উৎসবের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। একেক উৎসবে একেক রঙে আপ্যায়ন করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভোজনপ্রিয় বাঙালি জাতির আতিথেয়তার সুনাম বিশ্বব্যাপী, তারা যেমন খেতে ভালোবাসে, তেমন খাওয়াতেও। সেই চর্যাপদের কাল থেকে মধ্যযুগের সাহিত্য, শিল্পে ও পুরাকীর্তির মধ্যে বাঙালির ভোজনপ্রিয়তার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা থেকে আমাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভাস আর সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। উৎসব হলো আনন্দ, সেই উৎসব যদি হয় ফলের তাহলে তো আর কথায় নেই।
১৮ জুন ভৈরব উপজেলা মিলনায়তনের বঙ্গবন্ধু হলরুমে গ্রীষ্মকালীন ফল উৎসবের আয়োজন করে ভৈরব বন্ধুসভা। বিকেল থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল, এর মধ্যেই হাজির হন ৫০ বন্ধু। বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। হাজি আসমত আলী এতিম পরিবারের ১৫ জন এতিম শিশুকেও আমন্ত্রণ জানানো হয় উৎসবে। তারা বেশ আনন্দের সঙ্গে আয়োজনটি উপভোগ করে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০ লোকের সমাগম ঘটে মিলনায়তন হলরুমে।
বিকেল পাঁচটা বাজতেই সারি করে রিকশা ঢুকছিল উপজেলা মিলনায়তনে। বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় মূল আয়োজন। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন। অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, ভৈরব বন্ধুসভা সব সময় সৃজনশীল আয়োজন করে, তারা পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগায়, শিশুদের হাতে তুলে দেয় রঙিন জামা, পাঠের আসর পাঠচক্রে বছরব্যাপী সক্রিয় রয়েছে। এবারের ফল উৎসবটি তেমনি ভিন্ন ধারার একটি আয়োজন।
টেবিলে সাজানো হয় আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, টরফই, গাব, তরমুজ, তালশাঁস, আনারস, পেয়ারা, ডেউয়াসহ নানা রকমের ফল। বন্ধুদের পাত্রে ফল বিতরণ করেন প্রিয়াংকা, জান্নাতুল মিশু, মহিমা মেধা ও অনুপম। শুরু হয় ফল খাওয়ার পর্ব। সবার চোখেমুখে তৃপ্তির ছোঁয়া, বাড়তি আনন্দ যোগ করে মজাদার দই মাখানো চিড়া। আলোচনা ও খাওয়ার ফাঁকে চলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, পায়ে দিয়ে সোনার নুপুর’ গানে নৃত্য পরিবেশন করেন জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক তানশি নাহার ও দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক মোশাররফ রাব্বি। নাচটি কোরিওগ্রাফি করেন সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন।
উপদেষ্টা ওয়াহিদা আমিন অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘বছরব্যাপী ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন। এবার ভিন্ন ধারার একটি ফল উৎসবে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকতে পেরে ভালো লাগছে।’ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা, উপদেষ্টা আলাল উদ্দিন, লুবনা হক, জনি আলম, রাকিব হোসাইন, কার্যনির্বাহী সদস্য ইকরাম বখশ, সেলিম রেজা, অর্থ সম্পাদক মানিক আহমেদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এরফান হোসেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও জমজমাটভাবে আমরা ফল উৎসব করলাম। আয়োজন ঘিরে ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি। বন্ধুদের মুখের তৃপ্তির হাসি দেখে ভালো লাগছে।’
শ্রাবণের দিন বৃষ্টির গান ছাড়া উৎসব অপরিপূর্ণ। মোশাররফ রাব্বি গেয়ে শোনান ‘আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ গানটি। বাইরের বৃষ্টি আর রাব্বির গান মিলে এক মোহনীয় পরিবেশ তৈরি হয় মিলনায়তনজুড়ে। সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, ‘ফল উৎসব সফল করার পেছনে ছিল আমাদের বন্ধুদের কয়েকটি নির্ঘুম রাত। বাজার করা থেকে শুরু করে পরিবেশন—সবকিছু ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা করেছে। উপদেষ্টা ওয়াহিদা আমিন পলি আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সব সময়। সবশেষে একটি সফল আয়োজন হলো, আমরা তৃপ্ত।’
উপস্থিত ছিলেন ম্যাগাজিন সম্পাদক রাহিম আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফ্রমি হক, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক রাসেল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আনাস খানসহ আরও অনেকে। সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন আফিসা আলী, শরিফুল ইসলাম, আনাস খান, শাদাব, হান্নান হিমু ও অনুপম। বৃষ্টিমুখর দিনে ফলের রসে মুখ রঙিন করে সন্ধ্যায় তৃপ্তির হাসি নিয়ে বাড়ি ফেরেন সবাই।
বইমেলা সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা