ক্যারিয়ার গাইডলাইন ও সফলতার গল্প

ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা
ছবি: বন্ধুসভা

আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। সেই স্বপ্ন পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই চেষ্টা করে যেতে হবে। অনেকে ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে এসে। তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই প্রথম বর্ষ থেকেই সচেতন হতে হবে। ১৪ অক্টোবর মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা এবং মাভাবিপ্রবি ক্যারিয়ার ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ক্যারিয়ার গাইডলাইন’ কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

এদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ও রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সেমিনার কক্ষে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. ইকবাল মাহমুদ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুল কাদের মিয়াহ ও সহকারী প্রক্টর শাকিল মাহমুদ শাওন।

কর্মশালা শেষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪১তম বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত পাঁচজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মাভাবিপ্রবি বন্ধুসভার সভাপতি আবু হানিফ। অধ্যাপক মো. ইকবাল মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আজ যাঁরা ক্যারিয়ারে সফল হয়ে আমাদের মধ্যে এসেছেন, তাঁরা আমাদের গর্ব। তাঁদের মতো অন্য যাঁরা আমার সামনে উপস্থিত হয়েছেন, তাঁরাও ভবিষ্যতে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন, এই প্রত্যাশা করি।’

সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুল কাদের মিয়াহ বলেন, ‘আজ যাঁরা বিসিএস ক্যাডার হয়ে আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা।’ সহকারী প্রক্টর শাকিল মাহমুদ শাওন তাঁর বক্তব্যে প্রথমেই বন্ধুসভা ও ক্যারিয়ার ক্লাবকে এমন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে ছিলেন ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন রাইন, সোয়েব মুহাম্মাদ; প্রশাসন ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্ত জাহিদ হাসান অপু, আশরাফুজ্জামান পলিন ও আহসান হাবিব নিষাদ।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা
ছবি: বন্ধুসভা

শুরুতেই দেলোয়ার হোসেন রাইন বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের স্মৃতিচারণা করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমিও তোমাদের মতো কোনো এক কাকভেজা শীতের সকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম। এখান থেকে আইসিটি বিভাগে অনার্স শেষ করার পর একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করি। বিভিন্ন কাজে যখন সহকর্মী বা অন্যরা আমাকে কিছু বলতেন, তখন মনে হতো, আমি আরও ভালো কিছু করতে পারি। ভালো জায়গায় যেতে পারি। দেশের জন্য আরও বেশি কিছু করতে পারি, সেখান থেকেই চিন্তা আসে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে চাকরি করার কথা। আমি চাই, তোমরাও এভাবে স্বপ্ন দেখো এবং আগামী দিনে সফল হও।’

অন্যদের মতো জাহিদ হাসান অপুও স্বপ্ন দেখতেন বিদেশে যাওয়ার। বিদেশে গিয়ে পিএইচডি করবেন। সেই স্বপ্ন একটা সময় বাদ দেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ব্যাংকের চাকরিতে ঢুকলাম, তখন থেকে দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা তৈরি হলো। সেখান থেকে বিসিএসে আসা। তোমাদের উদ্দেশে বলতে চাই, জীবনে চলতে গেলে একটা পরিচয় দরকার হয়, যেটা আমাদের তৈরি করে নিতে হয়। এখন থেকেই প্রস্তুতি নাও, তোমরাও পারবে।’

তবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা শেষ করে কেবল বিসিএসকেন্দ্রিক হতে নিষেধ করেছেন আশরাফুজ্জামান পলিন। তিনি বলেন, ‘তোমরা যারা আছ, তারা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য হলেও পড়ালেখা শেষ করে একটা চাকরি শুরু করে দাও, যেখান থেকে তুমি বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবে। চাকরি তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে।’

মাভাবিপ্রবি বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোয়েব মুহাম্মাদ। তিনি মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করেন। পাশাপাশি তিতাসে চাকরি করেছেন। সোয়েব মুহাম্মাদ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে বন্ধুসভায় কাজ করা ভাইভা বোর্ডে যে সাহায্য করেছে, সেসব বিষয় তুলে ধরেন।

আহসান হাবীব নিষাদ বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে তিনি মাত্র ২.৯২ সিজিপিএ নিয়ে পাস করেছেন। আর এখন প্রশাসন ক্যাডারে। আহসান হাবীব নিষাদ বলেন, ‘সংগঠনে কাজ করায় আমার সবচেয়ে বড় যে উপকার হয়েছে, সেটা হলো ভাইভা বোর্ডে আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।’

সভাপতি, মাভাবিপ্রবি বন্ধুসভা