‘পড়া বই’ সংগ্রহে ভৈরব বন্ধুসভার ব্যতিক্রমী আয়োজন

‘পড়া বই’ সংগ্রহে ভৈরব বন্ধুসভার ব্যতিক্রমী আয়োজন
ছবি: বন্ধুসভা

দিনটি ৫ ফেব্রুয়ারি, বিকেল চারটা। কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘এখানে থেমো না’ বই হাতে প্রথম আলোর ভৈরব কার্যালয়ে এলেন ভৈরব বন্ধুসভার সহসভাপতি আল আমিন। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে পড়া হয়ে যাওয়া বই সংগ্রহ অভিযানে এই বই ভৈরব বন্ধুসভার পাঠাগারে জমা দেন তিনি।

আল আমিন বলেন, বেশ অনুপ্রেরণামূলক বই এটি। পড়ে প্রেরণা পেয়েছি। অন্যদেরও উজ্জীবিত করবে।’

কেবল আল আমিন একাই নন, সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে বন্ধুসভার সদস্য ও সুহৃদরা এসে স্বেচ্ছায় পড়া বই থেকে একটি–দুটি বন্ধুসভার পাঠাগারের জন্য দিয়ে যান। ওই সময়ের মধ্যে বই সংগ্রহ হয় প্রায় ২০০।

দপ্তর সম্পাদক আমান উল্লাহ এলেন সমরেশ মজুমদারের ‘প্রিয় আমার’ উপন্যাসটি নিয়ে। বই দিয়ে বললেন, ‘খুব ভালো বই। পড়ে সমৃদ্ধ হয়েছি। অন্য বন্ধুদেরও পড়া উচিত।’

‘পড়া বই’ সংগ্রহে ভৈরব বন্ধুসভার ব্যতিক্রমী আয়োজন
ছবি: বন্ধুসভা

আমান বই তুলে দিতে দিতে বই হাতে হাত বাড়ান সমাজকল্যাণ সম্পাদক মারিয়া তানশি। তাঁর হাতে ছিল মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘অবিশ্বাস্য সুন্দর পৃথিবী’ ও হুমায়ূন আহমেদের ‘রোদনভরা এ বসন্ত’। কিশোরগঞ্জ থেকে এসে নিজের লেখা ১৫টি বই দিয়ে যান লেখক শাকুর মাহমুদ।

‘পড়া বই’ সংগ্রহে ভৈরব বন্ধুসভার ব্যতিক্রমী আয়োজন
ছবি: বন্ধুসভা

দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক নুতরাতুন তোরসা এলেন পাঁচটি বই নিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে শরৎচন্দ্রের ‘পরিণীতা’, ‘নারীর মূল্য’, ‘দেনাপাওনা’, ‘বড় দিদি’, ‘মেজ দিদি’ ও জসিম উদ্দিনের ‘রাখালী’। তোরসা জানান, বইগুলো তাঁর পড়া শেষ। মনে হয়েছে, পড়া বইগুলো পাঠাগারে দিয়ে দিলে অন্য বন্ধুদের পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সহসভাপতি প্রিয়াংকা আনিসুল হকের আলোচিত উপন্যাস ‘মা’ বইটি দিয়ে দাবি রাখেন আবার যেন এই বই নিয়ে পাঠচক্র করা হয়।

‘পড়া বই’ সংগ্রহে ভৈরব বন্ধুসভার ব্যতিক্রমী আয়োজন
ছবি: বন্ধুসভা

সভাপতি সুমাইয়া হামিদ নিয়ে এলেন তিনটি বই। হুমায়ূন আহমেদের ‘জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প’, তানজিনা হোসেনের বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ‘এলিনা’ ও বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। বই দিয়ে তাঁর অনুভূতি সুখজাগানিয়া।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম তুলে দিলেন হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলী সিরিজ নিয়ে রচিত গল্পগ্রন্থ ‘ভয়’ বইটি। তাঁর পরামর্শ বইটিতে তিনটি গল্প রয়েছে। সব কটি পড়া উচিত। বিশেষ করে ‘জ্বীন-কফিল’ না পড়লে মনে হবে মিস হয়ে গেছে।

‘পড়া বই’ সংগ্রহে ভৈরব বন্ধুসভার ব্যতিক্রমী আয়োজন
ছবি: বন্ধুসভা

ছোট্ট বন্ধু সামির রহমান নিয়ে এল রাকিব রায়হানের ছোটদের গল্প ‘গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন ক্যানারি দ্বীপের রহস্য’ বইটি।

সামির জানাল, ২০২০ সালে হওয়া ভৈরব একুশে বইমেলা থেকে বইটি তার কেনা। ছয় মাস আগে পড়া শেষ। এ জন্য সে দিয়ে দিয়েছে।

বন্ধু রাসেল রাজ দিলেন তিনটি বই। নাসরিন নাহার নামে বন্ধুসভার এক সুহৃদ লন্ডন থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে ১৮টি বই পাঠান। আমেরিকা থেকে শরিফুল ইসলাম নামের আরেক সুহৃদ পাঠান নয়টি বই।

‘পড়া বই’ সংগ্রহে ভৈরব বন্ধুসভার ব্যতিক্রমী আয়োজন
ছবি: বন্ধুসভা

বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমন মোল্লা, ওয়াহিদা আমিন, জনি আলম, আসাদুজ্জামান সোহেল, সাবেক সভাপতি ইকরাম বখশ ও সহসভাপতি নাহিদ হোসাইন, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানজিদা সিদ্দিকা, প্রচার সম্পাদক সানি মোল্লা ও সাবেক অর্থ সম্পাদকের কাছ থেকে পাওয়া যায় আরও কিছু বই।

ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি সুমাইয়া হামিদ, সাধারণ সম্পাদক ছিদরাতুল রশিদ এবং পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক রিফাত হোসেন বইগ্রহণ অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন।

‘পড়া বই’ সংগ্রহে ভৈরব বন্ধুসভার ব্যতিক্রমী আয়োজন
ছবি: বন্ধুসভা

রিফাত হোসেন বলেন, ভৈরব বন্ধুসভার একটি পাঠাগার রয়েছে। প্রতিদিন পাঠাগার থেকে অন্তত একটি বইয়ের আদান–প্রদান হয়। সে কারণে মনে হয়েছে পাঠাগারে এখন ভালো বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। বন্ধু ও সুহৃদরা যদি পড়া বইগুলোর একটি–দুটি পাঠাগারে দিয়ে দেন, তাহলে পাঠাগারটি আরও সমৃদ্ধ হতে পারে। ওই ভাবনা থেকে গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে পড়া হয়ে যাওয়া বই সংগ্রহের এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।

পাঠচক্র ও পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা

‘পড়া বই’ সংগ্রহে ভৈরব বন্ধুসভার ব্যতিক্রমী আয়োজন
ছবি: বন্ধুসভা