‘মানুষের জীবন বাঁচানোর থেকে বড় ভালো কাজ আর হতে পারে না’

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের বেসিক লাইফ সাপোর্ট বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ছবি: শাহরিয়ার নাজিম

কোনো ব্যক্তি পানিতে ডুবে গেলে, তাঁকে উদ্ধার করার পর কী করা হয়, কেউ কি জানেন? সিআইপিআরবির উপনির্বাহী পরিচালক আমিনুর রহমানের এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার দুজন বন্ধু তাঁদের দেখা দুটি ঘটনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তবে কোনোটাই চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় পানিতে ডুবন্ত ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে তোলার প্রাথমিক রেসপন্সের সঠিক পদ্ধতি ছিল না। তাঁরা যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে ওই ব্যক্তিদের প্রাণ হারানোর শঙ্কা ছিল।

প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুদের এ বিষয়ে সঠিক ধারণা ও প্রশিক্ষণ দিতে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা বা বেসিক লাইফ সাপোর্ট-বিষয়ক প্রশিক্ষণ’ কর্মশালা। ৬ জুন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে হওয়া এ কর্মশালায় সহযোগিতা করে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলা দিনব্যাপী এ কর্মশালায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বন্ধুসভার নির্বাচিত বন্ধুরা অংশ নেন।

কর্মশালা শেষে আলোচক ও প্রশিক্ষকদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারীরা
ছবি: বন্ধুসভা

সিআইপিআরবির উপনির্বাহী পরিচালক আমিনুর রহমান বলেন, প্রাথমিক রেসপন্সের কাজ জানাটা দক্ষতা। সমাজের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষও যদি প্রাথমিক রেসপন্সের এই দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তাহলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যাবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে কেউ কাজটা করতে পারবেন। তিনি কর্মশালাটি করার জন্য প্রথম আলো ও বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, এটাই হোক হাজারো পদক্ষেপের শুরু।

কেবল পানিতে ডুবে যাওয়াই নয়, শরীরের কোনো অঙ্গ আগুনে পুড়ে গেলে, হাত-পা ভেঙে গেলে, গলায় কাঁটা আটকে গেলে, অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে, রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ও বজ্রপাত, সাপের কামড় ও কুকুরের কামড়, বিষক্রিয়া কিংবা চোখে আঘাত পেলে আমাদের করণীয় কী? কর্মশালায় এসব বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সিআইপিআরবির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ডা. নওশিন তোরসা ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ডা. মুনমুন আক্তার। তাঁরা এসব বিষয়ের বর্ণনা, ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী এবং সবশেষে ম্যানিকিনের সাহায্যে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন।

কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ
ছবি: বন্ধুসভা

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. রেদোয়ান মাহমুদ রেজার সঞ্চালনায় অতিথির বক্তব্যে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘বন্ধুসভা যে সব সময় ভালো কাজ করে, আজকের কর্মশালাটি তারই প্রমাণ। একজনেরও যদি পথের কাঁটা দূর করা যায়, সেটা অনেক ভালো একটি কাজ।’

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, ‘বন্ধুসভা প্রতিনিয়ত যে ভালো কাজগুলো করে যাচ্ছে, আজকের কর্মশালাটি সেখানে নতুন মাত্রা যোগ করল। আশা করব, যাঁরা আজ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁরা অন্যান্য বন্ধুসভায় গিয়েও এই প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন।’ শিল্প-সাহিত্যচর্চা করা, মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া; পাশাপাশি বন্ধুদের এ ধরনের ব্যক্তিগত দক্ষতাও অর্জন করতে হবে বলে জানান তিনি।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিআইপিআরবির কমিউনিকেশন ম্যানেজার নাহিদ আক্তার দিপা ও ডেপুটি কমিউনিকেশন ম্যানেজার ফারহানা ফেরদৌস।

কর্মশালায় অংশ নিতে পেরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশিক্ষণ নেন। যেমনটা বলছিলেন অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বন্ধুসভার বন্ধু সানজিদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘কর্মশালা থেকে ভালো কিছু শিখতে পেরেছি। আমরা এখন অন্যদের শেখাতে পারব। চেষ্টা করব এই শেখাটা কাজে লাগাতে।’

ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধু সাফিন উজ জামান বলেন, ‘মানুষের জীবন বাঁচানোর থেকে বড় ভালো কাজ আর হতে পারে না। আমরা আজ যা কিছু শিখলাম, এর মাধ্যমে অন্তত কারও জীবন বাঁচানোর অসিলা হতে পারব।’