হেমন্তবেলায় বন্ধুত্বের রঙিন মিলনমেলা

হেমন্তকে বরণ করতে ড্যাফোডিল বন্ধুসভার ‘একটি সোনালি বিকেল ২০২৫’
ছবি: বন্ধুসভা

বাতাসে শীতের আগমনী বার্তা, পাতায় পাতায় জমে থাকা শিশির আর কুয়াশা ভেদ করে ছড়িয়ে পড়া সূর্যকিরণ—এই মনোরম সকালে প্রকৃতি জানিয়ে দেয় হেমন্তের আগমন। ঋতুর এই নান্দনিক রূপকে বরণ করতে প্রতিবছরের মতো এবারও ড্যাফোডিল বন্ধুসভা আয়োজন করে দিনব্যাপী উৎসব ‘একটি সোনালি বিকেল ২০২৫’।

১৩ ডিসেম্বর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বনমায়া প্রাঙ্গণের সবুজে ঘেরা পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন। সকাল ৯টা থেকেই উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। শীতল সকালের বাতাসে ভেসে আসে নানা রকম পিঠার ঘ্রাণ। বন্ধুরা নিজেদের হাতে তৈরি বাহারি পিঠা নিয়ে হাজির হন, কেউ কেউ বসান পিঠার স্টল। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে জমে ওঠে ক্রেতাদের ভিড়। পিঠার পাশাপাশি উৎসবের আরেকটি আকর্ষণ ছিল মেহেদি উৎসব। কয়েকজন বন্ধু রঙিন মেহেদির স্টল সাজিয়ে বসেন। যাঁরাই যাচ্ছেন, তাঁদের হাত রাঙিয়ে দিচ্ছেন নকশায় নকশায়। হাসি, গল্প আর আড্ডায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো বনমায়া প্রাঙ্গণ।

সংগীত পরিবেশনা
ছবি: বন্ধুসভা

একই সঙ্গে চলতে থাকে বই বিনিময় উৎসব। শিক্ষার্থীরা নিজেদের পড়া একটি বই জমা দিয়ে সংগ্রহ করেন নতুন আরেকটি পছন্দের বই। বইয়ের পাতা ও ভাবনার আদান-প্রদানে তৈরি হয় এক ভিন্ন রকম আনন্দ। দিনব্যাপী এ আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, আবৃত্তি ও নানা পরিবেশনায় উৎসবটি হয়ে ওঠে বন্ধুত্ব, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার মিলনমেলা।

ছিল ‘রাইটিং স্কিলস ইনহেন্সমেন্ট’ শিরোনামে বিশেষ সেমিনার। আলোচক হিসেবে ছিলেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক। তিনি বলেন, ‘ড্যাফোডিল বন্ধুসভা ঢাকার মধ্যে তো সেরা বটে, তবে সারা দেশে যতগুলো বন্ধুসভা আছে তাদের মধ্যেও অন্যতম সেরা। ব্যস্ততা আর দূরত্বের কারণে সব সময় আসা না হলেও কার্যক্রমগুলো দেখি। ড্যাফোডিল বন্ধুসভার সব কার্যক্রমই প্রশংসনীয়।’

ড্যাফোডিল বন্ধুসভার কো-কনভেনর আহসানউল্লাহ সজীব বলেন, ‘ড্যাফোডিল বন্ধুসভা সব সময় চমৎকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আশা করব, আগামীতেও এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’

নৃত্য পরিবেশনা
ছবি: বন্ধুসভা

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অমিত চক্রবর্তী বলেন, ‘ড্যাফোডিল বন্ধুসভার প্রত্যেক সদস্য অনেক কর্মঠ। তাদের পরিচয় তাদের নামে নয়, তাদের পরিচয় পাওয়া যায় তাদের কাজে।’

ড্যাফোডিল বন্ধুসভার উপদেষ্টা কবি বিণয় বর্মন একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। আবৃত্তির পর তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অতি সুন্দর, শিক্ষার্থীরাও বন্ধুত্বপূর্ণ। এই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের আসল আমেজ খুঁজে পাই বন্ধুসভায়।’

বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক পর্ব। নাচ ও গান পরিবেশনা, কবিতা আবৃত্তি ও অভিনয় প্রদর্শনী দিয়ে সাজানো হয় এই পর্ব। সঞ্চালনা করেন বন্ধু রিফাতুল ইসলাম ও সামিহা রহমান। সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল নানা ধরনের চমক। ওপার বাংলার উত্তম কুমার ও ইন্দিরা, আবার এপার বাংলার মহান পরিচালক হুমায়ূন আহমেদের বাকের ভাই ও মোনা। একদিকে ভালোবাসার অসাধারণ চিত্র, অন্যদিকে না পাওয়া ভালোবাসার সরলতা অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন বন্ধু নাঈম হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া লিমা এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসাভভির সাকির ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক তানহা তাসনিম।

ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বার্ষিক ম্যাগাজিন ‘অদম্য ২৫’-এর মোড়ক উন্মোচন
ছবি: বন্ধুসভা

ড্যাফোডিল বন্ধুসভার অনুষ্ঠান মানেই বর্তমানদের সঙ্গে সাবেকদের মিলনমেলা। এবারও কর্মব্যস্ত দিনের সব ব্যস্ততা একপাশে রেখে বন্ধুত্বের টানে ছুটে আসেন অনেকেই। এ পর্যায়ে শিক্ষক ও অতিথিরা কার্যনির্বাহী কমিটি- ২০২৫ এর সব সদস্যের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘এই বছর এটাই হয়তো আমার শেষ, তবে পথচলা এখনো অনেক বাকি আছে। চেষ্টা করেছি বন্ধুসভাকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চমৎকার কিছু অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য।’

শেষে ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বার্ষিক ম্যাগাজিন ‘অদম্য ২৫’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সম্পাদনা করেন ম্যাগাজিন সম্পাদক মোহাম্মদ ত্বোয়া-হা।

সহসাংগঠনিক সম্পাদক, ড্যাফোডিল বন্ধুসভা