‘আমিই আমাকে স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসতে পারি’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালা শেষে সনদ হাতে অংশগ্রহণকারীরাছবি: বন্ধুসভা

মন আমাদের শরীরের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। গুরুতর অসুস্থতা এড়াতে যেভাবে শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিই, তেমনই মানসিক স্বাস্থ্যের অসুস্থতা এড়াতে আমাদের অবশ্যই মনের যত্ন নিতে হবে। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য একজন মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। একজন ব্যক্তি কীভাবে চাপ মানিয়ে নেবেন, অন্যের সঙ্গে মিশবেন ও সুস্থ জীবন যাপন করবেন—সবকিছুতেই মানসিক স্বাস্থ্যের ভূমিকা অপরিসীম।

১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা আয়োজিত মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালায় এ কথা বলেন বক্তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের গ্যালারি ২-তে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহিনুর রহমান
ছবি: বন্ধুসভা

কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহিনুর রহমান ও ঢাকা সিটি হাসপাতালের সাইকোথেরাপিস্ট কনসালট্যান্ট মাহমুদা মহসিনা বুশরা। আলোচক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাকিত মল্লিক ও বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. রেদওয়ান মাহমুদ রেজা।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সব কুসংস্কার, নেতিবাচক বদ্ধমূল ধারণা দূর করে আশার সঞ্চার করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দিলে আমরা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব না। তাই এখনই সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার।’

প্রশিক্ষণ দেন ঢাকা সিটি হাসপাতালের সাইকোথেরাপিস্ট কনসালট্যান্ট মাহমুদা মহসিনা বুশরা
ছবি: বন্ধুসভা

বর্তমান সময়ের মানসিক রোগ নিরাময়ে, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনে একজন মানুষ হিসেবে, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করেন সাইকোথেরাপিস্ট কনসালট্যান্ট মাহমুদা মহসিনা বুশরা। এ ছাড়া তিনি প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক সমস্যার কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ প্রদান করেন।

চবি বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এখলাস বিন সুলতান অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘একটি চমৎকার সেশন উপভোগ করেছি। নিজেকে জানতে, নিজেকে বুঝতে শিখিয়েছে আজকের কর্মশালা। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যার অন্যতম কারণ হতাশা ও দুশ্চিন্তা। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর করা সম্ভব। এই কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় শিখল। কীভাবে মানসিকভাবে ভালো থাকতে হবে, নিজেকে ভালো রাখতে হবে আমরা তা শিখলাম।’

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশ
ছবি: বন্ধুসভা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের (২০২৩-২৪) সেশনের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘এক জনম অন্যকে চিনতে, জানতে, বুঝতে, খুশি করতে ও ভালোবাসতে চলে যায়। অন্যের পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আলোচনা-সমালোচনার ভেতরে নিজেকে সাজাতে গিয়ে হারিয়ে ফেলি। নিজেকে নিজের মতো করে কখনো সাজানো হয় না, বোঝা হয় না, ভালোবাসা হয় না। আত্মবিশ্বাস ও সম্মান হারিয়ে নিজেই বরং নিজেকে ঘৃণা করতে থাকি শতবার। আর নয়!

এ কর্মশালা আমাকে শিখিয়েছে এ শরীর ও মন আমার। এই আমি আমার। আমি আমার সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানি। আমিই আমাকে স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসতে পারি। আমিই হতে পারি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুটি।’

চবি বন্ধুসভার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক ফাহমিদা ফিমা ও বন্ধু বর্ণিক বৈশ্যর সঞ্চালনায় কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আলী আকরাম, সহসভাপতি নুসরাত পাইরিন, বন্ধু তন্ময় দত্ত মিশু, অর্থ সম্পাদক রওশনা আরা রব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক‌ আহনাফ হাসান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিক সরকার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিনয় সূত্রধর, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক পপি ভৌমিক, কার্যনির্বাহী সদস্য মনোরঞ্জন রায়সহ অন্য বন্ধুরা।

প্রচার সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা