বন্ধুসভা হারে না, হারতে পারে না

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার বন্ধুরা।

১৮ ডিসেম্বর, সন্ধ্যা। বন্ধুসভা কক্ষজুড়ে সাজ সাজ রব, সবাই ব্যস্ত। কেউ নিবন্ধনের জন্য, কেউ আবার ২০২৬ সালের কমিটির জন্য সারা দেশে যোগাযোগ করছেন। কেউ করছেন ডিজাইন, কেউবা পরিকল্পনায় ব্যস্ত। পাঁচ বছরের অপেক্ষা শেষ হতে আর মাত্র ছয় দিন বাকি। অবশেষে হতে যাচ্ছে ষষ্ঠ জাতীয় বন্ধু সমাবেশ। বন্ধুদের প্রবল আগ্রহ আর উচ্ছ্বাসে, আমাদেরও দায় প্রবল। সব যেন ঠিকঠাক চলে, তাই দফায় দফায় সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্ত আলাপ হচ্ছে। আরেক কক্ষে সারা দেশের সেরা ১০ বন্ধুসভা বাছাইয়ের কঠিনতম বিচারকাজ চলছে। মৌচাক স্কাউট মাঠেও তাঁবুবাসের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। সব গুছিয়ে যখন কার্যালয় থেকে বের হই, তখন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। নিচে কারওয়ান বাজারের হাঁকডাক, ওপরে তখনো বেশ কয়েকজন বন্ধু কাজ করছেন।

ষষ্ঠ জাতীয় বন্ধু সমাবেশের উদ্বোধনী পর্বে বন্ধুসভার থিম সংগীতের তালে বন্ধুদের মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনা, মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণকেন্দ্র মাঠে, গাজীপুর।

১৯ ডিসেম্বর, ভোর পাঁচটা। আবারও বন্ধুসভা কার্যালয়ের সামনে। এবার পুরো ভবনে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। কক্ষের সবকিছু পুড়ে ছাই। আমাদের সব পরিকল্পনা, আমাদের ২৭ বছরের সব স্মৃতি আর সম্পদ, আমাদের সমাবেশের সব প্রস্তুতি—সব পুড়ে অঙ্গার। অসহায় চোখে তাকিয়ে ভাবছি—আহ্! এত দিনের সব শ্রম, এত প্রস্তুতি, সব কি তাহলে আগুনে জ্বলে যাবে? এত স্বপ্ন, এত উচ্ছ্বাস, সব ছাই হয়ে যাবে?

উদ্বোধনী পর্বের একাংশ সঞ্চালনা করেন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ (২০২৪-২৫)-এর নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ।

এরপর মাত্র দুই দিনের অপেক্ষা। ২১ ডিসেম্বর, আরেক সন্ধ্যায় এবার আমরা বসলাম প্রথম আলো সম্পাদকের সঙ্গে। তিনি সাহস দিলেন, 'আমরা বললাম—শূন্য থেকেই সব শুরু করব। সারা দেশের বন্ধুরাও তীব্র সংকল্পে আমাদের সিদ্ধান্তে সায় দিলেন। যেমন কথা তেমন কাজ। পরদিন ভোর থেকে ২৫ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত নির্ঘুম রাত কাটিয়ে আমরা সবাই মিলে মাত্র তিন দিনে সব কিছু জোগাড়যন্ত্র করে, সব প্রস্তুতি শেষ করে, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু করে দিলাম— ষষ্ঠ জাতীয় বন্ধু সমাবেশ ২০২৫"।

ভৈরব বন্ধুসভার তোফাজ্জল হোসেন ও আনাস খান বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ পরিবেশন করেন।

তীব্র শীতে, শতাধিক তাঁবুতে আর কিছু ভবনে আমাদের সহস্রাধিক বন্ধু, আনন্দ-উচ্ছ্বাস, আর দেশ গড়ার সুতীব্র সংকল্পে, হার না মানা প্রত্যয়ে জানিয়ে দিল, বন্ধুসভা হারে না, হারতে পারে না। আমাদেরও লক্ষ্য যখন বাংলাদেশের জয়, তখন আমাদের থামায় এমন সাধ্য আছে কোন সে মানবের? আমরা, বন্ধুরা হার না মানা সংকল্প আর বন্ধুত্বের শক্তিতে সারা দেশে আমাদের ভালো কাজ করেই যাব। এবার আমাদের স্লোগানও ছিল "আমরা সবাই বাংলাদেশ'। এই বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্যে যাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, যাঁরা সমর্থন দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, ভরসা জুগিয়েছেন, পাশে থেকেছেন এবং সর্বোপরি যাঁরা সমাবেশে এসে আমাদের জন্য দুই কথা বলেছেন, তাঁদের সবাইকে জানাই প্রাণখোলা অভিনন্দন ও ভালোবাসা। আর সব কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়ে সমাবেশ সফল করায় সারা দেশের বন্ধুদের জন্য হৃদয়ের উষ্ণতম শুভেচ্ছা। ভবিষ্যতে আমরা একসঙ্গে লড়ব, একসঙ্গে জিতব।'

‘আমরা সবাই বাংলাদেশ’ শিরোনামে দেয়ালিকা তৈরি করে আনে বিভিন্ন বন্ধুসভা। প্রদর্শনীতে সেরা ১০টি দেয়ালিকার জন্য সুবর্ণ প্রকাশনীর সৌজন্যে বই উপহার দেওয়া হয়।
বন্ধুদের জন্য বরাদ্দ করা তাঁবুগুলো নিজের মতো করে সাজায় অনেক বন্ধুসভা। ১২০টি তাঁবুর মধ্যে সাজসজ্জা এবং অভিনবত্ব বিবেচনায় সেরা ৫টি বন্ধুসভাকে সুবর্ণ প্রকাশনীর সৌজন্যে বই উপহার দেওয়া হয়।
২০২৬ কার্যনির্বাহী বছরের জন্য সারা দেশের অনুমোদিত বন্ধুসভাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা। জাতীয় পর্ষদ ও মহানগর কমিটির পূর্ণ তালিকা এবং অনুমোদিত বন্ধুসভাগুলোর তালিকা বন্ধুসভার পরবর্তী পাতায় প্রকাশ করা হবে।

আয়োজন সহযোগী হিসেবে ছিল ইস্পাহানি, প্রাইম ব্যাংক, ফ্রেশ, দেশি-ফুডস, বিকাশ, ইউনিমেড ইউনিহেলথ, পুষ্টি, ডেকো, বাস নেটওয়ার্ক, মাদানী হাসপাতাল ও আরএকে সিরামিকস। অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার সহযোগী হিসেবে ছিল চ্যানেল আই। ছবি তুলেছেন দীপু মালাকার, হাসান মাহমুদ ও আবদুল ইলা। ছবি তুলেছেন দীপু মালাকার, হাসান মাহমুদ ও আব্দুল ইলা।