সকাল থেকে হালকা বৃষ্টি চারপাশের পরিবেশকে করে তোলে স্নিগ্ধ ও মনোরম। বৃষ্টির পর বিকেল চারটায় যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা আয়োজিত ফল উৎসব-২০২৪ শুরু হয়, তখন আকাশে মৃদু মেঘের ছায়া আর বাতাসে ছিল বৃষ্টির সতেজতা।
২৯ জুন ‘দেশীয় ফলের স্বাদে, উৎসবে মাতি সবার সঙ্গে’ স্লোগানে উজ্জীবিত ফল উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে।
অনুষ্ঠানে ছিল বাঙালি সাজসজ্জার বিশেষ আকর্ষণ। চাটাইয়ের ব্যানার, খড়ের বাড়ি, কুলায় রঙিন আর্ট ও হরেক রকম ফলের প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। দেশীয় ফলের বৈচিত্র্যময় রূপ ও স্বাদ উপস্থাপন করার জন্য এ উৎসব।
উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেক দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল। ফলের গুণাগুণ ও পুষ্টিমান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা দেশীয় ফলের স্বাদে মুগ্ধ হয়ে উৎসবের প্রশংসা করেন এবং এ রকম আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান। ফল উৎসবে দেশীয় লটকন, আমড়া, আমলকি, চামফল, ডেউয়া, লাল ও সাদা জামরুল, বেতফল, বাঙ্গি, আনারস, পেয়ারা, আম, কাঁঠাল, জাম, কামরাঙা, ডালিমসহ নানা ফল ছিল।
জাবি বন্ধুসভার সভাপতি সুমাইয়া জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে জন্মে আমরা সৌভাগ্যবান যে এমন রঙিন গ্রীষ্মকাল পাই, এত রকমের দেশি ফল উপভোগ করতে পারি। কিন্তু যদি আমরা পরিবেশ রক্ষার জন্য সোচ্চার না হই, তাহলে গাছ বাঁচবে না। গাছ না বাঁচলে এই যে হরেক রকম দেশি ফল পাব না, পাখি আসবে না। সবাইকে পরিবেশ রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। এবার ‘বঙ্গবন্ধু বন্য প্রাণী সংরক্ষণ পুরস্কার-২০২৩’ পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল আজিজ ও ‘পরিবেশ পদক-২০২৩’ পেয়েছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মনোয়ার তুহিন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, দেশীয় অনেক ফলই আজ বিলুপ্তপ্রায়। আবার অনেকেই দেশি ফল চেনেন না। ফল উৎসব শিক্ষার্থীকে ফল চেনানোর একটি উপায় হতে পারে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ এমন সচেতনতামূলক একটি প্রোগ্রাম আয়োজন করার জন্য। পরিবেশ ও গাছ সংরক্ষণে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ মনোয়ার তুহিন বলেন, ‘বর্ষাকাল এলে শুধু গাছ লাগালেই হবে না; বরং ট্রি-নার্সিং করতে হবে। সবাই মিলে যদি গাছের যত্ন না নিই, গাছও একসময় আমাদের আর ফল দেবে না। আমাদের বেশি বেশি দেশি ফল খেতে হবে এবং বিদেশি ফল খাওয়া বাদ দিতে হবে।’
ফল খাওয়া ও প্রদর্শনী ছাড়া ছিল মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক আয়োজন, যা দর্শকদের মন জয় করে নেয়। প্রতিটি গান ও নাচ বাংলা লোকগীতিতে ছিল। এ ধরনের আয়োজন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশীয় ফলের প্রতি ভালোবাসা ও সচেতনতা তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আয়োজকেরা আশাবাদী। উৎসবের আহ্বায়ক ছিলেন প্রশিক্ষণ সম্পাদক মৃদুল পাল।
প্রশিক্ষণ সম্পাদক, জাবি বন্ধুসভা