বন্ধুদের প্রত্যয়, হারবে না বাংলাদেশ

বন্ধুসভার রজতজয়ন্তী উৎসবে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ঢাকাসহ সারা দেশের ৫৬টি বন্ধুসভার চার শতাধিক বন্ধু উপস্থিত ছিলেন
ছবি: তানভীর আহেম্মদ

ক্যালেন্ডারের পাতায় ১১ নভেম্বর দিনটি বিশেষ। ১৯৯৮ সালের এই দিনে বন্ধুসভা নামে এক নিউক্লিয়াসের যাত্রা শুরু হয়, যা এখন ২৫ বছরের টগবগে যুবক। ২৫ বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে; শীতের সকাল, হেমন্তের ধান, বসন্তের গান। কিন্তু বদলায়নি বন্ধুদের আবেগ, ভালোবাসা আর মায়ার বন্ধন। যার প্রমাণ মেলে ১১ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের উদ্যোগে আয়োজিত রজতজয়ন্তী উৎসবে। এ যেন নির্জনতার কবি জীবনানন্দ দাশের—
শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে-
বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিও তুমি—আসিবার ইচ্ছা যদি হয়—
পঁচিশ বছর পরে!’

বিভিন্ন সময় যাঁরা বন্ধুসভার নেতৃত্ব দিয়েছেন বা যুক্ত ছিলেন, এমন বন্ধুরাও উপস্থিত ছিলেন
ছবি: তানভীর আহেম্মদ

এই পঙ্‌ক্তিমালার এক বাস্তব রূপান্তর! ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যুক্ত হন বন্ধুসভার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও ফেনী বন্ধুসভার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) কান্ট্রি এডিটর তানভীর আলাদিন, প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল, শিশুসাহিত্যিক সাইদুজ্জামান রওশনসহ বন্ধুসভার অসংখ্য অভিজ্ঞ বন্ধু। যাঁদের হাত ধরে বন্ধুসভার যাত্রা হয়েছিল, ২৫ বছর ধরে যাঁদের নেতৃত্বে ও কর্মে প্রথম আলোর পাঠক সংগঠনের পরিচয় ছাপিয়ে বন্ধুসভা দেশের সর্ববৃহৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তাঁদের সঙ্গে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ৫৬টি বন্ধুসভার বন্ধুদের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলায় পরিণত হয়ে ওঠে মিলনায়তন প্রাঙ্গণ।

রজতজয়ন্তী উৎসবে (বাঁ থেকে) বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিক, নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ ও সভাপতি উত্তম রায়
ছবি: তানভীর আহেম্মদ

বন্ধুসভার নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ ও সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিকের সঞ্চালনায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। এরপর বন্ধুসভার থিম সংগীতের ছন্দে মঞ্চ মাতান মহানগর বন্ধুসভার একদল বন্ধু। উদ্বোধনী বক্তব্যে সভাপতি উত্তম রায় ২৫ বছরের পথচলায় যুক্ত সব বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বিগত সময়ে বন্ধুসভার বিভিন্ন আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতাকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুভেচ্ছা জানাতে আসা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বন্ধুসভার প্রতি তাঁদের মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। ঝলমলে আভায় মঞ্চ আলোকিত করে বন্ধুদের ভালোবাসা জানাতে আসেন অভিনয়শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও আব্দুন নূর সজল। সংগীতশিল্পী বাঁধন সরকার পূজা ‘চার ছক্কা হই হই, বল গড়াইয়া গেল কই’ গানের তালে বন্ধুদের উন্মাতাল করে তোলেন।

খানিক বাদেই যুক্ত হন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এবং ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। আনিসুল হক বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভা বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণ হৃদয়ে আলো জ্বালছে। সর্বত্র বন্ধুসভা আছে এবং সবাই ভালো কাজ করছে। এ জন্য বাংলাদেশের উন্নতি হবে। এ জন্যই আমরা বলছি, হারবে না বাংলাদেশ।’

(বাঁ থেকে) প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এম এম মোহিত কামাল
ছবি: তানভীর আহেম্মদ

এরপর মঞ্চে আসেন মতিউর রহমান। সারা দেশে বন্ধুসভাগুলোর বছরব্যাপী কাজের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের সেরা ১০, বৃক্ষরোপণ ও সহমর্মিতার ঈদ কর্মসূচির সেরা ১০ এবং প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি করে ভালো কাজ’ কর্মসূচির সেরা ৩ বন্ধুসভাসহ ৩৩টি বন্ধুসভার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে বন্ধুদের প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর ২৫ বছর, বন্ধুসভারও ২৫ বছর। দুইটা সংগঠন, দুইটা প্রতিষ্ঠান একদম পাশাপাশি ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সর্বত্র কাজ করছে। পত্রিকা বা সংগঠন হিসেবে প্রথম আলোর যত বড় বড় কাজ আছে, এসব কিছুর জন্য আমাদের অনেক সুনাম, স্বীকৃতি হয়—এ সবকিছুর পেছনে যদি কারও ভূমিকা থাকে, সেটা বন্ধুসভার। বন্ধুসভার কাজগুলো আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমরা সব সময় চেষ্টা করব আপনাদের পাশে থাকার। আমরা বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই। যে যেখানে আছি, কিছু একটা ভালো কাজ করতে চাই।’

রজতজয়ন্তী উৎসবে আরও যুক্ত হন প্রথম আলোর হেড অব কালচারাল প্রোগ্রাম কবির বকুল, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির ক্রিয়েটিভ লিড জাহিদুল হক অপু, ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশন মো. আব্দুল কাইয়ুম, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুল, ত্বক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান রেজুভা ওয়েলনেসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ডা. তাওহিদা রহমান ইরিনসহ আরও অনেকে। জাতীয় পর্ষদের সাবেক সভাপতি মুমিত আল রশীদ, মহানগর বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি সোলায়মান কবির, বর্তমান সভাপতি হাসিনা মোস্তাফিজ, সাধারণ সম্পাদক সাইমুম মৌসুমীসহ বন্ধুসভার চার শতাধিক নবীন-প্রবীণ বন্ধুর অংশগ্রহণে রজতজয়ন্তী উৎসব পরিণত হয় মিলনমেলায়। আড্ডা, গান, নাচ আর স্মৃতিমুখর সব প্রাণ যেন একাকার হয়ে মিশে যায় ২৫ বছরের নানা বাঁকে।

ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মার বিপণন মহাব্যবস্থাপক সাফায়েত মাহমুদ, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুল, রেজুভা ওয়েলনেসের ওয়েলনেস কনসালট্যান্ট তাওহিদা রহমান ইরিন ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস মো. আব্দুল কাইয়ুম
ছবি: তানভীর আহেম্মদ
বন্ধুসভার থিম সংয়ের তালে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন ঢাকা মহানগরের (বাঁ থেকে) জয়তুন্নেসা কেয়া, খাদিজা জান্নাত, পারিশা মেহজাবিন, শারমিন তৃষা ও ওয়াসিমা তাসনিম
ছবি: তানভীর আহেম্মদ

জাতীয় পর্ষদের আয়োজনে এই রজতজয়ন্তী উৎসবে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড কনজারভেশন পার্টনার হিসেবে ছিল আরণ্যক ফাউন্ডেশন, রিফ্রেশমেন্ট পার্টনার ইস্পাহানি টি লিমিটেড, ওয়েলনেস পার্টনার রেজুভা ওয়েলনেস, এন্টারটেইনমেন্ট পার্টনার চরকি, বেভারেজ পার্টনার ফ্রেশ, টি-শার্ট পার্টনার এমব্রেলা লিমিটেড, নিউট্রিশন পার্টনার গ্রামীণ ডানোন ফুডস লিমিটেড, স্কিল ডেভেলপমেন্ট পার্টনার কোডার্সট্রাস্ট ও ফ্যাশন পার্টনার ছিল টুয়েলভ ক্লদিং লিমিটেড।

বর্ষসেরা দশ বন্ধুসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক
ছবি: তানভীর আহেম্মদ

জাতীয়ভাবে উদ্‌যাপনের বাইরেও সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভা নানা আয়োজনে স্থানীয় পর্যায়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে রজতজয়ন্তী উৎসব পালন করেছে। এ উৎসবে ভালোর পথে আলোর যাত্রায় বন্ধুদের প্রত্যয়, হারবে না বাংলাদেশ।