‘বাংলাভাষীদের কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটা গর্বের জায়গা। বাংলা ভাষা যত দিন থাকবে, রবীন্দ্রনাথকে আমরা তত দিন উদ্যাপন করে যাব। তাঁর সাহিত্য, চিন্তাভাবনা, সৌন্দর্য আমাদের ধারণ করতে হবে,’ ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার উদ্যোগে রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন উপলক্ষে ৭ মে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ‘সুন্দর, তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে’ শিরোনামে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এতে অংশগ্রহণ করেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদ, ঢাকা মহানগর, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্টার্ন ইতিনিভার্সিটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার অন্যান্য বন্ধুসভার বন্ধুরা। কক্সবাজারের চকরিয়া বন্ধুসভার এক বন্ধুও এদিন উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনুভূতি জানানো, গান ও নৃত্য পরিবেশনা এবং কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে কবিগুরুকে স্মরণ করেন বন্ধুরা।
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাটের সঞ্চালনায় শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বন্ধুরা অনুভূতি ও ভালো লাগার কথা বলেন। বন্ধু অমিত পাল বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন, কাজ, চিন্তাভাবনা আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
বন্ধু মোস্তফা মাহফুজ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি, চিন্তা ও দর্শন শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, সমগ্র মানবজাতিকেই আলোকিত করেছে। “গীতাঞ্জলি”র মাধ্যমে তিনি যে আধ্যাত্মিকতা ও মানবতার বাণী প্রচার করেছেন, তা আজও আমাদের হৃদয়ে অনুরণিত হয়। কবিগুরু শুধু কবি নন, তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও শান্তির পথিকৃৎ। তাঁর রচনা আমাদের শেখায় সহমর্মিতা, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক এবং স্বাধীন চিন্তার মাহাত্ম্য। আজ এই বিশেষ দিনে, আমরা তাঁর জীবনাদর্শ থেকে অনুপ্রেরণা নিই। তাঁর সৃষ্টিকে লালন করি এবং মানবতার জন্য তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করি। রবীন্দ্রজয়ন্তী আমাদের মনে জাগিয়ে তুলুক সৌন্দর্য, প্রেম ও ঐক্যের বার্তা।’
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বুশরা বলেন, ‘সুন্দর জিনিস কতটা সুন্দর হতে পারে? রবীন্দ্রনাথ কিসের জন্য সুন্দর? অবশ্যই তাঁর সৃষ্টিকর্ম। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় অন্য রকম এক অনুভূতি হয়, শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের গানের মাধ্যমে পুরো দেশের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। রবীন্দ্রজয়ন্তী শুধু তাঁর জন্মদিন পালন নয় বরং তাঁর চেতনা আমাদের মধ্যে ধারণ করার একটি উৎসব।’
জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি মাহবুব পারভেজ বলেন, ‘প্রকৃত যে বাংলা আমরা ব্যবহার করি, সেই ভাষার পথপ্রদর্শক রবীন্দ্রনাথ। তাঁর লেখনির শক্তিমত্তা অনেক। তিনি এমনভাবে লেখেন, যেটা আপনি মানুষ হিসেবে হতে চান। লেখার প্রভাব; রবীন্দ্রনাথের লেখার ধরনই এমন। তিনি একজন জমিদার হলেও ছিলেন পরিশ্রমী ও সাহসী; তবে আয়েশি জীবন যাপন করেননি। এমন মানুষের কাছ থেকে এমন সব সেরা সাহিত্য বের হয়ে এসেছে, এটা দুর্লভ।’
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার উপদেষ্টা আশফাকুজ্জামান বলেন, ‘পেশাগত কারণে বাংলাদেশের সেরা লেখক, কবিদের সঙ্গে আমার পরিচয়। সবাই খুব বিনয়ী। আমিও রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে বিনয়ী হওয়া শিখেছি। রবীন্দ্রনাথের কোনো অহংকার ছিল না। তিনি শিখিয়েছেন, আমি যত বড় হই না কেন, সব মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। এই যে ব্যাপারটা, সবাইকে যেভাবে মানবিক বন্ধনে, ভালোবাসার বন্ধনে তিনি বেঁধেছেন, এটা অসামান্য। জীবনের কোনো ঘটনা, দুঃখ কিছুই রবীন্দ্রনাথকে তাঁর সাহিত্যচর্চা থেকে দূরে সরাতে পারেনি।’
আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন বন্ধুরা। সংগীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী তাপসী রায় এবং শান্তি ক্যানসার ফাউন্ডেশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাদিয়া আরেফিন শাওন। একসঙ্গে কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে শোনান তাঁরা। রবীন্দ্রনাথের গানের ছন্দে নৃত্য পরিবেশন করেন ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বন্ধু জাকিয়া লিমা, তানহা তাসনিম ও ইশিতা মন্ডল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘আফ্রিকা’ আবৃত্তি করেন জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি মাহবুব পারভেজ। রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে শোনান বন্ধু ফাহিম শাহরিয়ার।
শেষে বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার স্মৃতিচারণা করেন। এ সময় তিনি কবিগুরুর জীবনের বিভিন্ন ঘটনার কথা তুলে ধরেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা