‘বিতর্ক শুধু যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যম নয়, এটি চিন্তার শাণিত চর্চা। তোমাদের বিশ্লেষণক্ষমতা ও ভাষার যথাযথ প্রয়োগ দেখে আমি মুগ্ধ। মনে রেখো, বিতর্কে জয়-পরাজয় থাকলেও আসল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান ও যুক্তির প্রসার। শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা ও সঠিক প্রয়োগ তোমাদের ভবিষ্যৎ পথচলাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।’
জামালপুর বন্ধুসভার উদ্যোগে ‘মাতৃভাষা বিতর্ক উৎসব ২০২৫’-এ অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবদুল হাই আল হাদী। ‘যুক্তির আলোয় জয় হোক সত্যের’ প্রতিপাদ্যে ৭ ফেব্রুয়ারি জামালপুর শহরের বঙ্গবন্ধু আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিতর্ক প্রতিযোগিতা দুটি রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম রাউন্ডে চারটি স্কুল অংশ নেয়। প্রথম পর্বের বিতর্কে জামালপুর জিলা স্কুল বনাম জামালপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। জিলা স্কুল বিজয়ী হয়ে ফাইনালে পৌঁছায়। এ পর্বে বিতর্কের বিষয় ছিল ‘আইনগত ব্যবস্থা নয়, পারিবারিক সচেতনতা মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণে অধিক কার্যকর’। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন জামালপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা সিফাত আবদুল্লাহ, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক ফারজানা আক্তার এবং ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম।
প্রথম রাউন্ডের দ্বিতীয় পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামালপুর উচ্চবিদ্যালয় এবং জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। জামালপুর উচ্চবিদ্যালয় বিজয়ী হয়ে ফাইনালে ওঠে। এ পর্বে বিতর্কের বিষয় ছিল ‘প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস নষ্ট করছে’। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন জামালপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা নাজমুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং বন্ধু শেখ মোহাম্মদ শামিম।
ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় জামালপুর জিলা স্কুল এবং জামালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মধ্যে। নির্ধারিত বিষয় ছিল ‘জামালপুরের শিক্ষা ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতার একমাত্র কারণ জনসচেতনতার অভাব’। উভয় দল তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি উপস্থাপন করে বিষয়টির পক্ষে ও বিপক্ষে মত প্রকাশ করে। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জামালপুর উচ্চবিদ্যালয়। সেরা বক্তা নির্বাচিত হয় চ্যাম্পিয়ন দলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস।
অনুভূতি প্রকাশ করে জান্নাতুল ফেরদৌস বলে, ‘বিতর্ক মানেই যুক্তির জয়, যুক্তির উৎকর্ষ। আর এই মঞ্চ আমাদের সেই উৎকর্ষ সাধনের পথ দেখিয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে, যাতে আরও বেশি শিক্ষার্থী যুক্তির আলোয় আলোকিত হতে পারে।’
ফাইনাল পর্বে সভাপতিত্ব করেন জামালপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা হিশাম মহান্নাভ। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন উপদেষ্টা আবদুল হাই আল হাদী, মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন ও ইয়াসিন ইবনে মাসুদ। ফলাফল ঘোষণার আগে তাঁরা বিতার্কিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তাঁরা বিতর্কে শুদ্ধ বাংলা ভাষার যথাযথ প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দেন এবং বিতার্কিকদের শুভকামনা জানান।
উৎসবে অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট ও বই উপহার দেওয়া হয়। প্রথম পর্ব ও চূড়ান্ত পর্বের সেরা তিন বক্তা পেয়েছে ক্রেস্ট ও বই। সবশেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অতিথি ও বিচারকেরা।
এ সময় উৎসবে অংশগ্রহণকারী চারটি স্কুলের অসংখ্য শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কুইজ প্রতিযোগিতা। বিজয়ী ১০ জনকে ২০টি বই উপহার দেওয়া হয়। পুরো উৎসব সঞ্চালনা করেন বন্ধু তৌহিদুল ইসলাম।
উৎসব বাস্তবায়নে কাজ করেছেন জামালপুর বন্ধুসভার সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নাইম, মারুফ হাসান, প্রচার সম্পাদক ফাহিম মোনায়েম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাসেল মিয়া, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক ফারজানা আক্তার, বইমেলা সম্পাদক আমির হামজাসহ অন্য বন্ধুরা।
সাধারণ সম্পাদক, জামালপুর বন্ধুসভা