মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রে দূষণ রোধে ভৈরব বন্ধুসভার পরিচ্ছন্নতা অভিযান

ভৈরব বন্ধুসভার পরিচ্ছন্নতা অভিযান
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ২০০ বছর আগে ভৈরব মোহনা ছিল ব্রহ্মপুত্রের মূল গতিপথ। এই মোহনা ভৈরবের মূল শহরের পাশ ঘেঁষে প্রবহমান মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র আজ মরা নদ। আর দিন দিন প্রমত্তা মেঘনার প্রবাহ কমছে। ভাটা পড়েছে পানির স্বচ্ছতায়। দেশের বৃহৎ দুটি নদীর রুগ্‌ণদশার অন্যতম কারণ হলো দূষণ। আর দূষণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অসচেতন মানুষ।

ভৈরব বন্ধুসভার পরিচ্ছন্নতা অভিযান
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলোর ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বন্ধুসভা। এ কাজের অংশ হিসেবে মানুষকে সচেতন করতে ভৈরব বন্ধুসভার কর্মীরা নেমে পড়েছিলেন দূষণ রোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে। ৫ নভেম্বর পুব আকাশে সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীরা সচেতনতামূলক প্রচারপত্র হাতে উপস্থিত হন মেঘনা নদীর ভৈরব মোহনায় ত্রি-সেতুর পাড়ে। বন্ধুরা দেখেন, সেতুপাড়ের পাথরের ফাঁকগুলো আচ্ছাদিত হয়ে আছে প্লাস্টিক বর্জ্যে। বিশেষ করে চিপসের প্যাকেট, কোমল পানীয় আর মিনারেল ওয়াটারের বোতলের স্তূপ। নদীতে ভাসছিল প্লাস্টিকের বর্জ্য।

ভৈরব বন্ধুসভার পরিচ্ছন্নতা অভিযান
ছবি: সংগৃহীত

পরে অন্তত আধা কিলোমিটার এলাকা থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সরিয়ে নদীর পাড় পরিচ্ছন্ন করা হয়। একই সঙ্গে চলে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের কাজ। লিফলেট হাতে পেয়ে অনেকে বন্ধুসভার এ কাজের প্রশংসা করেন। নদীর পাড়ে স্থায়ীভাবে দোকান নিয়ে বসা ফুসকা–দোকানি ও ভ্রমণতরির কর্মীদের সঙ্গে সভা করা হয়। এখন থেকে ভ্রমণকারীদের নদীতে আর প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলতে দেবেন না—মর্মে তাঁদের কাছ থেকে অঙ্গীকার আদায় করা হয়।

ভৈরব বন্ধুসভার পরিচ্ছন্নতা অভিযান
ছবি: সংগৃহীত

ফুসকা–দোকানি হারুন মিয়া সেতুপাড়ে এক যুগ ধরে ফুসকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি অকপটে স্বীকার করেন, মেঘনা বেঁচে আছে বলেই তাঁর ব্যবসা টিকে আছে। তাঁর স্বার্থেই নদীটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পরে অঙ্গীকার করেন, বর্জ্য ফেলার জন্য তিনি ঝুড়ি রাখবেন। দিন শেষে বর্জ্য পুড়িয়ে বাড়িতে ফিরবেন।

ভৈরব বন্ধুসভার পরিচ্ছন্নতা অভিযান
ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণতরির ফরহাদ মিয়া ও মো. মুহিয়ানের অনুযোগের শেষ নেই। তাঁরা জানালেন, ভ্রমণতরির আরোহী হন, এমন প্রায় সবার হাতে চিপস আর কোমল পানীয়ের বোতল থাকে। নদীতে চলমান অবস্থায় সেগুলো খেয়ে শেষ করেন। শেষ করার পর পানিতে ছুড়ে মারেন, যেন তাতেই আনন্দ। বললেও শোনেন না। বরং খেপে যান। অনেক সময় ভয়েও তাঁরা নীরব থাকেন।

ভৈরব বন্ধুসভার পরিচ্ছন্নতা অভিযান
ছবি: সংগৃহীত

সচেতনতামূলক কর্মসূচি শেষ করার পর ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি ইকরাম বখশের মন খারাপ। কারণ, নদীর এতটা দূষণ তিনি প্রত্যাশা করেননি। তাঁর মতে, দূষণ রোধে আরও আগে কাজ করা দরকার ছিল। সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকারও একই কথা। তিনি বলেন, আজকের কাজটি ছিল অনেকটা প্রতীকী। তবে নদী বাঁচাতে বন্ধুসভা মাঠপর্যায়ে আরও পরিকল্পিত কর্মসূচি নিয়ে আসবে।

উপসাংগঠনিক সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা

ভৈরব বন্ধুসভার পরিচ্ছন্নতা অভিযান
ছবি: সংগৃহীত