যেসব গুণাবলী অর্জন করলে আপনিও দিতে পারবেন নেতৃত্ব

নেতৃত্ব মানে নিজেকে গড়ে তোলা ও অন্যদের পথ দেখানোছবি: এআই/বন্ধুসভা

নেতৃত্ব, দায়িত্ব ও লক্ষ্যবান জীবনের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অনেকেই মনে করেন, ভালো ফল জীবনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বাস্তবতা হলো, আপনি যদি নিজের ভাব প্রকাশ করতে না জানেন, যদি আপনার মধ্যে যোগাযোগ দক্ষতা না থাকে, তাহলে উচ্চ সিজিপিএও অনেক সময় মূল্য হারায়। এ জন্য দরকার সফট স্কিল চর্চা—যার মধ্যে পড়ে: যোগাযোগ, নেতৃত্ব, সমালোচনায় সহনশীলতা, টিমওয়ার্ক, আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রকাশের সামর্থ্য।

নেটওয়ার্কিং হলো শক্তি
বর্তমান সময় ডিজিটালের যুগ। তাই লিংকডইন বা অন্য পেশাগত প্ল্যাটফর্মে নিজের প্রোফাইল গড়ে তোলা জরুরি। পেশাদার নেটওয়ার্ক তৈরি হলে সুযোগের দরজা খুলে যায়, মতবিনিময়ের পথ তৈরি হয় এবং আপনার কাজের মূল্যায়ন বাড়ে।

নেতৃত্ব পদবি নয়, একটি অর্জন
প্রতিটি ম্যানেজার হয়তো লিডার নয়, কিন্তু প্রতিটি লিডার ম্যানেজার হতে পারে। কেননা, ম্যানেজার একটি পদবি, কিন্তু লিডারশিপ হলো অর্জন, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি।

নেতৃত্ব মানে শুধু নির্দেশ দেওয়া নয়; নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব নেওয়া। নেতৃত্ব মানে বোঝা—মানুষ কী চায়, কীভাবে তাদের অনুপ্রাণিত করা যায়। একজন সত্যিকারের নেতা সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ব্যর্থতাকে ভয় পান না এবং সমালোচনায় ভেঙে পড়েন না।

একজন নেতার কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য—
• ভিশনারি: কেবল বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে হবে। লক্ষ্য ঠিক রেখে পথচলা।
• শৃঙ্খলাবান: নিজেকে নিয়মের মধ্যে রাখলে অন্যরা আপনাকে অনুসরণ করবে।
• যোগাযোগ দক্ষ: মানুষকে অনুপ্রাণিত করা, প্রভাবিত করা ও স্পষ্টভাবে তথ্য পৌঁছানো—এগুলো একজন নেতার মূল গুণ।
• সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ: কঠিন সময়েও পিছিয়ে না গিয়ে সাহসের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।
• সমালোচনাকে সহ্য করার মানসিকতা: নেতার কাজে সমালোচনা আসবে, তাকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হয়।

ব্যর্থতা মানে শেষ নয়, শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ
জীবনের পথে ব্যর্থতা আসবেই। সেটিকে ভয় না পেয়ে শিক্ষার সুযোগ হিসেবে নিতে হবে। যাঁরা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন, তাঁরাই একদিন ঘুরে দাঁড়ান। হাল না ছেড়ে, লক্ষ্যে অটল থাকা নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে লক্ষ্য
লক্ষ্য ছাড়া স্বপ্ন দেখা কেবল কল্পনা মাত্র। স্বপ্ন বাস্তব করতে হলে সেটিকে লক্ষ্যে রূপ দিতে হবে। তার জন্য লাগবে নিয়ম, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্য। শৃঙ্খলার বিকল্প নেই। একজন অনুশাসনহীন মানুষ কখনোই একজন সত্যিকারের নেতা হতে পারেন না।

নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব
নেতৃত্ব একদিনে তৈরি হয় না। এটা সময় নিয়ে, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, চর্চা করে গড়ে তুলতে হয়। এতে যেমন দক্ষতা লাগে, তেমনি দরকার শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস। এ ক্ষেত্রে নেতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য—
ভালো শ্রোতা হওয়া
উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা
কাউকে কাজ দিলে সেটার ফলোআপ বা ফিডব্যাক নেওয়া
স্মার্টফোন ও প্রযুক্তিকে স্মার্টলি ব্যবহার
মানুষের সম্মান অর্জন করার মানসিকতা
ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার ক্ষমতা

সবাইকে সন্তুষ্ট করা যাবে না—এটাই বাস্তবতা
নেতৃত্বের পথে বাধা আসবেই। কেউ কেউ আপনাকে ভুল বুঝবে, সমালোচনা করবে। কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। অধিকাংশ মানুষই নেতিবাচকতার চেয়ে ইতিবাচকতায় আস্থাশীল। নেতার উচিত, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা স্বার্থের চক্রান্তে না জড়িয়ে নিজের পথ স্থির রাখা।

মোটকথা, নেতৃত্ব কোনো নির্দিষ্ট পদের বিষয় নয়—এটা হলো একটি মানসিকতা, একটি চর্চা, একটি দায়বদ্ধতা। নেতৃত্ব মানে নিজেকে গড়ে তোলা ও অন্যদের পথ দেখানো। তরুণ প্রজন্ম যদি নেতৃত্বের এই ভাবনাগুলো বোঝে, চর্চা করে ও এগিয়ে চলে—তাহলে শুধু নিজেকে নয়, সমাজকেও তারা বদলে দিতে পারবে।

উল্লেখ্য, বন্ধুসভার বন্ধুদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২৬ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্মার্ট স্কিল ফ্রম লার্নিং টু লিডিং’ কর্মশালা করে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ। কর্মশালায় নেতৃত্ব ও যোগাযোগ বিষয়ে আলোচনা করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশন মো. আবদুল কাইয়ুম। ওপরের লেখাটি তাঁর আলোচনার প্রতিলিপি।