অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড
দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন রোজিনা ইসলামকে বন্ধুসভার সংবর্ধনা
দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২২ সালের ‘অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম। তাঁর এ অর্জনে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংবর্ধনা দিয়েছে বন্ধুসভা।
সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন, উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী সোমনূর মনির কোনাল, প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা, বিজ্ঞাপন বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার নর্মদা মিথুন, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায়, নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ, সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি বহিৃ শিখাসহ বন্ধুসভার অন্য বন্ধুরা।
সহকর্মীর এমন অর্জনে আনিসুল হক ফিরে যান পুরোনো স্মৃতিতে। ২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে গ্রেপ্তার হন রোজিনা ইসলাম। তখনকার স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘সকালে বের হয়েছেন কর্মস্থলে। বিকেলে মেয়ের কাছে যাবেন। এর মধ্যেই পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। প্রথম আলো আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। ভেবেছিলাম, ওই দিনই জামিন পেয়ে যাবে। কিন্তু আমরা কল্পনাও করিনি, জামিন হবে না। এই জন্য কেঁদেছিলাম।’ রোজিনা ইসলামের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এ ধারা ধরে রাখতে হবে।’ এ সময় বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানান আনিসুল হক। তিনি বলেন, রোজিনার মুক্তির দাবিতে সারা দেশের বন্ধুরা আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সহকর্মীকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সুমনা শারমীন। তিনি বলেন, ‘এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে রোজিনার প্রতি আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেল। অবশ্য সে-ই দিন দিন এ প্রত্যাশা বাড়িয়ে নিচ্ছে।’ লাজ্জাত এনাব মহছি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। রোজিনা এতটাই কাজপাগল যে প্রতিদিন সকালে কাজের জন্য সচিবালয়ে যায়। যেকোনো তথ্য পেলেই সঙ্গে সঙ্গে আমাকে কল দিয়ে বলবে, লাজ্জাত ভাই, এটা করতেই হবে। তখন আমি বলি, আগে অফিসে আসেন। সে অফিসে এসে সব তৈরি করে আমার ডেস্কে এসে বলে এটা আজই ছাপাতে হবে। এমন সহকর্মী পেলে আমাদেরও কাজের উৎসাহ বেড়ে যায়।’
রোজিনা ইসলামকে নিয়ে নিজের লেখা একটি গান গেয়ে শোনান কণ্ঠশিল্পী কোনাল। এ সময় অনেকের চোখে আনন্দাশ্রু দেখা যায়। কোনাল বলেন, ‘তিনি আমার বোন, আমাদের সবার অনুপ্রেরণা। আমাদের সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন রোজিনা ইসলাম। আমাদের বাংলাদেশের একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। সামনে আরও অনেক সুন্দর দিন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।’ মাহবুবা সুলতানা বলেন, ‘রোজিনা আপা একজন ভালো সহকর্মীর পাশাপাশি আমার মেন্টরও। ওনার কাছ থেকে সব সময়ই কিছু না কিছু শেখার সুযোগ হয়।’ এ সময় রোজিনা ইসলামকে উৎসর্গ করে দুটি গান গেয়ে শোনান তিনি।
সম্মাননা পেয়ে বন্ধুদের প্রতি যেন কৃতজ্ঞতার শেষ নেই রোজিনা ইসলামের। তিনি বলেন, ‘সংবর্ধনা পেতে, পুরস্কার পেতে ভালো লাগে। আবার একদিকে এসব যেমন প্রাপ্তি, তেমনই চ্যালেঞ্জের। দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেছে। আমাকে থেমে থাকা যাবে না। কাজ করতে হবে। তাহলেই মনে শান্তি পাই। এত এত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের মানুষ আমার পাশে আছে। এ জন্য কৃতজ্ঞ। বন্ধুসভার বন্ধুরা আমার জন্য অনেক কিছু করেছে। ওই ঘটনার (গ্রেপ্তার) পর যত জেলায় গিয়েছি, সবখানে বন্ধুরা আমাকে সাদরে বরণ করে নিয়েছেন।’
উত্তম রায় বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা করছিলাম একটা সংবর্ধনা দেওয়ার। অবশেষে সেটা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। রোজিনা আপা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। বিশেষ করে ওনার এই সাফল্য নারীদের আরও সাহসী হতে, সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
মৌসুমী মৌ বলেন, ‘স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের জন্য লড়েছেন এশিয়ার তিন নারী সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে আমাদের রোজিনা আপা একজন। সেই তালিকায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা আছেন। আমার বিশ্বাস, আমাদের রোজিনা আপাও শান্তিতে নোবেল পাবেন।’ জাফর সাদিক বলেন, ‘দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে রোজিনা ইসলাম এক সাহসিকতার নাম। ওনার জন্য দেশের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা সেটাই প্রমাণ করে।’
মৌসুমী মৌর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দিয়েছেন নর্মদা মিথুন ও বন্ধুসভার দুই বন্ধু।