শীতের বিদায়লগ্নে জাহাঙ্গীরনগরে কুয়াশাবরণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ছায়ামঞ্চে জাবি বন্ধুসভার কুয়াশা উৎসবে তিন বন্ধুর সাংস্কৃতিক পরিবেশনাছবি: বন্ধুসভা

কনকনে শীতল হাওয়ার তীব্রতা কমতে শুরু করেছে। স্নিগ্ধ বাতাসে এখন ঝরা পাতার গান জানান দিচ্ছে- ঋতুরাজ বসন্ত আসছে। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শীত যেমন আসে আগে, তেমনি বিদায়ও নেয় সবার শেষে। এখনো বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় সবুজ ক্যাম্পাসের চারপাশ। হাজারো পাখির কুঞ্জন ছাপিয়ে, আঁকাবাঁকা লেকগুলো অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে।

এমনই কুয়াশাভেজা সন্ধ্যায় ২ ফেব্রুয়ারি নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন, পিঠাপুলি আর চিরায়ত বাঙালিয়ানা ভোজ খিচুড়ি মাংসের আহারাদিতে কুয়াশাকে বরণ করে নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা। ‘আমারে ডাকিয়া লও উজানতলি ঘাটে, যেথায় কুয়াশা কাঁপন ধরি শিশির সূর্য মাখে!’ স্লোগানে সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই উৎসব। কী ছিল না এই আয়োজনে! যে বিশাল বটবৃক্ষ ঘিরে তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ছায়ামঞ্চ, তার পুরোটা সাজানো হয় রং–বেরঙের কাগজ আর বাহারি আলোকসজ্জায়। পুরো চত্বর ঘিরেই ছিল বসার আয়োজন।

একদিকে মঞ্চে চলছিল শুদ্ধ দেশি সাংস্কৃতিক নানান আয়োজন অন্যদিকে তখন লাকড়ির চুলায় বড় বড় হাঁড়িতে খিচুড়ির চাল-ডাল ফুটছিল, কষা ঝোলে মাংস ভুনার ঘ্রাণে ম ম করছিল চারপাশ।

দেশীয় গানের সুরের মুর্ছনায় উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন তিন বন্ধু, ২ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ছায়ামঞ্চে
ছবি: বন্ধুসভা

ক্যাম্পাসে ব্যাচভিত্তিক সংস্কৃতিতে নতুন ব্যাচের আগমন সব সময়ই মধুর হয়। এই আয়োজনেও নবীন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পুরোটা জুড়েই যেন শুধুই ৫২তম ব্যাচ। বন্ধুসভার সদস্যদের ছাপিয়ে তাদের উচ্ছ্বাসটাই যেন বেশি। এর মাঝে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ, ঢাকা মহানগরসহ অন্য বন্ধুসভার বন্ধুদের উপস্থিতি আয়োজনের ব্যাপ্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। নানা প্রান্তের বন্ধুদের মিলনমেলায় আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। ঝাল-ঝাঁজ ভর্তামাখা চিতই আর মিষ্টি গুড়ের ভাপার স্বাদে উপভোগ করেন নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তিসহ নানা আয়োজন। একফাঁকে সবাই মিলে ছায়ামঞ্চে উপস্থিত বন্ধুদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

জাবি বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মুন্নার সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, জাবি বন্ধুসভা সব সময়ই সেরাদের মধ্যে অন্যতম। শুধু নিয়মিত আয়োজন নয়, ব্যতিক্রমী চিন্তা ও হৃদ্যতার জন্যই তারা সেরা। জাবি বন্ধুসভার এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। বন্ধুদের সব ভালো উদ্যোগে জাতীয় পর্ষদ সব সময় পাশে আছে জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক বলেন, কুয়াশা উৎসব কে, কবে, কোথায় প্রথম করেছেন, সেটা বড় বিষয় নয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা যে আঙ্গিকে কুয়াশা উৎসবের আয়োজন করে এবং এর মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতি ও কৃষ্টি তুলে ধরে, সেটা অনবদ্য। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে কুয়াশা উৎসব সবার হয়ে উঠেছে। বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও দেশবরেণ্য কীটতত্ত্ববিদ মনোয়ার হোসেন তুহিন বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভার কাজ আমাকে আন্দোলিত করে। তরুণ শিক্ষার্থীরা যে এত বিষয়ে কাজ করতে পারেন, এটা ভাবতেও ভালো লাগে।’ অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুর যা কাজ, তার সবকিছুই করে বন্ধুসভা। তাই বন্ধুসভার বন্ধু হতে পেরে আমি গর্বিত।’

কুয়াশা উৎসব শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধুদের একাংশ
ছবি: বন্ধুসভা

শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যেই জাবি বন্ধুসভার ম্যাগাজিন সুহৃদ–এর মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। এর আগে কয়েকজন নবীন শিক্ষার্থী মঞ্চে এসে তাঁদের আনন্দ অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের শেষে ২০২৪ সালের কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে জাবি বন্ধুসভার ২০২৩ সালের কমিটি। নতুন কমিটিতে লোকপ্রশাসন বিভাগের সুমাইয়া জামান প্রীতি সভাপতি ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অনুপ সরকার দ্বীপ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় বিদায়ী সভাপতি হামিদা জান্নাত ও সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মুন্না যেকোনো প্রয়োজনে নতুন কমিটিসহ, জাবি বন্ধুসভার বন্ধুদের পাশে থাকার কথা জানান।

মনোজ্ঞ এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন সিকদার, জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টা উত্তম রায়, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাট, বইমেলা সম্পাদক খায়রুন্নাহার খেয়া, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি ও মনোরোগ চিকিৎসক মাহমুদা বুশরা, জাবি বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি রিদিতা তাহসিন অদিতি, তনিউর রহমান, ইমরুল কায়েসসহ জাতীয় পর্ষদ, মহানগর ও জাবি বন্ধুসভার অন্য বন্ধুরা।

বন্ধুদের নিজস্ব অর্থায়নে আয়োজিত এই উৎসবে বিশেষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে গ্রামীণ ডানোন এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিল লিজেন্ড কেয়ার।

প্রচার সম্পাদক, জাবি বন্ধুসভা