মোহনগঞ্জে বানভাসীদের পাশে ময়মনসিংহ বন্ধুসভা

ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সভাপতি আবুল বাশার
ছবি: বন্ধুসভা

‘এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছি, এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সাহায্য নিয়ে আসেনি। আমাদের কাছে কেউ সাহায্য নিয়ে আসবে তা ভাবিনি।’ কথাগুলো নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় বন্যাকবলিত বিভিন্ন গ্রামের মানুষের। তাঁদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যান প্রথম আলো বন্ধুসভা ময়মনসিংহের বন্ধুরা। এমন বিপদের দিনে খাদ্যসহায়তা পেয়ে বন্যার্ত অনেকেই খুশিতে কাঁদতে শুরু করেন।

গত শুক্রবার মোহনগঞ্জে বন্যার্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুকনা খাবার, শিশুখাদ্য ও মেয়েদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেন বন্ধুরা। তবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তারও আগে থেকে। ১৬ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এ কাজে নতুন-পুরাতন প্রায় সব বন্ধু সহযোগিতা করেন। ২৩ তারিখ বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রী ক্রয় এবং রাত ১২টার মধ্যে বিতরণের জন্য প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তুতি কাজে সহযোগিতা করেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সহসভাপতি সাদিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বন্ধু তানজিলা আক্তার ও সভাপতি আবুল বাশার।

নৌকা তীরে ভিড়াতে না পেরে কোমর পানিতে নেমে বানভাসীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন
ছবি: বন্ধুসভা

পরদিন ভোর পাঁচটায় ট্রেনযোগে এই খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মোহনগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দিই। সকাল নয়টায় মোহনগঞ্জ পৌঁছানোর পর সেখান থেকে অটোরিকশা দিয়ে ৫ নম্বর ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামে যাই। রামজীবনপুর ব্রিজ থেকে ট্রলারে করে কমলপুর, হামিদপুর, জাবাখলি ও রামজীবনপুর গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করি আমরা।

নৌকায় করে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

কমলপুর পূর্ব পাড়ার বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছি, এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সাহায্য নিয়ে আসেনি।’ রামজীবনপুরের হান্নান মিয়া বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ সাহায্য নিয়ে আসবে তা ভাবিনি।’ হামিদপুরের নিলুফা বানু বলেন, বন্যায় ঘরবন্দী হয়ে থাকতে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে। স্বামী নেই, তিন মেয়েকে নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হচ্ছিল। এর মধ্যেই এল বন্যা। বন্ধুসভার উপহার পেয়ে তিনি খুশিতে কান্না করে দেন।

ত্রাণ পেয়ে খুশি বানভাসীরা
ছবি: বন্ধুসভা

স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের দায়িত্ব ছিল সায়মা, মেঘলা ও জেরিনের ওপর। সেগুলো বিতরণ করতে গিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তাঁরা। তাঁরা জানান, গ্রামের মেয়েরা অসম্ভব সাহসী। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দিন ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে। বন্ধু সায়মা বলেন, ‘ইচ্ছা করছে, যত দিন পানি না কমে তত দিন বানভাসি মানুষের পাশে থেকে তাঁদের সহযোগিতা করি। কিন্তু কর্ম ব্যস্ততার কারণে বাধ্য হয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।’

সভাপতি, প্রথম আলো বন্ধুসভা ময়মনসিংহ