বাতাসে শীতের ঘ্রাণ, পাতায় পাতায় শিশিরের কণা—এরই ফাঁকে সূর্যকিরণ শীতের কুয়াশা ভেদ করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তোলে। এমনই এক সকালে নবান্ন উৎসব করেছে ড্যাফোডিল বন্ধুসভা। ‘একটি সোনালি বিকেল’ শিরোনামে ৯ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসের বনমায়ার সবুজ প্রাঙ্গণে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
শীতের আগমনী বার্তায় হেমন্তকে বিদায় জানাতে দিনব্যাপী এই আয়োজনে ছিল মেহেদি উৎসব, পিঠা উৎসব, বইমেলা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বইমেলার আয়োজন করে অনুষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পুস্তক প্রকাশন।
সকাল নয়টায় উৎসবের সূচনা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বনমায়া প্রাঙ্গণজুড়ে সকালের শীতল বাতাসে পিঠার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধুরা হাজির হন নিজেদের হাতে তৈরি হরেক রকমের পিঠা নিয়ে। পিঠার স্টল দিয়েছেন তাঁরা। মুহূর্তেই ক্রেতার ভিড় লেগে যায়। কয়েকজন বন্ধু আবার মেহেদির স্টল নিয়ে বসেন। যাঁরাই যাচ্ছেন, তাঁদের হাত রাঙিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। বেশ জমজমাট আবহ। পাশাপাশি চলে শিক্ষার্থীদের বইমেলা পরিদর্শন।
দুপুরে সেখানে উপস্থিত হন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘ড্যাফোডিল বন্ধুসভা সব সময় চমৎকার সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাদের মধ্যে থাকলে আসলেই মনে হয় সবাই বন্ধুসভার বন্ধু।’
এদিন ইউনিভার্সিটির কেন্দ্রীয় মাঠে ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ থাকায় বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের বিরতি চলে। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক উৎসব। এ সময় বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস অতি সুন্দর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বন্ধুত্বপূর্ণ, যার কারণে এখানে সব অনুষ্ঠান এত সুন্দর হয়। আজ খুবই আনন্দিত এখানে আসতে পেরে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. সবুর খান বলেন, ‘আমার দেখা ড্যাফোডিল বন্ধুসভার প্রত্যেক সদস্য অনেক কর্মঠ। তাঁদের পরিচয় নামে নয়, পরিচয় পাওয়া যায় তাঁদের কাজে।’
বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নাচ ও গান পরিবেশনা, কবিতা আবৃত্তি ও র্যাম্প প্রদর্শনী দিয়ে সাজানো হয় এই পর্ব। সঞ্চালনায় ছিলেন ড্যাফোডিল বন্ধুসভার কার্যনির্বাহী সদস্য মুসাভভির সাকির, ফারজানা বীথি, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক কেয়া আখতার ও ম্যাগাজিন সম্পাদক সালমান ফারসী।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিজ্ঞানলেখক ফেরদৌসী বেগম, প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলাইয়ার, স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক অমিত চক্রবর্তী, ড্যাফোডিল বন্ধুসভার আহ্বায়ক আনোয়ার হাবিব কাজল, উপদেষ্টা মাহবুব পারভেজ ও আহসানউল্লাহ সজীব। এর মধ্যে শেখ মুহাম্মদ আলাইয়ার ও অমিত চক্রবর্তী ছোটন গান পরিবেশনা করেন। এ সময় বনমায়া প্রাঙ্গণ উৎসবস্থলে পরিণত হয়।
ড্যাফোডিল বন্ধুসভার অনুষ্ঠান মানেই বর্তমানদের সঙ্গে সাবেকদের মিলনমেলা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কর্মব্যস্ত দিনের সব ব্যস্ততা একপাশে রেখে বন্ধুত্বের টানে ছুটে আসেন অনেকেই। সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘পথচলা এখনো অনেক বাকি। আমরা চেষ্টা করছি বন্ধুসভাকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয় ও বন্ধুসভাকে এগিয়ে নিতে এ ধরনের আয়োজন চলমান থাকবে।’