‘যেকোনো অবস্থায় নিজেকে ভালোবাসতে হবে’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনে অনুষ্ঠিত রাবি বন্ধুসভার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনারে আলোচনা করেন সাইকোথেরাপিস্ট ও কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিনা বুশরাছবি: বন্ধুসভা

‘আমরা যা কিছুই করি, সবকিছুর চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে ভালো থাকা। সব সময় নিজেকে প্রায়োরিটি দিতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে। কোনো ভুল করলে আগে নিজেকে ক্ষমা করতে হবে। কিন্তু কখনো কখনো সামগ্রিক পরিস্থিতি ও প্রতিবেশের নানা ঘটনা জীবনে চলার পথকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করে, যা সাংঘর্ষিকভাবে আবির্ভূত হয় মানসিক অসুস্থতা রূপে। সেই পারিপার্শ্বিকতা বা পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি, যা নিত্যদিনের কাজকে ব্যাহত করে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আত্মনিমগ্ন হওয়া, প্রকৃতির আনুকূল্যে সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি নিজে ভালো থাকা ও চারপাশকে ভালো রাখার জন্য সেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করাটা জরুরি। তবেই আমরা ভালো থাকব।’

রাবি বন্ধুসভার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনারে এ কথা বলেন ঢাকা সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের সাইকোথেরাপিস্ট ও কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিনা বুশরা। ২৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো, যেমন মন ও মানসিক স্বাস্থ্য, পরীক্ষার ভয় এবং লার্নিং ডিজেবিলিটিস, ক্যারিয়ার ভাবনাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

রাবি বন্ধুসভার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার
ছবি: বন্ধুসভা

সেমিনারে মাহমুদা মুহসিনা বুশরা উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় তিনি নিয়মিত মানসিক চর্চা অব্যাহত রাখার ব্যবহারিক পদ্ধতি শেখান এবং সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর দেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসিক রোগ নিরাময়ে, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনে একজন মানুষ ও একজন শিক্ষার্থী হিসেবে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, এ নিয়ে আলোচনা করেন।

রাবি বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক রহিমা সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে আরও ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা মো. আমিরুল ইসলাম। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য, মানসিক চাপ, প্রতিকার ও প্রতিরোধে নিয়ম মেনে খাওয়া, ঘুম থেকে জাগা বা বিছানায় যেতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের নিয়মিত যত্ন নেওয়ার বিষয়টিতে বেশি গুরুত্বারোপ করেন। মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সেমিনার শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের ও আশপাশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করবে। রাবি বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য।’

সেমিনারে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন
ছবি: বন্ধুসভা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মৌ রানী অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘বন্ধুসভার এই প্রোগ্রামে এসে নতুন কিছু জানতে পেরেছি। যেকোনো অবস্থায় নিজেকে ভালোবাসতে হবে। কোনো কিছুতে ভুল করলে রেগে না গিয়ে নিজেকে ক্ষমা করতে হবে। এ বিষয়গুলো সব সময় মনে থাকবে।’

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘কিছুদিন ধরে এক অজানা কারণে মন খারাপ থাকে। রাবি বন্ধুসভার এই প্রোগ্রামে এসে মন ভালো হয়ে গেল। আশা করি, এই সেমিনার শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের ও আশপাশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করবে।’

সেমিনার শেষে অংশগ্রহণকারীরা
ছবি: বন্ধুসভা

রাবি বন্ধুসভার সভাপতি তুহিনূজ্জামান বলেন, ‘সাধারণত অন্যান্য অসুস্থতা সবাই অনুভব করতে বা দেখতে পারে। কিন্তু মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে কেবল একজন বিশেষজ্ঞই পারে চিহ্নিত করে তা নিরাময়ের ব্যবস্থা করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা তৈরিই আমাদের আজকের সেমিনারের উদ্দেশ্য। আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের ভালো কাজের সঙ্গে থাকব এবং বন্ধুসভাকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার উপদেষ্টা সারিকা তাসনিম, ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল হাসান, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার দপ্তর সম্পাদক মেঘা খেতান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে রাবি বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি সুরুজ সরদার, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি মীর আলআমিন, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক রিয়াদ খাঁন, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মৌ রানীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক, রাবি বন্ধুসভা