বহে বসন্ত নিরবধি

দিনাজপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা সবাই রঙিন সাজে সেজে ঋতুরাজকে বরণ করে নেনবন্ধুসভা

শীতের কুয়াশা মোড়ানো প্রান্তর পাড়ি দিয়ে অবশেষে আমাদের দোরগোড়ায় এসেছে ফাল্গুন। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। দখিনা বাতাসে ভাসছে পাখিদের গান, হৃদয়ের ব্যাকুলতা, কোকিলের কুহু কুহু ডাক তারই জানান দেয়। গাছ থেকে ঝরে পড়ছে পুরোনো যত ধূসর পাতা, আর তার জায়গা বদল করছে নতুন সবুজ কচি পাতা। আজ সেই পত্রপল্লবে, ঘাসে ঘাসে, নদীর কিনারে, কুঞ্জ বীথিকা আর পাহাড়–অরণ্যে বসন্ত এসেছে নব যৌবনের ডাক দিয়ে। প্রকৃতির সঙ্গে সবার মনে ছড়িয়ে পড়েছে বাহারি রঙের ছোঁয়া। শুধু শহরেই নয়, বাংলার গ্রামীণ জনপদেও ঝিরঝির বাতাসে ধরা দেয় বসন্ত।

বসন্তের আগমনে ঋতুরাজকে বরণ করে নিতে ২০ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর বন্ধুসভা আয়োজন করে ‘বহে বসন্ত নিরবধি’ শিরোনামে বসন্ত আড্ডার অনুষ্ঠান। এদিন বন্ধুরা সবাই রঙিন সাজে সেজে ঋতুরাজকে বরণ করে নিতে সমবেত হয় প্রথম আলোর দিনাজপুর অফিসে। অফিস সাজানো হয় বাসন্তী রঙের ফুল ও বিভিন্ন রঙিন কাগজে ফুটিয়ে তোলা ফুল, পাতা ও ঘুড়ি দিয়ে।

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সূচনা হয় আড্ডার। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি শৈশব রাজু। তিনি বলেন, ‘বাঙালির ঐতিহ্যবাহী বা বংশপরম্পরায় আমরা যে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালন করি, এই বসন্তবরণ অনুষ্ঠান অসাম্প্রদায়িক চেতনারই অংশ। বাংলাদেশে আমরা ছয়টি ঋতুর দেখা পাই। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ছয়টি ঋতুর দেখা পাওয়া যায় না, ওখানে চারটি ঋতু হয়। এই আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে আমাদের পরিবেশের যে তারতম্য ঘটছে, পরিবেশের যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে, সে জায়গাগুলোকে আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বা বাঙালির চেতনার মধ্যে এগুলো সম্পৃক্ত করে রাখার জন্যই আমাদের এ আয়োজন। যাঁরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি, প্রত্যেককে সাধুবাদ, আন্তরিক অভিনন্দন ও বসন্তের শুভেচ্ছা।’

বন্ধুরা একে একে বিভিন্ন ধরনের গান, নাচ ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন
বন্ধুসভা

বসন্তের মুহূর্ত প্রাণবন্ত করতে বন্ধুরা একে একে বিভিন্ন ধরনের গান, নাচ ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। নাচের মাধ্যমে আয়োজনকে প্রাণবন্ত করেন বন্ধু জুঁই আফরোজ ও দিয়া বসাক। গান ও নাচের তালে তালে আয়োজনকে ভিন্নমাত্রা দিতে উপস্থিত সবাই মেহেদি উৎসবে মেতে ওঠেন। মেহেদির সংস্পর্শে বন্ধুদের সবার হাত রাঙিয়ে তোলার দায়িত্ব পালন করেন বন্ধু শেফা। বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি বন্ধুরা পিছিয়ে নেই সংস্কৃতিতেও। এই আয়োজনে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। বসন্ত আড্ডার সঞ্চালনায় ছিলেন সহসাংগঠনিক সম্পাদক শবনম মুস্তারিন। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ব্রততী বিশ্বাস। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সভাপতি শুভ রায়, সহসভাপতি সুব্রত সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরঞ্জন সিংহ, দপ্তর সম্পাদক খেয়া রানী, বন্ধু বেলালুর রহমান, সাব্বির রহমান, কৃষ্ণ রায়, বিরোশ, তারাজুল, সন্দীপ, অভ্র প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা