বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ হওয়ার পর যখন সবাই ‘ক্যাম্পাস ফাঁকা’ বলে ছবি পোস্ট করছেন, তখন একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে নতুন এক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়—‘করপোরেট লাইফে কীভাবে ঢুকব?’ সার্টিফিকেট হাতে পেলেই কি চাকরি মিলবে? নাকি তার আগেও কিছু প্রস্তুতি দরকার?
চলুন জেনে নেওয়া যাক, গ্র্যাজুয়েশন শেষে করপোরেট ক্যারিয়ারে ঢোকার আগে কী কী প্রস্তুতি ও গুণ থাকা জরুরি:
১. সিভি তৈরির দক্ষতা
এটাই আপনার প্রথম ইমপ্রেশন। রিজিউমি তৈরি করা মানে হলো চাকরিদাতাকে নিজের গল্প বলা। সিভি কোনো ফরম্যাট নয়, এটা একধরনের পিচ, যেটা আপনি একজন অচেনা চাকরিদাতার সামনে রাখছেন। আপনি কী করেছেন, কী শিখেছেন, কাদের সঙ্গে কাজ করেছেন—এভাবে।
২. কমিউনিকেশন স্কিল
করপোরেটে শুধু কাজ জানলেই চলবে না, কথা বলাটাও বড় দক্ষতা। ইন্টারভিউতে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা, টিম মিটিংয়ে মতামত দেওয়া, ক্লায়েন্ট বা কলিগের সঙ্গে পেশাদার যোগাযোগ। সবই ভালো কমিউনিকেশন দক্ষতার ফল।
৩. প্রেজেন্টেবল পারসোনালিটি
চেহারার কথা বলছি না, বলছি কনফিডেন্স, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, টাইম ম্যানেজমেন্ট ও নিজের কাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা। স্মার্টলি পোশাক পরা, সময়মতো পৌঁছানো—এগুলো প্রথম থেকে অভ্যাস করতে হবে।
৪. বেসিক সফটওয়্যার জ্ঞান
এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট—এগুলো করপোরেটের বেসিক ল্যাঙ্গুয়েজ। একজন ইন্টার্ন বা এক্সিকিউটিভ হিসেবেও এগুলো না জানলে অনেক সময় অস্বস্তিতে পড়তে হয়। ফ্রি কোর্স করে হলেও শিখে নিন।
৫. ইন্টারভিউ ও প্রফেশনাল আচরণ
ইন্টারভিউ মানে প্রশ্ন-উত্তরের খেলা নয়, নিজেকে উপস্থাপনের জায়গা। ইন্টারভিউতে আত্মবিশ্বাস, চোখে চোখ রাখা ও স্পষ্ট করে কথা বলার গুরুত্ব অনেক বেশি। ইন্টারভিউর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে আগেভাগে। কীভাবে সালাম বা অভিবাদন জানাবেন, কীভাবে প্রশ্নের উত্তর দেবেন, কীভাবে নিজের দুর্বলতাও পজিটিভভাবে তুলে ধরবেন। এসব প্র্যাকটিস না করলে ভালো প্রোফাইল থাকলেও বাদ পড়তে পারেন।
৬. ইন্টার্নশিপ বা ভলান্টিয়ার অভিজ্ঞতা
গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই যদি কোথাও ছোটখাটো কাজ বা ইন্টার্নশিপ করা থাকে, সেটা অনেক এগিয়ে রাখবে। এতে রিয়েল ওয়ার্ল্ড এক্সপোজার পাওয়া যায়। সিভিতেও প্রমাণিত হয়, আপনি ‘তত্ত্ব’ জানার পাশাপাশি ‘অভ্যাস’ও করেছেন।
৭. নেটওয়ার্কিং আর রেফারেন্স
করপোরেটে পরিচিতি অনেক সময় কাজের চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়ায়। বন্ধু, সিনিয়র, শিক্ষক বা যেকোনো প্রফেশনাল ইভেন্টে পরিচিত লোকজনের সঙ্গে কানেক্টেড থাকুন। লিংকডইন অ্যাকাউন্ট খোলা ও অ্যাকটিভ থাকা এখন জরুরি।
৮. পজিটিভ মানসিকতা ও শেখার আগ্রহ
করপোরেট লাইফ সব সময় স্মুথ হবে না। চাপ থাকবে, ডেডলাইন থাকবে, কিন্তু শেখার আগ্রহ থাকলে সবকিছু সহজ হয়ে যায়। ‘আমি সব জানি’—এই মনোভাব বাদ দিয়ে শেখার মতো মানসিকতা রাখলেই আপনি দ্রুত উন্নতি করবেন।
শেষ কথা, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলেই সব শুরু নয়, বরং সেটাই আপনার শেখা বাস্তবে প্রমাণ করার সময়। সঠিক প্রস্তুতি, ইতিবাচক মনোভাব ও নিজেকে ক্রমাগত আপডেট রাখার ইচ্ছা থাকলে করপোরেট দুনিয়ায় জায়গা করে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। আপনি যদি সত্যিই প্রস্তুত থাকেন, তাহলে চাকরি খুঁজবে আপনাকে।
লেখক: মানবসম্পদ কর্মকর্তা, ইউএস–বাংলা গ্রুপ এবং সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা।