আবহমানকাল ধরে পরম্পরাগত চর্চিত মানুষের সাংস্কৃতিক প্রয়াসগুলো লোকসংস্কৃতির চর্চার কেন্দ্রে রয়েছে। সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান তথা নৃত্য, গান, কলা, বাচিকসহ সব পরিবেশনামূলক কলাই মানুষকে সুসংহত রাখে শুদ্ধতার মলাটে। এই সংস্কৃতির মলাট মানুষকে দূরে রাখে সব অন্যায়, অরাজকতা ও মাদকতার বেড়াজাল থেকে। আর তরুণ প্রাণ উজ্জীবিত থাকে সুষ্ঠু ধারার সংস্কৃতির ছাঁচে।
সংস্কৃতি, শিক্ষা, ঐতিহ্য, সাহিত্যের চারণভূমি ময়মনসিংহ। ব্রহ্মপুত্রের কলতানের মতোই মুখরিত থাকে এ অঞ্চলের তারুণ্যের স্পন্দন। এ অঞ্চলের তরুণদের কাছে প্রথম আলো বন্ধুসভা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পরিচিত একটি সংগঠন।
বছরব্যাপী মুখরিত থাকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সব কটি বন্ধুসভা। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ সেপ্টেম্বর বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের আয়োজনে এবং ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন্ধু উৎসব ২০২২।
ময়মনসিংহ শহরের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি মিলনায়তনে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী এ উৎসবে অংশ নিয়েছেন ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঈশ্বরগঞ্জ, নালিতাবাড়ী, সরিষাবাড়ী, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা ও জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের প্রায় ৩০০ বন্ধু।
উৎসবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল সাংস্কৃতিক পর্ব। এ পর্বের সূচনা হয় জাককানইবি বন্ধুসভার জয়ন্তী, রিংচি, আমিনা ও জয়ার টাপাটিনি গানে দলীয় আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এরপর ময়মনসিংহ বন্ধুসভার দেলোয়ার হোসেন তিনটি আধুনিক গান গেয়ে শোনান। জমজমাট গানের পর স্নিগ্ধ আবহ তৈরি করতে মঞ্চে পরপর উপস্থিত হন শেরপুর বন্ধুসভার সোহাগী আক্তার ও ঈশ্বরগঞ্জ বন্ধুসভার জাহিদ হাসান। তাদের কবিতা আবৃত্তির পর ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের জনপ্রিয় এই গানের তালে অসাধারণ নৃত্য পরিবেশন করেন নেত্রকোনা বন্ধুসভার বন্ধু প্রিয়া রানী দাস।
এদিকে বিকেল থেকে সন্ধ্যা হওয়ার পালা। একপশলা ঝুম বৃষ্টি নেমেছে আকাশ ভেঙে। তার মধ্যেই মিলনায়তনে রঙের বাউল ফেরদৌস মঞ্চে উঠে টানা পাচটি গান গেয়ে উপস্থিত বন্ধুদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়ে দেন। এরপরই ওহে শ্যাম ও রঙ্গোবতি গানের অংশবিশেষে জাককানইবির নাহিদ, রিমি, আমিনা, সৌখিন, জাফরিন ও সামিরা পরিবেশন করেন যুগল নাচ। ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সিঁথি সাহার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের সঙ্গে নৃত্যের রঙ উৎসবস্থল আরও জমিয়ে তোলে। ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সামিনা আক্তার রবীন্দ্র আবহে গান করেন। আর নালিতাবাড়ী বন্ধুসভার বন্ধু জয় সাহা ফোক গান গেয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সভাপতি তাসনিমুল হকের কণ্ঠে শোভা পায় ‘তোমার ঘরে বসত করে’ গানটি।
এদিকে জামালপুর বন্ধুসভার সেকান্দার আলমের ‘ফিরিয়ে দাও’ ও ইমরান ও রুবেলসহ দলীয় পরিবেশনায় ‘সোনার ময়না ঘরে রাইখা বাইরে তালা লাগাইছে’ গানের তালে বন্ধুরা আবারও মেতে ওঠেন উন্মাদনায়। সাংস্কৃতিক পর্বের প্রায় শেষ দিকে জাককানইবি বন্ধুদের দলীয় পরিবেশনায় পুরোনো দিনের বাংলা ছায়াছবির গানের তালে র্যাম্প প্রদর্শনী উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার অনিক সরকারের গান ও ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বন্ধু মেঘলার গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক পর্বের সমাপ্তি ঘটে।
এর আগে সাংস্কৃতিক পর্ব জমজমাট করে তুলতে দুই সপ্তাহ ধরে চলে অনুশীলন। পরিবেশনা এতটাই মনোমুগ্ধকর হয় যে ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিটের পর্বটি ২ ঘণ্টার বেশি সময় দীর্ঘ হয়। তবু যেন কম হয়ে গেছে।
সভাপতি, জাককানইবি বন্ধুসভা