শেষ হলো ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা

(ওপরে বাম দিক থেকে) মুহাম্মদ সামাদ, আনিসুল হক, রথীন্দ্র নাথ দত্ত ও রাজীব সরকার। (নিচে বাম দিক থেকে) মো. তফিকুল আলম, ফাল্গুনী মজুমদার, জাফর সাদিক ও উত্তম রয়
ছবি: সংগৃহীত

শেষ হলো ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২০। গত ১৬ নভেম্বর শুরু হয়ে ২৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে। প্রাথমিক পর্বে তিনটি বিষয়ের ওপর বিতর্ক আহ্বান করা হয়। বিষয় তিনটি ছিল ‘তারুণ্যের শক্তিতেই...’, ‘আমাদের সব আমাদের হবে...’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হোক...’।

তিন বিষয়ের ওপর সারা দেশ থেকে শতাধিক ভিডিও জমা পড়ে। প্রথম ধাপে ১০ জন বিতার্কিক সেরা নির্বাচিত হন। ২৩ ডিসেম্বর রাত ৮টায় জুম ক্লাউড মিটিংসের মাধ্যমে সরাসরি আয়োজন করা হয় চূড়ান্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা বারোয়ারি বিতর্কের ফাইনালে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। মুহাম্মদ সামাদ ছোটবেলার স্মৃতিচারণা করে প্রাচীন ভারতবর্ষ ও ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তুলে ধরেন এবং প্রাচীনকাল থেকে বিতর্কচর্চার সংক্ষিপ্ত পটভূমিও তিনি তাঁর আলোচনায় নিয়ে আসেন ।

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘প্রাচীনকাল থেকেই বিতর্কের প্রচলন। আগে মানুষ জ্ঞানের চর্চা করত। এখন মানুষ সৎ না হয়ে স্বচ্ছল হতে চায়, জ্ঞানী না হয়ে চালাক হতে চায়, প্রজ্ঞাবান না হয়ে ধূর্ত হতে চায় এবং বিদ্বান না হয়ে দ্রুত ভালো ফলাফল করতে চায়। এ জায়গা থেকে উন্নতির জন্য প্রথম আলোর মতো যারা বিতর্কচর্চার আয়োজন করে, আমরা তাদের সাধুবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।’

আনিসুল হক বলেন, ‘বিতর্কের মধ্য দিয়ে একটি যুক্তিবাদী সমাজ গড়ে ওঠার সুযোগ থাকে। বিতর্কে জয় লাভ করলে সেটি খুবই ভালো ব্যাপার, কিন্তু আমরা যেন হাসিমুখে পরাজয় মেনে নিতে পারি। অন্যের কথাও যেন আমরা শুনি।’

বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের ফলাফল ঘোষণা ও অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক বিতার্কিক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রথীন্দ্র নাথ দত্ত। সভাপতির বক্তব্যে রথীন্দ্র নাথ দত্ত বলেন, ‘প্রথম আলো সব সময় বিতর্কের সঙ্গে থেকে বিতর্ক আন্দোলনকে বেগবান করে যাচ্ছে। এই বিতর্ক মানুষকে বিকষিত করে, মানুষকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যায়, বিতর্ক মানুষের পেশাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করে।’

চূড়ান্ত পর্বের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ‘এবং আমিও তোমার সাথে...’। সেরা ১০ জন বিতার্কিক সরাসরি তাঁদের বিতর্ক উপস্থাপন করেন।

তাসফিয়া আফরিন ফারিয়া, বশিরুন্নেসা অনন্যা, মাহমুদা সরোয়ার শ্রাবণী
ছবি: সংগৃহীত

বিচারকদের রায়ে প্রথম স্থান লাভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসফিয়া আফরিন ফারিয়া। দ্বিতীয় হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বশিরুন্নেসা অনন্যা এবং তৃতীয় হয়েছেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদা সরোয়ার শ্রাবণী।

বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব রাজীব সরকার, টিআইবির ডেপুটি ম্যানেজার ও সময় টিভির সংবাদ উপস্থাপক জাফর সাদিক, সংবাদ উপস্থাপক ও বিসিএস কৃষি কর্মকর্তা ফাল্গুনী মজুমদার, কক্সবাজারের চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম। বিচারকদের প্রত্যেকেই ছিলেন সাবেক সফল বিতার্কিক।

রাজীব সরকার বলেন, ‘জোরের যুক্তি নয়, যুক্তির জোর চাই, অর্থাৎ আমরা একটি যুক্তিভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি করতে চাই। যুক্তিভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি করতে বিতর্কশিল্প অত্যন্ত সহায়ক।’

প্রতিযোগিতা উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক গাজী আনিস ও বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ফাহমিনা বর্ষা। উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মুমিত আল রশিদ ও ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি উত্তম রয়।