জ্যৈষ্ঠ হচ্ছে ফলের মাস। এ মাসে ফলে ফলে ভরে ওঠে পুরো দেশ। গ্রীষ্মের একদিকে যেমন রয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে আছে রঙিন ফলের সমাহার। চারপাশের এত রঙিন ফলের সমাহার আর তা নিয়ে উৎসব হবে না, তা কী করে হয়! সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলামের কাব্যিক উপস্থাপনার মাধ্যমে এভাবেই শুরু হয় জামালপুর বন্ধুসভার ফল উৎসব ২০২৪।
‘রঙিন উত্তপ্ত মধুমাসে বন্ধুরা মাতবে ফলের উল্লাসে’ স্লোগানে ৭ জুন জামালপুর জেলা শহরের হর্টিকালচার সেন্টারে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি আবদুল আজিজ বলেন, জামালপুর বন্ধুসভা বছরব্যাপী বিভিন্ন উৎসব করে থাকে। তারই অংশ আজকের ফল উৎসব। তিনি এ উৎসবের জন্য বন্ধুদের ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও যাতে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জামালপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, তিনি প্রথম থেকে জামালপুর বন্ধুসভার সঙ্গে ছিলেন, আছেন এবং আজীবন থাকবেন। এ আয়োজনের সফলতা কামনা করেন তিনি।
অতিথিদের বক্তব্য শেষে তাঁরা ফলের স্টল পরিদর্শন করেন। পরে তাঁদের ফল খাওয়ানো হয়। সবশেষে ফল খাওয়ায় মেতে ওঠেন তাঁরা। উৎসবে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, জামরুল, পেয়ারা, পেঁপে, বাঙ্গি, সফেদা, কলা, খেজুর, আতাফল, তাল, তরমুজ, কামরাঙা, করমচা, ড্রাগন ফল, কতবেল, ডালিমসহ ২০ প্রজাতির ফল ছিল।
এরপরই শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঞ্চালনা করেন সহসভাপতি ডা. কাভি সেকান্দার আলম। এই পর্বের শুরুতেই ‘ঢেঁকি নাচে ধাপুর–ধুপুর’ গানের ছন্দে নৃত্য পরিবেশন করেন বন্ধু মেহনাজ শ্রাবন্তী ও ফাতেমা তুজ জান্নাত। কবিতা আবৃত্তি করেন বন্ধু সাদিয়া জেরিন। তিনি আবৃত্তি করেন কবি করুনুজ্জামের কবিতা ‘হাট্টিমাটিমটিম’। আবৃত্তি শেষে গান নিয়ে আসেন ডা. কাভি সেকান্দার আলম ও প্রত্যাশা পাল। সম্মিলিত কণ্ঠে দুটি গান পরিবেশন করেন বন্ধু লামিয়া আক্তার, জান্নাতুল মাওয়া ও প্রত্যাশা পাল। গান শেষে আবারও নৃত্য, পরিবেশন করেন বন্ধু তাসকিন মাহমুদ ও মেহনাজ শ্রাবন্তী।
সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় রম্যবিতর্ক। বিষয় ছিল ‘ফলের রাজ্যে কে সেরা’। বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপদেষ্টা হিসাম আল মহান্নাভ। বিতর্কে অংশগ্রহণকারী ও তাঁদের বিষয়বস্তু যথাক্রমে কামরুল হাসান-লিচু, ফাহিম মোনায়েম-বাঙ্গি, রুবেল হাসান-কাঁঠাল, সনেট মিয়া-কলা, মেহনাজ শ্রাবন্তী-তরমুজ ও বায়েজিদ বোস্তামি-আনারস। বিতর্কের জন্য সময় ছিল আড়াই মিনিট।
রম্য বিতর্কে কাঁঠালকে প্রতিনিধিত্ব করা রুবেল হাসান বলেন, ‘জীবনানন্দ যদি জানতেন একবিংশ শতাব্দীর ২০২৪-এ এসে বাঙ্গি, তরমুজের মতো সবজি এবং লিচু-কলার মতো প্রজা শ্রেণির ফলেরা তাকে ক্ষমতার মসনদ থেকে নামানোর ষড়যন্ত্র করবে, তাহলে তিনি বনলতা সেনকে নিয়ে কবিতা লিখতেন না। তিনি কাঁঠাল নিয়ে কবিতা লিখতেন, আমাকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল বাংলার কাঁঠাল।’
লিচুকে প্রতিনিধিত্ব করা কামরুল হাসান বলেন, ‘আপনি যদি করতে চান মহান কিছু, এখনই কিনে ফেলুন একগুচ্ছ লিচু।’
এ রকম বাহারি সব রম্য রচনা করে বিতর্ককে প্রাণবন্ত করে তোলেন অন্য বিতার্কিকেরা। ফলাফল ঘোষণা করেন বিচারক হিসাম আল মহান্নাভ। তিনি বলেন, জামালপুর বন্ধুসভা এর আগে অনেক অনুষ্ঠান করেছে, কিন্তু কখনো ফল উৎসব করেনি। প্রথমবারের মতো এ আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। হিসাম আল মহান্নাভ বলেন, বিতর্কে সবাই ভালো করার চেষ্টা করেছেন এবং প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করেছেন, যা দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখলেই বোঝা যায়। তবে তিনি কোনো নির্দিষ্ট ফলকে বিজয়ী ঘোষণা না করে সব ফলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
জামালপুর বন্ধুসভার সভাপতি জাকারিয়া জাকি বলেন, ‘জামালপুর বন্ধুসভার এই কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজন করতে পেরেছে। আজকের ফল উৎসবও একটি সফল ও ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। এ আয়োজনকে সার্থক করায় বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই।’
উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা নাজমুল হাসান, মহসিন কাকন, জাহাঙ্গীর সেলিম, মোহাম্মদ শামিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন, ডা. কানিজ ফাতেমা তায়েবা, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান অপূর্ব, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক কামরুল ইসলাম, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক নাহিদুল হাসান, ম্যাগাজিন সম্পাদক সুমাইয়া সরকার, বইমেলা সম্পাদক তাসকিন মাহমুদ, বন্ধু জান্নাতুল জুঁই, সাদিয়া জেরিন, বিজয় হাসান, অপ্সরা পাল, মুস্তাকিম বিল্লাহ, লামিয়া আক্তার, ফারহানা জেরিন, সাব্বির হোসেন, সাজ্জাদ শান্তসহ আরও অনেকেই।
বন্ধু, জামালপুর বন্ধুসভা