মনের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অভ্র দাশ ভৌমিক আলোচনা করেন মানসিক স্বাস্থ্য বনাম মানসিক রোগ এবং মনের যত্ন নেওয়ার কৌশল নিয়ে
ছবি: রাসেল রাজ

আমরা সবার নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন। সুস্থ থাকতে চাই প্রতিদিন। কিন্তু সুস্থতা শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, মন ও স্বাস্থ্য ভালো রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। মনের যত্ন নিয়ে আমরা চিন্তা করি না। এর ফলে কখনো মানসিক অবসাদে ভুগি, কখনো বিষণ্ণতা ভর করে আমাদের। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে হলে মনের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।

৮ ডিসেম্বর ভৈরব উপজেলার বঙ্গবন্ধু হলরুমে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইউনিমেড ইউনিহেলথের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতায় এর আয়োজন করে ভৈরব বন্ধুসভা। সঞ্চালনা করেন অর্থ সম্পাদক মানিক আহমেদ।

স্বাগত বক্তব্যে সভাপতি নাহিদ হোসাইন এই কর্মশালার গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম মানসিক বিষণ্ণতায় বেশি ভুগছে। আমরা নিজেকে আরেকজনের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে মন খারাপ করে ফেলি, সব সময় একটা অপ্রাপ্তির মানদণ্ডে নিজেকে দাঁড় করাই। বাহ্যিকভাবে যেমন নিজেকে গোছানো প্রয়োজন, ঠিক তেমনি ভেতর থেকে মনটাকেও ভালো রাখতে হবে।

মনের যত্নে আসক্তি ও মুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের সাইকোথেরাপিস্ট কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিনা বুশরা
ছবি: রাসেল রাজ

মনের যত্নে আসক্তি ও মুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের সাইকোথেরাপিস্ট কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিনা বুশরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই শরীরের দুটি অংশ—শরীর ও মন। আমরা শরীরের ব্যাপারে যত্নবান হলেও মনের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ি। মনের যত্ন নিতে হবে, অনুভব করতে হবে মনের আমিটাকে। সেই আমিটার খেয়াল রাখার দায়িত্ব তোমার। নিজেকে ভালোভাবে জানতে হবে, ভালোবাসতে হবে।’

এরপর তিনি মনকে স্পর্শ করার একটি কৌশল শিখিয়ে দেন। হলরুমে তখন পিনপতন নীরবতা। চোখ বন্ধ করে সবাই মনের খোঁজে হারিয়ে যান। প্রতিটি সেশনের পর প্রশ্নোত্তরপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বে অংশ নেন উপস্থিত শিক্ষার্থী ও বন্ধুরা। রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী কাজী জান্নাতুল ইসলাম উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘ম্যাম, আমি পেরেছি, আমি আমার মনকে স্পর্শ করেছি। এখন থেকে আমার আর মন খারাপ হবে না।’

বন্ধু মোশাররফ রাব্বি অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি যখন চেষ্টা করছিলাম মনের কাছাকাছি যাওয়ার, তখন কী যেন বাধা দিচ্ছিল, ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। আমি আবার চেষ্টা করব।’ এই পর্বে আরও যুক্ত হন ভৈরব বন্ধুসভার প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক নুদরাতুন তোরসা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রশ্নোত্তরপর্ব
ছবি: রাসেল রাজ

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অভ্র দাশ ভৌমিক আলোচনা করেন মানসিক স্বাস্থ্য বনাম মানসিক রোগ এবং মনের যত্ন নেওয়ার কৌশল নিয়ে। তিনি বলেন, ‘মনের অসুখ থাকলে পরিবারকে জানাতে হবে। যেটা পরিবারকে জানাতে পারবে না, সেটা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। কোনোভাবেই হতাশ হওয়া যাবে না।’

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায় বলেন, ‘নানা কারণে মানুষের জীবনে হতাশা আসে। হতাশা আসাটাই স্বাভাবিক। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই হতাশার পরিমাণ অনেক বেশি। কীভাবে তাঁদের হতাশা কাটানো যায়, সেই চিন্তা থেকে এই কর্মশালার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জীবনে কেউ সফল হয় দ্রুত, কেউ একটু দেরিতে; তবে সফলতা আসবেই। তাই হতাশ হওয়া চলবে না। ধৈর্য ধরে জীবন উপভোগ করতে হবে।’

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায় বলেন, ধৈর্য ধরে জীবন উপভোগ করতে হবে
ছবি: রাসেল রাজ

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তরুণদের ভূমিকা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ। তিনি বলেন, ‘চারদিকে তরুণদের মধ্যে কেমন যেন কিছুই ভালো লাগে না বিরাজ করছে। শিক্ষাঙ্গন, কর্মক্ষেত্র, ব্যক্তিগত জীবনে তরুণদের মনে হয় উদ্যমহীন ও নিষ্প্রাণ। মন ভালো না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না। তাই সবার আগে দরকার মনের যত্ন। তরুণেরাই আগামী দিনের শক্তি। তাঁরা সৃজনশীল কাজ করবে সমাজের জন্য, দেশের জন্য।’

কর্মশালায় আরও আলোচনা করেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা, ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা লুবনা হক, বন্ধুসভার ডিজিটাল কো-অর্ডিনেটর শাকিব হাসান, জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল্লাহ সাদেক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাফিন উজ জামান, দপ্তর সম্পাদক জাহিদ ফেরদৌস, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক শারমনি আরা তিশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সভাপতি গাজি ইমরান প্রমুখ।

কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা