কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান শুনলে আমাদের মধ্যে ভালো লাগার অনুভূতি হয়, কবিতা আবৃত্তি করলে বা শুনলে মনের মধ্যে সুন্দর বার্তা ছড়ায়। কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক যেমন বলছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কয়েক হাজার কবিতা-গান রয়েছে। এসবে নেগেটিভ কথা খুব কম। উনি মনে করতেন, পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে, সব মানুষের ভালোর জন্য। কোনো কিছুর মধ্যে অকল্যাণ দেখতে পেতেন না। তবে একবারেই যে নেগেটিভ চিন্তা করেননি, তা নয়। এ নিয়ে কয়েকটি ঘটনাও আছে। অবশ্য পজিটিভ চিন্তার দিকটাই তাঁর বেশি ছিল।’
১৪ মে সন্ধ্যায় বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের সভাকক্ষে ‘সুন্দর, তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে’ শিরোনামে সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ, ঢাকা মহানগর, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর, কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন বন্ধুসভার অসংখ্য বন্ধু।
সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার দপ্তর সম্পাদক মেঘা খেতান ও অর্থ সম্পাদক অনিক সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধু ইফাদ হাসানের কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপরই ‘আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে’ গানের ছন্দে নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভার বন্ধু প্রমা রানী তালুকদার।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে চলে অনুভূতি জানানো পর্ব। শুভেচ্ছা বক্তব্যে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে, বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে অবদান রেখে গেছেন, তা অনস্বীকার্য। রবীন্দ্রনাথ মানুষের কথা বলতেন, ন্যায়ের কথা বলতেন। তিনি কেবল প্রেমের কবি নন, কবিগুরু মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা, শিক্ষা, নারীর অগ্রযাত্রা নিয়ে কাজ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে ভালোর সঙ্গে চলার কথা বলেছেন, আলোর কথা বলেছেন।’
বন্ধুসভার অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন পর এসেছেন সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র ছায়ানটের শিক্ষক তাপসী রায়। রবীন্দ্রসংগীত চর্চার শুরুর দিকে স্মৃতিচারণা করেন তিনি। পরে ‘কতবার ভেবেছিনু’ গানটি গেয়ে শোনান। কবিতা আবৃত্তি করেন অতীশ দীপঙ্কর বন্ধুসভার বন্ধু নূপুর। শেখ সাজিদা আঞ্জুমের নেতৃত্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার একদল বন্ধু দলীয় কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানের এই পর্বে উপস্থিত হন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বন্ধুদের উদ্দেশে বলেন, ‘বেশি বেশি রবীন্দ্রনাথ পাঠ করুন, তাঁর গান শুনুন। রবীন্দ্রনাথের নাটকগুলোও খুব ভালো। নাটকগুলো দেখেন, মঞ্চস্থ করেন, নিজেরা অভিনয় করুন।’ ঠিক এমন সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসেন মডেল ও অভিনেত্রী তানজিন তিশা। বন্ধুসভায় আসতে পেরে নিজের ভালো লাগার অনুভূতির কথা জানান তিনি।
আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ, সহসভাপতি মাহবুব পারভেজ, মোহাম্মদ আলী ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. রেদোয়ান মাহমুদ রেজা, সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বুশরা ও সাধারণ সম্পাদক নাঈমা সুলতানা।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলে সাংস্কৃতিক পর্ব। ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানের ছন্দে নৃত্য পরিবেশন করেন ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বন্ধু জাকিয়া লিমা, ‘মাঝে মাঝে তব’ গানের সুরে অনুষ্ঠানস্থল জমিয়ে তোলেন বন্ধু ফাহিম শাহরিয়ার। বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধু সিফাতুল্লাহ গেয়ে শোনান ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’ গানটি। জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের কার্যনির্বাহী সদস্য হৃদয় সৈকত যখন তাঁর কণ্ঠে গানের সুর তোলেন, পুরো সভাকক্ষে এর আবেশ ছড়িয়ে পড়ে। উপস্থিত সবাই কণ্ঠ মেলান।
ঈদুল ফিতরের পর এটাই ছিল জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে সশরীর অনুষ্ঠিত কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাই রবীন্দ্রজয়ন্তী হলেও অনুষ্ঠান পরিণত হয় মিলনমেলায়। বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ বলছিলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এমন অনুষ্ঠান আরও আয়োজন করা হোক।