বছরব্যাপী বন্ধুসভার বন্ধুরা নিজেকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি মানুষ ও দেশের জন্য কাজ করছেন। পরিবেশ সুরক্ষায়, স্বাস্থ্য রক্ষায়, প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায় বন্ধুসভা। সামাজিক বা বৈশ্বিক যেকোনো অসংগতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। বন্ধুরা যেমন সংস্কৃতিচর্চা করছেন তাঁর চিত্তের বিকাশের জন্য, অন্যদিকে সামাজিক কাজ করছেন সমাজের মানুষদের ভালো রাখার জন্য। বন্ধুরা মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করেন, বিতর্ক চর্চা করেন, বৃক্ষরোপণ, ডেঙ্গু নিধন, নিজ উদ্যোগে নদী ও সৈকত পরিষ্কারে অংশ নেন, পাখির জন্য নিরাপদ আবাসস্থলের ব্যবস্থা করেন, অসহায় বৃদ্ধার বন্ধকি জমি ছাড়িয়ে দেন নিজেদের অর্থে, আবার কারও ঘরের চাল তৈরি করে দেন, আরও কত কী! বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বন্ধুসভা নিয়মিত কাজ করছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা ও বন্ধুত্বের অংশ হিসেবে শীতবস্ত্র বিতরণ, সচেতনতামূলক কাজ, পাঠাগার নির্মাণ, মেডিকেল ক্যাম্প, রক্তদান কর্মসূচি, দরিদ্রদের সহায়তা, সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশসহ আরও কার্যক্রম সারা বছর ধরে বন্ধুসভার বন্ধুরা করে থাকেন। পাঠচক্রের আয়োজন বন্ধুসভার নিয়মিত কাজের একটি। প্রতি সপ্তাহে সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভা এটি আয়োজন করছে।
সারা বছরের এসব কার্যক্রমের ভিত্তিতে ২০২২ সালের সেরা ১০টি বন্ধুসভা নির্বাচন করা হয়েছে। তবে সবাই এত ভালো কাজ করেছে যে সেরা নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যায়। তাই এবার ১২টি বন্ধুসভাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বন্ধুসভাগুলো হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, ভৈরব, সিলেট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঝিনাইদহ।
এ ছাড়া বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের আহ্বানে ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘পৃথিবী একটাই, আসুন গাছ লাগাই’ স্লোগান ধারণ করে আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসজুড়ে গাছের চারা রোপণ করেন বন্ধুরা। এ বছর ১৩০টি বন্ধুসভার মধ্যে সারা দেশের ৬৫টি বন্ধুসভা এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ১০টি বন্ধুসভাকে সেরা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। বন্ধুসভাগুলো হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, গাজীপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পার্বতীপুর, রংপুর, জামালপুর ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
গতকাল শুক্রবার ‘এসো মিলি জলধারায়’ শিরোনামে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে বার্ষিক সভা ও আনন্দ আড্ডায় এই ২২টি বন্ধুসভার প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়েছে।
এক অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেছেন, ‘প্রথম আলোর সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ হচ্ছে বন্ধুসভা। মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত মানুষের পাশে থাকা। বন্ধুসভা সে কাজই করার চেষ্টা করে। অনেক দেশ যেটা (স্বাধীনতা) এমনি এমনি পেয়ে গেছে, আমরা তা রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি। কাজেই আমাদের রক্তের ঋণ আছে। বন্ধুসভা সেই রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে কাজ করে। বন্ধুসভা সফলতার চেয়ে স্বার্থকতায় বিশ্বাস করে।’
জাতীয় পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায় বলেন, ‘সারা দেশের বন্ধুরা মানুষের কল্যাণে এবং দেশের উন্নয়নে যেভাবে কাজ করছে, তাতে সবাইকে সেরা বন্ধুসভা নির্বাচন করা সম্ভব। তবু কাজের অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সবার মধ্য থেকে কয়েকটি সেরা বন্ধুসভা নির্বাচন করে পুরস্কৃত করছি, যেন অন্য বন্ধুসভাও আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা পায়। আশা করি, এ স্বীকৃতি তাদের স্পৃহাকে আরও এগিয়ে নেবে।’