সাহস করে ছবি তোলার কথা আর বলতে পারিনি

জাককানইবি বন্ধুসভার বন্ধুদের র‌্যাম্প প্রদর্শনী
ছবি: শাহরিয়ার প্রান্ত

রাত ১০টার দিকে তাসনিমুল হকের ফোন, ‘ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন্ধু উৎসবে পারফর্ম করতে হবে। স্কুল মোড়ে আয়, কথা আছে।’ যাওয়ার পর বলে, চল দুজনে ডুয়েট গান করি। হলে গিয়ে প্র্যাকটিস করতে হবে। এমন সময় নামল বৃষ্টি। হলে আর যাওয়া হয়নি, রাস্তায় আটকা পড়ে যাই। প্র্যাকটিস না হওয়ায় এবং সময়ের অভাবে ডুয়েট গানের পরিকল্পনাটাও বাতিল করতে হলো। ঘটনাটি ৮ সেপ্টেম্বর রাতের। এর এক দিন পরই যে অনুষ্ঠান।

পরদিন রাতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সভাপতি ফোন দিয়ে সবাইকে বলে দিলেন ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় স্টেশনে থাকতে হবে। সেখান থেকে ট্রেনে করে ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা এবং সবাই যেন ফরমাল ড্রেস পরে আসে।
বন্ধু উৎসবে যাব, অসংখ্য বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হবে, সেই উত্তেজনায় রাতে ঠিকভাবে ঘুম হয়নি। তাই ভোরে স্টেশনে পৌঁছাতে আমার দেরি হয়ে যায়। গিয়ে দেখি সবাই ফরমাল ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছে, কেবল সভাপতি পরেননি। তিনি পোলো শার্ট পরে এসেছেন। সবার নজর তখন ওনার দিকে! জামালপুর বন্ধুসভার বন্ধুরাও ততক্ষণে এসে উপস্থিত। তাঁরাও আমাদের সফরসঙ্গী।

জামালপুর বন্ধুসভার পারফরম্যান্স
ছবি: শাহরিয়ার প্রান্ত

ট্রেনের টিকিট পেলাম না, দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তবে আমার ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন ছিল। এক মুরব্বি একটা বড় বস্তা নিয়ে ট্রেনে ওঠেন। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হয়তো ওনার মায়া হলো। বস্তার ওপর বসার অনুমতি দিলেন। ট্রেনযাত্রা বেশ ভালো উপভোগ্য হয়ে ওঠে। জামালপুরের বন্ধুরা মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট সঙ্গে করে নিয়ে নেন। পুরো পথেই গান-আড্ডায় সময় কেটে যায়। কখন যে ময়মনসিংহ পৌঁছে গেলাম, টেরই পেলাম না।

ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে নেমে প্রথমেই হালকা নাশতা সেরে নিল কেউ কেউ। দুধ চায়ের সঙ্গে রুটি। এরপর অটোরিকশাযোগে উৎসবস্থলে। সেখানে গিয়ে ছবি তোলার উৎসব শুরু হয়ে যায়! কার আগে কে ছবি তুলবে! অনুষ্ঠান তখনো শুরু হয়নি। তার আগে সবার হাতে অনেকগুলো গিফট দেওয়া হলো। এর মধ্যে চাবির রিং ও চরকির ফ্রি সাবস্ক্রিপশন সবচেয়ে ভালো লেগেছে। একটু পর বন্ধু আল আমিন জানাল, ক্ষুধা লাগছে। কিন্তু আশপাশের কেউ তখনো খাবার নেয়নি বলে আমরাও নিলাম না। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইম বলল, ধৈর্য ধরতে। তাই করলাম। কিছুক্ষণ পর সবার সঙ্গে সকালের নাশতা নিলাম। খাবার ছিল ডিম খিচুড়ি।

উৎসব শেষে গ্রুপ ছবি না হলে যে অপূর্ণতা থেকে যায়
ছবি: শাহরিয়ার প্রান্ত

নাশতা পর্ব শেষে ‘বন্ধুদের কথা’ সেগমেন্টের ঘোষণা দিলেন জাতীয় পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায়। বক্তব্য দেব বলে মনে মনে ভেবে রাখি। কিন্তু ভাগ্যকে একটু দোষ দিতেই হবে। আমাদের বক্তব্যের ঠিক আগমুহূর্তে বিদ্যুৎ চলে যায়, মাইক বন্ধ। তাই শুভেচ্ছা আর ধন্যবাদ দিয়েই বক্তব্য শেষ করতে হলো। একটু পরেই অতিথিরা এলেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হলো বেলুন উড়িয়ে। একজন ঘোষণা করলেন, উদ্বোধনের ছবি নাকি পত্রিকার পাতায় যাবে। তাই ঠেলেঠুলে সামনে যেতে চাইলাম। কিন্তু এই প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের কেউই ফিট ছিলাম না। তাই দূরে দাঁড়িয়ে সবার ছবি তোলা দেখলাম। এরপর অতিথিদের বক্তব্য। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। ওনাকে দেখা এবং কথা শোনার অনেক ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তিনি আসতে পারেননি। একটু খারাপ লেগেছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর একটা সেমিনার হয়। বন্ধু সাইমের ভাষায় ওই এক ঘণ্টা তার এই অনুষ্ঠানের সেরা এক ঘণ্টা।

দুপুরের খাবারের সময় হলে বিরতি দেওয়া হয়। বিরতি শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। সবাই অনেক ভালো ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিল। আমাদের পক্ষ থেকে তাসনিমুল হক পারফর্ম করল। ‘তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা’ গানটি গেয়ে শোনান। এই পর্বের এক ফাঁকে দেখলাম মৌসুমী মৌ আপু বাইরে যাচ্ছে। শাওন বলছিল, চল আপুর সঙ্গে ছবি তুলে আসি। কিন্তু হঠাৎ করে কিশোর বয়সের লজ্জা এসে জেঁকে বসল। সাহস করে ছবি তোলার কথা আর বলতে পারিনি। সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামে। ধীরে ধীরে উৎসবও শেষ হয়ে আসে।

এবার ফেরার পালা। অনেক উপভোগ্য একটা দিন শেষে তৃপ্তি নিয়ে নীড়ে ফিরতে হবে। রেলস্টেশনে এসে মাত্র তিনটা টিকিট পেলাম। সবার বসার ব্যবস্থা করা গেল না। এবার বস্তাওয়ালা কাউকেও পাইনি। দাঁড়িয়ে-বসে এবং আড্ডা দিতে দিতে জামালপুর ফিরে এলাম।

সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা