বেদেপল্লিতে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী বেদেপল্লিতে প্রথমবারের মতো প্রথম আলো কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ শহরতলির খিলপাড়া এলাকায় নতুন জেলখানা মোড়ে বেদেপল্লির সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও নারী-পুরুষ রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেওয়া হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এই চিকিৎসাসেবা চলে। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে এখানকার বেদে সম্প্রদায়ের নারী–শিশুসহ শতাধিক মানুষ বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন।
স্বাস্থ্যসেবা দেন কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সুবীর নন্দী ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরপি (মেডিসিন), লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মুহাম্মদ আবিদুর রহমান ভূঞা। চিকিৎসাসেবা ছাড়াও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বিভিন্ন পরামর্শ ও বন্ধুসভার উদ্যোগে ওষুধ, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বেদেশিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প চিকিৎসাসেবা নেওয়া বেদে সম্প্রদায়ের মো. জসিম উদ্দিন ও রাহিলা বেগম বলেন, কয়েক দিন থেকে তাঁরা সর্দি-কাশিসহ কিছু সমস্যায় ভুগছেন। তাঁরা গরিব মানুষ, ভালো চিকিৎসক দেখাতে পারেন না। তাঁদের এখানে বড় চিকিৎসক আসায় এখন চিকিৎসা করাতে পেরে তাঁরা অনেক খুশি।
শেফালি আক্তার ও ওয়াহিদ মোল্লা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছেন। টাকার অভাবে ভালো কোনো চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। বন্ধুসভার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা পেয়ে তাঁরা বলেন, ‘টাকা ছাড়া ডাক্তার দেখানো যাবে, এটা কখনো ভাবিনি। ডাক্তাররা নিজেরা আমাদের কাছে এসে চিকিৎসা দিয়েছেন। আমরা ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
এ ছাড়া নবজাতক সিজানুর, ইমনাসহ মোহনা, তাহিনুর, সাজিলা, আলী, আছিয়াসহ অর্ধশতাধিক শিশু প্রথমবারের মতো চিকিৎসাসেবা পায় বলে তাদের অভিভাবকেরা জানান।
মেডিকেল ক্যাম্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন কিশোরগঞ্জ প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি তাফসিলুল আজিজ, কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা হোছেন আলমগীর, সভাপতি লুৎফুন্নেছা চিনু, সহসভাপতি হোসাইন আশিক, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ মারুফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক মুনিরা জামান, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক সাইদা সুলতানা, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক তানভীর হাসান, ম্যাগাজিন সম্পাদক উমর নাসিফ, কার্যনির্বাহী সদস্য সাবরিনা আইরিন শম্পা, স্বর্ণা, উৎস, জাহেদ, রনি প্রমুখ।
চিকিৎসাসেবা শেষে ডা. মুহাম্মদ আবিদুর রহমান বলেন, ‘বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন ঝাড়ফুঁক করেন, সাপের বিষ নামান। মন্ত্র পড়েন। নিজেদের চিকিৎসা নিজেরা করাসহ অন্যদের চিকিৎসা করেন। অথচ এসব ঝাড়ফুঁকের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এখানে এসে দেখতে পেলাম, তাঁদের অনেকেই অসুস্থ। তাঁদের চিকিৎসা দিতে পেরে ভালো লাগছে।’ বেদেদের আধুনিক চিকিৎসাসেবা দিতে বন্ধুসভার এ উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সুবীর নন্দী বলেন, বেদেরা হলো যাযাবর। তাদের নির্দিষ্ট কোনো ঘরবাড়ি নেই। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ায় তারা। তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পায় না। এখানকার বেশির ভাগ শিশুই অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের সহযোগিতায় সবারই এগিয়ে আসা উচিত।