক তখনই গিটারের সুরে গান নিয়ে হাজির হন মিরপুর বন্ধুসভার আতাউল মুনিম। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘এই মেঘলা দিনে একলা/ ঘরে থাকে না তো মন’ গানে মুগ্ধতা ছড়ান তিনি। সবাই যেন কল্পনায় হারিয়ে যান নিজের পছন্দের মানুষটির সঙ্গে।
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি হাসিনা মোস্তাফিজ বলছিলেন, বর্ষার সৌন্দর্য একেকজনের কাছে একেক রকম। বাচ্চাদের কাছে বৃষ্টিতে ফুটবল নিয়ে মাঠে খেলতে যাওয়া, বড়দের কাছে বৃষ্টিতে ভেজাটাই যেন মুখ্য। কেউ কেউ প্রিয় মানুষের সঙ্গে বসে সময় উপভোগ করা পছন্দ করেন। আবার কারও কাছে গরম–গরম খিচুড়ির সঙ্গে বেগুনভাজি কিংবা মাংস দিয়ে খেতে ভালো লাগে। কেবল অনুভূতি ব্যক্ত করেই থেমে থাকেননি তিনি। বন্ধুদের আবদারে শুনিয়েছেন রবীন্দ্রসংগীত ‘বরিষ ধরা–মাঝে শান্তির বারি’।
এরপর কবিতা আবৃত্তি করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার উপদেষ্টা মাহবুব পারভেজ ও জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায়। উত্তম রায় কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘উল্লেখযোগ্য স্মৃতি’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান। গান পরিবেশনা করেন বন্ধু হৃদয় সৈকত। ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’ ও ‘আজ শ্রাবণের বাতাস বুকে’ গান দুটি গেয়ে শোনান তিনি। হৃদয় সৈকত এবার চ্যানেল আইয়ের ‘সেরা কণ্ঠ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। বন্ধুদের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি বন্ধুদের সঙ্গে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সেই সঙ্গে সবাইকে বৃষ্টি ও বর্ষার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের যেখানেই যাচ্ছি, সচিবালয় কিংবা বিচারকদের কাছে; কেউ না কেউ এসে বলে যে আমি বন্ধুসভা করেছি। এর দ্বারা বোঝা যায় বন্ধুসভা বৃথা যায়নি।’
শেষ দিকে মিরপুর বন্ধুসভার বন্ধুদের র্যাম্প প্রদর্শনী উৎসবকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলে।